প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
মানুষের অপরাধ যখন সীমা অতিক্রম করে তখনই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি নেমে আসে। কোরআন-হাদিসে মহামারী ও বালা-মুসিবতকে মানুষের অপরাধকর্মের ফসল বলা হয়েছে। সে হিসেবে করোনাভাইরাসও আমাদের গুণা বা অন্যায়ের ফসল। বান্দা যখন বেপরোয়াভাবে গুনাহে লিপ্ত হয়, আল্লাহ তাকে সতর্ক করতে বিভিন্ন পরীক্ষায় ফেলেন। পাপিষ্ঠ ফেরাউনকে আল্লাহ তা’আলা তখনই ধরেছেন, যখন সে নিজেকে খোদা দাবি করেছিল। তদ্রূপ নমরুদকেও ছাড়েননি। আদ-সামুদ প্রভৃতি জাতিকে তাদের সীমাহীন পাপাচারের কারণে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এভাবে পবিত্র কোরআনে ৬টি জাতির ধ্বংসের কথা উল্লেখ করে শেষ নবীর উম্মতকে সতর্ক করেছেন।
ডিসেম্বর ২০১৯ সালে চীন বিশ্বসংস্থা ‘হু’কে অজানা কোন কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর খবর জানায়। ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ নিশ্চিত করে, একটি করোনাভাইরাস চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের জনগণের মধ্যে গুচ্ছ আকারে শ্বাসকষ্ট-সম্পর্কিত রোগের সৃষ্টি করেছে। জানুয়ারিতে এ রোগের প্রাদুর্ভাবকে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ১১ মার্চ ‘হু’ কোভিড-১৯ রোগের সে প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক মহামারী (Pendamic) হিসেবে ঘোষণা করে। এরই রেশ ধরে বাংলাদেশে ৮ মার্চ ২০২০ প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এ রোগে বাংলাদেশে প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ ২০২০ সালে।
আর্থসামাজিক প্রভাব : দৈহিক, মানসিক এবং সামাজিক সবলতাই সুস্থতা। এর সাথে আর্থিক সক্ষমতাও বিবেচ্য বিষয়। কারণ আর্থিক সামর্থ্যও সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। দীনতার দুশ্চিন্তা, শারীরিক, মানসিক, সামাজিক সক্ষমতার পথে বড় অন্তরায়। একবিংশ শতাব্দীতে করোনাভাইরাসের প্রভাবে প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত, শারীরিক সুস্থতা, মানসিক শান্তি ও সামাজিক সুরক্ষা সংকটাপন্ন। যার ফলে কোভিড-১৯-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কা দুশ্চিন্তার প্রকৃত কারণ বলে মনে করা হয়। এ মহামারীর প্রভাবে মানব জীবনের আর্থসামাজিকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে এক জটিল সমীকরণের চিত্র পরিলক্ষিত হয়।
দেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা (বিআইডিএস)-এর জরিপে জানা গেছে, মহামারীর প্রভাবে বাংলাদেশের ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। এছাড়াও বাংলাদেশে উপার্জন ও খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলেছে কোভিড-১৯। দারিদ্র্য রেখার নিম্নসীমার নিচে নেমে গেছেন ৮৯ শতাংশ মানুষ, আর ১৪ শতাংশ মানুষের ঘরে কোন খাবারই নেই।
অনেক অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, করোনাভাইরাসের অতিমারীর কারণে সুদূরপ্রসারী মন্দাভাব দেখা দিবে সমগ্র বিশ্বে। বাংলাদেশেও তার বিরাট ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। ছোট মানচিত্রের বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সার্বিক জনবহুল দেশ। কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের কারণে এক বিশাল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এতে বাংলাদেশের সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মোট দেশজ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। শিল্পোৎপাদন, পণ্য বিপণন ও জনগণের আয় কমে