প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
বর্ষার রোগব্যাধি ও সাবধানতা
ষড়ঋতু যেমন আসে রূপবৈচিত্র্য নিয়ে, তেমনি আসে রোগব্যাধির প্রকোপ নিয়েও। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে রোগের প্রকোপের ধরনও পাল্টে যায়। বর্ষায় নবধারাজলে মাঠ-ঘাট যেমন এক হয়ে যায় তেমনি জলবাহিত রোগেরও পোয়াবারো হয়। ছড়িয়ে পড়ে ডায়রিয়া, কলেরা, হেপাটাইটিটিস বি, টাইফয়েড, বিভিন্ন চর্মরোগ, পরজীবী সংক্রমণ ইত্যাদি। গরম ও ঠাণ্ডার মিশ্রণে অনেকের অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। নিউমোনিয়ার প্রকোপও বাড়তে পারে।
সাধারণত দৈনিক তিনবার বা তার বেশি পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া বলে। জীবাণু সংক্রমণজনিত ডায়রিয়া যেমন হতে পারে তেমনি অ্যাকিউট ওয়াটারি ডায়রিয়াও হতে পারে। জীবাণু সংক্রমণজনিত ডায়রিয়ায় জ্বর থাকতে পারে। তীব্র ব্যথা হতে পারে পেটে। তীব্র বমিও হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সিপ্রোফ্লক্সাসিন জাতীয় ঔষধ দুবেলা তিনদিন থেকে সাতদিন খেতে হয়। সাথে ওরস্যালাইন। যদি বেশি পানিশূন্যতা হয় তবে শিরায় ডায়াসল স্যালাইন দিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে এর সাথে মেট্রোনিডাজলের সমন্বয় দরকার হয়। ডায়রিয়াতে খাবার স্বাভাবিক রাখাই বাঞ্ছনীয়। তবে যে সব খাবার মলকে নরম করে তা এড়িয়ে চলা উচিত। অ্যাকিউট ওয়াটারি ডায়রিয়াতে জ্বর হয় না। পেটেও তীব্র ব্যথা থাকে না। কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নয়, কেবল খাবার স্যালাইন খেলেই দু-একদিনের মধ্যে ডায়রিয়া ধরে যায়।
কলেরাতে মলের রং চালধোয়া পানির মতো সাদা হয়। অ্যাজিথ্রোমাইসিন একগ্রাম সিঙ্গেল ডোজ খেলেই কলেরা নিরাময় হয়ে যায়। অতিরিক্ত পানিস্বল্পতায় কলেরা স্যালাইন শিরাপথে দিলে তা পুষিয়ে যায়। তবে বেশি স্যালাইন শিরায় দেয়ার ক্ষেত্রে নজরদারি থাকতে হবে যাতে শরীরে পানির পরিমাণ যেনো বেড়ে না যায়।
টাইফয়েড জ্বরে জ্বর আসে তীব্র এবং সাথে কাশি, গা-হাত-পা ব্যথা করে। খেতে অরুচি জাগে। জিভে সাদা স্তর পড়ে এবং পেটে বিশেষ করে ডানদিকে পিত্তথলি ও পিত্তনালীর অবস্থানে ব্যথা করে তীব্রভাবে। টাইফয়েড রোগীকে সিপ্রোফ্লক্সাসিন দুবেলা করে সাত থেকে চৌদ্দদিন দিতে হয়। বেশি তীব্র হলে সেফট্রায়োক্সোন ইঞ্জেকশান শিরাপথে দিতে হয়।
হেপাটাইটিস রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচতে আগাম সতর্কতা হিসেবে ভাইরাল হেপাটাইটিস বির টিকা বা ভ্যাক্সিন সিডিউল অনুযায়ী নিতে হয়।
শ্বাসকষ্ট রোগীদের তীব্র শ্বাসকষ্ট হলে অক্সিজেন ও নেবুলাইজেশনের প্রয়োজন। ক্ষেত্রবিশেষে হাসপাতালে ভর্তি রাখা জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। জীবাণু সংক্রমণজনিত শ্বাসকষ্টে অ্যান্টিবায়োটিক দরকার হয়। স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ প্রয়োগে শ্বাসকষ্ট দ্রুত লাঘব হয়।
বর্ষায় রোগব্যাধি হতে দূরে থাকতে হলে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহে নজর দিতে হবে। পানির উৎসের সাথে যাতে মলমূত্রের উৎসের সংযোগ না ঘটে সে দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি।
বর্ষার পাশাপাশি এ সময়ে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ। বাসায়, বাসার আশপাশে যাতে বৃষ্টির জল আটকে থাকতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মশারি টাঙানোর অনুশীলন জরুরি। যে কোনো তীব্র অনির্ণীত জ্বরে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ঔষধ সেবনের প্রয়োজন নেই। জ্বরাক্রান্তকে শরবত বা স্যালাইন খেতে দিন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। এ বারের ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কণিকা কমলেও রক্তক্ষরণ হচ্ছে না। কাজেই প্লাটিলেটের সংখ্যা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো দরকার নেই। কেবল প্রেসার যাতে না কমে যায় সেদিকেই খেয়াল রাখা জরুরি। ডেঙ্গুজ্বরে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের ওপর আস্থা রাখা জরুরি।
আজকাল সর্দি-কাশিরও ধরণ পাল্টেছে। যদিও বলা হয়, সর্দির ঔষধ খেলে সারে সাতদিনে আর না খেলে সারে এক সপ্তায়। কিন্তু কাশি সারতে সময় লেগে যাচ্ছে ইদানীং অনেক। যদিও আজকাল চিকিৎসকরা দুই সপ্তাহের অধিক কাশিকে যক্ষ্মা কিনা পরীক্ষার কথা বলছেন, তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে যক্ষ্মা না হলেও এই কাশি সারতে মাসখানেকও লেগে যায়। কোনো ঔষধে উপশম সহসা হয় না। এসব ক্ষেত্রে কিছু টোটকা অনুসরণ করতে হয়।
যতদিন পৃথিবীতে প্রাণ আছে ততদিন রোগব্যাধিও আছে। তাই রোগব্যাধিকে নির্মূল না করতে পারলেও সময়মত সচেতনতায় এদের এড়ানো যায়। আপনি নিজে সচেতন হোন, অন্যকেও রোগব্যাধিতে সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করুন।