প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
‘চেয়ার মেকস্ অ্যা ম্যান পারফেক্ট’ কথাটিতে সবাই নিজের পরিচয় তুলে ধরতে পারে না। তবে কেউ কেউ ভালোভাবেই পারেন। এদের একজন আফরোজা খাতুন মেরী। তিনি একজন নারী হয়েও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়ে স্বীয় নেতৃত্বগুণে সাফল্যের পরিচয় দিয়ে চলছেন। বর্তমানে তিনি চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের খেরুদিয়া দেলোয়ার হোসেন হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১২ আগস্ট ২০২২ খ্রিঃ তারিখে তিনি এই পদে যোগদান করেন। এর পূর্বে তিনি মতলবের বিখ্যাত রয়মনেন নেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজে উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বপালন করেন।
তিনি ১৯৮৪ সালে মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৮৬ সালে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি ও ফিলোসফিতে ১৯৯৫ সালে অনার্সসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) ডিগ্রি নেন। তারপর তিনি বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজ ও পরে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি একজন নামকরা আবৃত্তিকার ও ভালো উপস্থাপক। তিনি পেশাগত ব্যস্ততার মধ্যেও বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলছেন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রোটারী ইন্টারন্যাশনালের অন্তর্ভুক্ত মতলব রোটারী ক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন যোগ্যতার সাথে। এছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক দলের আবৃত্তি বিভাগে ছিলেন। কাজী আরিফ ও প্রজ্ঞা লাবণীর নির্দেশনায় পরিচালিত মুক্তকণ্ঠ আবৃত্তি সংগঠনে ছিলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে আবৃত্তি করেছেন। চাঁদপুর শিশু একাডেমিতে আবৃত্তির প্রশিক্ষক ছিলেন। ছোটবেলা থেকে তিনি তাঁর বড় ভাইয়ের হাতে গড়া আবৃত্তি সংগঠন সাওনিক আবৃত্তি গোষ্ঠীতে দায়িত্ব পালন করেন। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে মাতৃপীঠ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত হন। গার্লস্ গাইড, বিএনসিসি, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি অঙ্গনসহ অনেক কিছুতেই তিনি জড়িত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সফলতা অর্জন করেন।
চাঁদপুর কণ্ঠের ‘নারীকণ্ঠ’ বিভাগ থেকে আফরোজা খাতুন মেরীর উদ্দেশ্যে নি¤েœাক্ত প্রশ্নসমূহ করা হলে তিনি যে জবাব দেন, তা নিচে তুলে ধরা হলো :
নারীকণ্ঠ : কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে বর্তমান পেশাগত জীবন কেমন উপভোগ করছেন?
আফরোজা খাতুন মেরী : শিক্ষার সকল স্তরে আমার কাজ করার ভীষণ ইচ্ছে ছিলো। বিশেষ করে মাধ্যমিক স্তরে। যেখান থেকে ছেলে-মেয়েদের মানসিকভাবে গড়ে তোলা যায়। সেজন্যেই মূলত আমার ডিগ্রি কলেজ থেকে স্কুল এন্ড কলেজে যোগদান করা। সত্যিকার অর্থে কলেজে যোগদানের পর একটা স্বপ্ন ছিলো একটি কলেজের অধ্যক্ষ হওয়া। আমার সেই স্বপ্নপূরণ হওয়ায় আল্লাহর দরবারে শোকর আলহামদুলিল্লাহ। আমি কাজ করতে পছন্দ করি, তাই অধ্যক্ষ হিসেবে সমস্ত চ্যালেঞ্জিং কাজ প্রচণ্ড উপভোগ করি। আমার কর্মক্ষেত্রের সবাই আমাকে ভালোবাসে। তারা যে সহযোগিতা করছে তাতে আমি আমার বর্তমান পেশাগত জীবন দারুণ উপভোগ করছি।
নারীকণ্ঠ : পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কখনও কি নারী হিসেবে কোনো সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা উপলব্ধি করেছেন? করে থাকলে সেটা কীভাবে উতরে গেছেন?
আফরোজা খাতুন মেরী : আসলে সীমাবদ্ধতা আর প্রতিবন্ধকার প্রশ্ন আসলে আমি বলবো, সেটা নারী হিসেবে নয়, যে কোনো মানুষই যখন একটি কাজ করতে যায়, সে কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়। আর সেই সমস্যাগুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে দক্ষতার সাথে কাজ করলে সফলতা আসবে। তাহলেই ফলটা অনেক মধুর লাগে।
নারীকণ্ঠ : ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে নারীদের উদ্বুদ্ধ করার জন্যে কিছু বলুন।
আফরোজা খাতুন মেরী : ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলবো, শুধু নারী না পুরুষও যদি যোগ্যতার সাথে কাজ করতে না পারে তাহলে সমস্যার মুখোমুখি হয়। সুতরাং নিজেকে নারী না যোগ্য একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন। কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজন যোগ্যতা, দক্ষতা আর সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ়তা। এসব নিজের মধ্যে গড়ে তুলুন। তাহলেই আপনাকে সকলে মূল্যায়ন করবে।
উল্লেখ্য, আফরোজা খাতুন মেরীর স্বামী সাইফুল ইসলামও একজন অধ্যক্ষ। তিনি চাঁদপুরের বিখ্যাত আল-আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ পদে ২০ মার্চ ২০২২ খ্রিঃ তারিখ থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। আফরোজা খাতুন মেরীর দুই সন্তান। বড় সন্তান সাবিকুন নাহার মৌমিতা এমবিবিএস পড়ছে এবং ছোট সন্তান ওয়াসিউ ইসলাম মোহসী এআইইউবি প্রাইভেট ইউনিভার্সিনীতে সিএসই-তে অধ্যয়নরত।