বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

বিশ্ব চিকিৎসক দিবস ও আমাদের চিকিৎসক সমাজ

ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

বিশ্ব চিকিৎসক দিবস ও আমাদের চিকিৎসক সমাজ
অনলাইন ডেস্ক

সময়ের সাথে অগ্রসরমান পৃথিবীতে সকল কিছুর জন্যেই দিবস নির্ধারিত। এ দিবস-সংস্কৃতির উদ্ভবই হয়েছে মানুষকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করানোর অভিপ্রায়ে। দিবস যেমন জাতীয় হয় তেমনি দিবস হয় পেশাভিত্তিকও। সমাজে চিকিৎসকদের অবদানের কথা চিন্তা করে জন্ম নিয়েছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসক দিবস বা ইন্টারন্যাশনাল ডক্টরস্ ডের। চিকিৎসাসেবা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে যে নিয়ামকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা হলো ডাক্তার-রোগীর সংখ্যার অনুপাত ও সম্পর্কের রসায়ন এবং তার ফলশ্রুতি। ডাক্তার-রোগীর সম্পর্ককে মূল্যায়ন করতেই সারাবিশ্বে ঊনিশশো তেত্রিশ সাল হতে পালিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসক দিবস। সেই মোতাবেক সদ্য অতিক্রান্ত তিরিশে মার্চ হয়ে গেলো ইন্টারন্যাশনাল ডক্টরস্ ডে। জর্জিয়ার স্বনামধন্য চিকিৎসক চার্লস ব্রাউন আলমন্ডের স্ত্রী ইউডোরা ব্রাউন আলমন্ড প্রথম ডাক্তারদের জন্যে একটি দিবস পালনের ধারণা ব্যক্ত করেন। সেই থেকে প্রতি বছর তিরিশে মার্চ আন্তর্জাতিক চিকিৎসক দিবস পালিত হয়ে আসছে। মূলত আমাদের দেশে ২০০৮ সাল থেকে এই দিবসটি উদযাপনের ব্যাপারে মাতামাতি শুরু হয়। দু হাজার নয় সাল হতেই প্রথমবারের মতো এদেশে পালিত হয় আন্তর্জাতিক চিকিৎসক দিবস। এ সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয় ১৯৯০ সালের ৩০ অক্টোবর।

আন্তর্জাতিক চিকিৎসক দিবসে প্রয়াত চিকিৎসকের সমাধিতে লাল কার্নেশন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর রেওয়াজ তৈরি হয়েছে। লাল কার্নেশন ফুল হলো পৃথিবীতে উৎপাদিত প্রাচীনতম ফুলগুলোর একটি। এ ফুলকে বলা হয় ঈশ্বরের ফুল। সাধারণত চিকিৎসকের প্রতি ভালোবাসা, মুগ্ধতা এবং ডিস্টিংকশন বোঝাতে এই ফুল প্রতীকরূপে ব্যবহৃত হয়।

চিকিৎসা পেশা হচ্ছে পৃথিবীতে আদিতম পেশাগুলোর একটি যা মানুষের কল্যাণে শতভাগ নিবেদিত। চিকিৎসা পেশাতে চিকিৎসক এবং রোগীর সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠে একত্রি রাষ্ট্রের চিকিৎসা ব্যবস্থা। চিকিৎসাবিজ্ঞান অধ্যয়নকালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কেবল চিকিৎসা শেখানো হয় না। শেখানো হয় ব্যবস্থাপনা বা ম্যানেজমেন্ট। যার ফলে রোগীকে স্বাগত জানানো হতে শুরু করে বাড়ি যাওয়ার প্রাক্কালে বিদায় জানানো পর্যন্ত একজন চিকিৎসকের সংশ্লিষ্টতা থাকে। এ মানবিক ও জরুরি প্রক্রিয়ায় চিকিৎসকের যেমন কোমল ও মিষ্টিভাষী হওয়ার প্রয়োজন আছে তেমনি রোগীরও সমর্পণের গুরুত্ব অপরিসীম। রোগী যদি প্রতি পদে পদে চিকিৎসকের উপর তার কল্যাণব্রত নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে এবং চিকিৎসকের কর্মপদ্ধতিতে হস্তক্ষেপ করতে চায় তবে সুচিকিৎসা ব্যাহত হবে। আবার চিকিৎসকের ক্ষেত্রেও রোগীর প্রাসঙ্গিক কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনা জরুরি। চিকিৎসক যতোই অভিজ্ঞতার ঋদ্ধিতে রোগের চালচিত্র বুঝে নিতে পারুক না কেনো তবুও তাকে রোগীর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার ভাণ করতে হবে। এতে রোগীর আস্থা জন্মে। রোগীরা অনেক ক্ষেত্রেই ঔষধের চেয়েও উপদেশ বা কাউন্সেলিং পছন্দ করে। কী কী খাবে বা কী কী খাওয়া নিষেধ ইত্যাদি রোগীরা শুনতে পছন্দ করে বেশি। চিকিৎসক এই বিষয়ে মনোযোগী হলে রোগীর আস্থা অর্জন করা সহজ। চিকিৎসার পাশাপাশি রোগী ও অ্যাটেন্ডেন্টের হেল্থ এডুকেশন জরুরি। চিকিৎসক যদি এ ব্যাপারে আলোকপাত করেন তবে চিকিৎসা ব্যবস্থা হয়ে ওঠে রোগীবান্ধব।

