প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুরবস্থায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত
হাইমচর উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটির জরাজীর্ণ অবস্থা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণে ভোগান্তিতে শিশুসহ সাধারণ রোগীরা। নেই কোনো প্রকার ডিজিটাল চিকিৎসা সেবার সরঞ্জাম। পর্যাপ্ত বেড না থাকায় চিকিৎসা নিতে হয় ফ্লোরে। একদিকে ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ অন্যদিকে হাসপাতালের ময়লার গন্ধে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে সুস্থ হতে এসে অসুস্থই হয়ে যেতে হয় অনেকের। পরিবেশের কোনো তদারকি নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
|আরো খবর
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রতিটি সেবার কক্ষ, ডাক্তার, রোগী, কর্মচারীর আবাসস্থল ও রুমগুলোর বর্তমানে নাজুক অবস্থা। পর্যাপ্ত বেড না থাকায় অনেককে ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। প্রতিটি কক্ষের উপরের টিন নষ্ট হওয়ায় তীব্র গরমে নাভিঃশ্বাস উঠছে। ময়লা আবর্জনা ড্রেনে পড়ে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। টয়লেটগুলোরও বেহাল অবস্থা। বেডের চাদরে ময়লা-আবর্জনা লেগে থাকে। ফলে রোগীর সেবা নেয়ার সামান্যতম পরিবেশও থাকে না। পাশাপাশি ডাক্তারের সেবা নিতেও পোহাতে হয় দুর্ভোগ। রোগীদের ব্যবহৃত ঔষধের খোসা, খাবারের ময়লা যেখানে-সেখানে ফেলা হচ্ছে। এতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বক্ষেত্রে।
৩১ শয্যার হাসপাতালটিতে ২৪টি সিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। ভবন সঙ্কটে নার্সদের ডিউটি রুমের সামনেই সেবা দিতে হয়। ৩ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী থেকেও পরিবেশের বেহাল দশা যেনো চোখেই পড়ে না উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তৃপক্ষের। জরুরি বিভাগেও রোগীদের অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয় বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
এতে রোগীদের সাথে আসা সচেতন মানুষরা বলছেন, সরকারি অন্য হাসপাতালগুলোর উন্নতি হলেও এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির চিকিৎসা সেবার মান আজও উন্নত হলো না। তারা আরো জানান, ভবনের কাজ যথারীতি চলবে। তাই বলে চিকিৎসা সেবা ও পরিচ্ছন্নতা ব্যাহত হবে-এটা কোনো কাম্য নয়।
উপজেলার বাসিন্দা জেসমিন আক্তার বলেন, আমার ছেলের টাইফয়েড জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসা পাবার জন্য হাসপাতালে আসি। এসে দেখি কোনো সিট খালি নেই, পরে ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। সকল প্রকার চিকিৎসা সামগ্রী বাইরে থেকে কিনে আনতে হলো। চিকিৎসা শুরু হলে সুঁই-স্যালাইনসহ সব ফার্মেসী হতে সংগ্রহ করেছি।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা আবদুর রহিম জানান, আমি বুকের ব্যথা ও জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। এখানে এসে নার্স ও ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা কিছুটা ভালো পেলেও হাসপাতালের পরিবেশ দেখে খুবই খারাপ লাগলো। খাবার, সিট, টয়লেটের পরিবেশ খুবই খারাপ। যাবতীয় চিকিৎসার সকল কিছুই ফার্মেসী থেকে কিনে আনতে হয় আমাদের। সুস্থ হওয়ার চেয়ে এখানে অসুস্থতার পরিবেশ বেশি দেখছি।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, আমাদের জনবল সংকট এবং পর্যাপ্ত কক্ষ না থাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। চিকিৎসা সেবার সরঞ্জাম রাখার পর্যাপ্ত রুম নেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংকট রয়েছে। আমরা রোগী সেবা দেয়ার জন্য চিকিৎসা যতোটুকু প্রয়োজন তা দিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালের ময়লা-আবর্জনা, গোসলখানা, টয়লেট, ড্রেন পরিষ্কার রাখার জন্য সবসময় কর্মীদের বলে থাকি। নবনির্মিত ভবনগুলো দ্রুত হস্তান্তর করা হলে অচিরেই এই সঙ্কট থেকে দূর হওয়া যাবে বলে আশাবাদী। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের আস্বস্ত করেছেন যে, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভবনগুলোর কাজ শেষ হবে।