প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
পিবিআই’র এ সাফল্য বড্ড স্বস্তিদায়ক
কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার চাঁদপুরের রসু খাঁর হাতে ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে যখন চাঁদপুরের বাইরের বিভিন্ন জেলার নারীরা খুন হতে লাগলো, তখন ফরিদগঞ্জসহ পুরো জেলাবাসী খুনের রহস্য উদ্ঘাটিত না হওয়া পর্যন্ত অস্বস্তিতে ভুগছিলো। তেমনি গোপালগঞ্জের নারী শিলা খানম চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী গ্রামে খুন হওয়ার পর তার লাশ উদ্ধার হলেও যখন তাৎক্ষণিক খুনের রহস্য উন্মোচিত হচ্ছিল না, তখন পুরো জেলার কৌতূহলী মানুষগুলো অস্বস্তিতে ভুগে বারবার বলছিলো, আহারে! গোপালগঞ্জের নারীটিকে চাঁদপুরে এনে খুন করলো কে? পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সেই অস্বস্তি খুব দ্রুত নিরসন করলো।
|আরো খবর
চাঁদপুর কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মিজানুর রহমান ‘চাঁদপুরে নিহত গোপালগঞ্জের নারী শিলা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন ॥ প্রধান আসামীসহ গ্রেফতার ২’ শিরোনামে পিবিআই'র এ সাফল্য সম্পর্কে লিখেছেন, চাঁদপুর সদরের মৈশাদীতে খুন হওয়া গোপালগঞ্জের মেয়ে শিলা খানম (২৮) হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চাঁদপুর। এই হত্যার ঘটনায় মূল আসামী মোঃ রাজীব মজুমদার (২১) ও তার সহযোগী মোঃ কামরুল হাসান হৃদয় (২২)কে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে বিয়ের জন্যে চাপ দেয়ায় ওই নারীকে চাঁদপুর এনে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন পিবিআই চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তফা কামাল রাশেদ। ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে বাবুরহাটে পিবিআই চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন তিনি। তিনি আরো জানান, গত ৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে মৈশাদীর এক বাড়ির বাগানের জঙ্গল থেকে শিলা খানম নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। জাতীয় পরিচয়পত্রের সূত্র ধরে নিহত শিলা খানমের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তিনি গোপালগঞ্জ জেলা সদরের আড়য়া কংশুর গ্রামের মুনছার শেখের মেয়ে এবং স্থানীয় মোঃ ইউসুফ আলীর স্ত্রী। এ ঘটনায় চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের হওয়ার পর মামলাটি পিবিআই’র তালিকাভুক্ত হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয় পিবিআই উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতিকুর রহমানকে। তদন্ত টিম তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে উত্তর মৈশাদী গ্রামের মজুমদার বাড়ির আজিজ মজুমদারের ছেলে প্রধান আসামী মোঃ রাজীব মজুমদার এবং অপর আসামী পাশের ইউনিয়ন আশিকাটির হাফানিয়া গ্রামের খান বাড়ির মৃত স্বপন খানের ছেলে মোঃ কামরুল হাসান হৃদয়কে সদর উপজেলাধীন দাসদী গ্রামের পাঠান বাড়ির মোঃ মাসুদ গাজীর বাড়ি হতে গ্রেফতার করে। আসামীদের গ্রেফতারকালে ভিকটিম শিলা খানম (২৮)-এর ব্যবহৃত এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনটি মূল আসামী মোঃ রাজিব মজুমদারের নিকট হতে এবং আসামীদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও সীম কার্ডগুলো উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে জব্দ করা হয়।
পিবিআই পুলিশ সুপার জানান, প্রধান আসামী রাজীব মজুমদার গোপালগঞ্জের একটি জুয়েলারি দোকানে চাকুরির সুবাদে পরিচয় হয় স্থানীয় গৃহবধূ শিলা খানমের সাথে। পরে তাদের মধ্যে পরকীয়া ও শারীরিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে শিলা বেগম তাকে বিয়ের জন্যে চাপ দেয়। এরপর তার পরকীয়া প্রেমিক রাজীব মজুমদার পরিকল্পনা মতো শিলাকে চাঁদপুরে নিয়ে আসে। তার উদ্দেশ্য ছিলো লঞ্চযোগে চাঁদপুর আসার পথেই শীলাকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দিবে। কিন্তু সে পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় মৈশাদী ইউনিয়নের একটি বাগান বাড়িতে এনে অপর ২ বন্ধুর সহযোগিতায় শিলাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ জঙ্গলে ফেলে রাখে। এ হত্যাকাণ্ডের ৩৬ ঘন্টার মধ্যে আমরা প্রধান আসামী রাজীব মজুমদার ও তার সহযোগী বন্ধু মোঃ কামরুল হাসান হৃদয়কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। এ সময় শিলা বেগম ও আসামীর মোবাইল ফোন জব্দ করেছি। প্রধান আসামী রাজীব মজুমদারের ৫টি ফেসবুক আইডি রয়েছে। এসবের মাধ্যমে বিভিন্ন নারীর সাথে পরকীয়া প্রেম করে আসছিলো সে। আসামীদের চাঁদপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই পুলিশ সুপার।
গোপালগঞ্জের নারী শিলা বেগমের লাশ উদ্ধারের ৩৬ ঘণ্টা অর্থাৎ দেড়দিনের মধ্যে তার খুনের রহস্য উদ্ঘাটনে পিবিআই'র সাফল্যকে আমরা অনেক বড়ো করে দেখতে চাই। এটাকে অবশ্যই স্বস্তিদায়কও বলতে হবে। কেননা পুলিশ এর মধ্য দিয়ে রাজীব মজুমদারের মতো একজন খুনিকেই শুধু ধরলো না, রসু খাঁর মতো প্রেমের ফাঁদে ফেলে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে খুন করার মানসিকতাসম্পন্ন একজন লম্পটকে আবিষ্কার করলো। এই রাজীব তার পাঁচটি ফেসবুক আইডি দ্বারা শিলার মতো আরো কতো নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সর্বনাশ করেছে, সেটি নিশ্চয়ই পিবিআই তথা পুলিশ তদন্ত করবে। আমরা শিলা হত্যা রহস্যের ত্বরিত উদ্ঘাটনকে বাংলাদেশে পুলিশি তদন্তের মানসম্মত অগ্রগতির অন্যতম উৎকৃষ্ট নমুনা হিসেবে আখ্যায়িত করতে চাই। এটি পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত বলে মনে করি।