রোগী ও চিকিৎসকের মাঝখানে দেয়াল তৈরি করে তৃতীয় পক্ষ। রোগীর পক্ষে সঙ্গে আসা অতিরিক্ত লোকজন অহেতুক পেশি বা বলের চর্চা করতে চায়। কণ্ঠকে অমার্জিত করে অনেক সময় কাজ আদায় করতে চায়। কখনো কখনো অনৈতিক সুবিধা আদায় করতে গিয়ে তারা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে। চিকিৎসা বিষয়ে কিছু না বুঝলেও বার বার নাক গলাতে চেষ্টা করে। এ কারণেই তিল হয়ে উঠে তাল। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে এবং হাসপাতাল-চেম্বার ভাঙ্গচুর হয়। অন্যদিকে চিকিৎসককে সহায়তাকারী ওয়ার্ড-বয় বা অ্যাটেন্ডেন্ট বা পিওন রোগীকে রোগ নিরূপণার্থে দেয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিজের মতো করে প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে ওখান থেকে লাভবান হয় এবং হতে চেষ্টা করে যা শতকরা নিরানব্বইভাগ চিকিৎসকের ক্ষেত্রে অজানা থেকে যায়। এ কারণেই তৈরি হয় রোগী ও রোগীর লোকের মনে সংশয়। এজন্যে প্রতিষ্ঠান অনুমোদিত সহায়তাকারী ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে রোগী নড়াচড়া করানোর কোনো প্রয়োজন নেই। এতে রোগীর ও রোগীর লোকের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।

চিকিৎসক-রোগী সম্পর্ক অত্যন্ত পবিত্র ও নিকট সম্পর্ক। রোগী তার দেহজনিত গোপন কথা সব অকপটে বলবেন চিকিৎসকের কাছে এবং চিকিৎসকও তার সকল কথা গোপন রেখে তাকে সুচিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করবেন। একটা কথা স্মর্তব্য যে, চিকিৎসক কাউকে না জীবনদান করতে পারেন, না মারতে পারেন। চিকিৎসক কেবল রোগীর কষ্ট কমাতে পারেন এবং রোগীকে আরাম দিতে পারেন। একজন চিকিৎসককে তিনটি কারণে রোগীর পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হয়। প্রথমত রোগ নিরূপণ, দ্বিতীয়ত রোগের চিকিৎসায় উন্নতি পর্যালোচনা এবং পরামর্শকৃত ঔষধ সেবনে শারীরিক কোনো ঘাটতি আছে কি না তা পরিমাপ করে দেখা-এই তিনটি কারণে মূলত রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়। এক্ষেত্রে রোগী ও রোগীর লোক চিকিৎসককে ভুল বুঝেন পরীক্ষা করানোর জন্যে। অনেক ক্ষেত্রেই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নন-মেডিক্যাল মালিকের কারসাজিতেও রোগীদের অনাকাঙ্ক্ষিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। এতে রোগী ও চিকিৎসকের দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। মাঝে মাঝে রোগীরা অনাকাঙ্ক্ষিত দালালদের হাতে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব নিতান্তই চিকিৎসকের আওতা বহির্ভূত প্রক্রিয়া।

রোগী ও চিকিৎসকের সম্পর্ক অনেকটাই শরণ ও শরণাগতের সম্পর্কের মতো। রোগী রুগ্ন হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন আর চিকিৎসক রোগীকে শরণাগত ভেবে পবিত্রভাবে সেই আস্থার প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করেন। এর ফলশ্রুতিতে রোগী ভালো হয়ে কখনো দু হাত তুলে দোয়া করেন আর কখনো চিকিৎসককে গালমন্দের ডালিতে ভরিয়ে দেন। তখন তার কাছে চিকিৎসককে দেয়া ভিজিটটাই বড় হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ব্যবধান বেড়ে যায় এবং সুযোগসন্ধানী তৃতীয় পক্ষও সুযোগ পেয়ে যায়। আন্তর্জাতিক চিকিৎসক দিবসের মূল সুরকে আসুন সকলের জীবনে সঞ্জীবিত করে আর্তমানুষের সেবাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরি এবং বিপদে আপনজন চিকিৎসককে তার যোগ্য সম্মানে ভূষিত করতে কেউ দ্বিধাগ্রস্ত না হই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়