যাবে এবং কর্মী ছাঁটাই, বেকারত্ব ও দরিদ্রতা বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোভিড-১৯-এর প্রভাবের প্রাথমিক ক্ষেত্রসমূহ : মার্চ ২০২০ বাংলাদেশে প্রথম লকডাউন ঘোষণা করে পরবর্তীতে প্রত্যাহার করা হয়। এপ্রিল ২০২১ দ্বিতীয় বারের মতো লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এ সময় দেশের স্থানীয় উৎপাদন ও বাণিজ্য হ্রাস পায়। পোশাক শিল্পে কোভিড-১৯ মন্দা প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের প্রায় ৮০ শতাংশ তৈরি পোশাক শিল্প। এ মহামারীর ফলে তা হ্রাস পেয়ে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন। বিদেশী কর্তৃক পোশাকের অর্ডার বাতিল হওয়ার কারণে কোম্পানি লোকসানের মুখে পড়ে। পোশাক উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ে। মালিকপক্ষ উভয় সংকটে পড়ে। একদিকে মালের বায়ার অর্ডার কমে যায়, অন্যদিকে শ্রমিকদের মুজুরি দিতে হিমশিম খেতে হয়। এক পর্যায়ে মালিক কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে কর্মী ছাঁটাই করে। ফলে অনেকই বেকারত্বের ঝুঁকিতে পড়ে। এ ধরনের সাধারণ শ্রমিক নিজের এবং পরিবার পরিজনের মুখে অন্ন তুলে দিতে না পারার কষ্টে নিপতিত হয়। কারো ঘরে নববিবাহিতা স্ত্রী, কারো ঘরে নবাগত শিশু, আবার কারো আছে বৃদ্ধ বাবা-মা। কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বেকার হয়ে পরিবারে ফিরে এসে অনেকে নিরূপায় হয়ে পড়ে। মানবতা যেন ডুকরে কেঁদে ওঠে।
আইএলও-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের চার ভাগের এক ভাগের বেশি (২৭.৩০%) যুবক বেকার রয়েছে। প্রতি ৬ যুবকের ১ জন কর্মহীন হয়ে পড়েছে। যাদের কাজ রয়েছে তাদের ২৩ শতাংশের কর্মঘণ্টা কমে এসেছে। বেকারত্ব ক্রমাগত বাড়ছে। এতে যুবা-নারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। এ সংকটে যুবকরা ৩ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। একভাবে তারা কাজ হারাচ্ছেন, অন্যদিকে শিক্ষা-প্রশিক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে। আবার একই সাথে চাকরিতে প্রবেশ ও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটছে। পরবর্তীতে দেখা যায়, যুবকদের একাংশ সমাজের বিভিন্ন অপরাধকর্মের সাথে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় জড়িয়ে পড়ে। যা জাতির জন্য মারাত্মক অভিশাপ ও হুমকিস্বরূপ। মহামারীর প্রকোপে দারিদ্র্যরা আরো দারিদ্র্য হচ্ছে। ফলে নতুন করে এক দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে। ২০২০ সালের মে মাসে বাংলাদেশের ইন্সটিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (BIDS) পরিচালিত এক সমীক্ষায় প্রতীয়মান হয়, কোভিড-১৯-এর কারণে প্রায় ১৬.৪ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে গেছে।
কোভিড-১৯-পরবর্তী অর্থনীতির অন্যতম ধাক্কা রেমিট্যান্স প্রবাহে হ্রাস পাওয়া। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করেছেন তা আরো কমে যাবে। প্রায় ১৪ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। এরা কোন কর্মসংস্থান খুঁজে না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। উপার্জন হ্রাস, বেকারত্ব বৃদ্ধি প্রভৃতি অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দাম্পত্য কলহ নামক ব্যাধির তীব্রতা দৃষ্টিগোচর হয়। এছাড়াও বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাত্রা বেড়ে যায়। সর্বসাকুল্যে বর্তমান জীবনধারা এক অজানা পথে ছুটেই চলছে। অগ্রনায়কের প্রত্যাশায় সচেতন মহলের দৃষ্টিপাত। যার মেধা-মনন সাহসিকতায় জাতি ফিরে পাবে পূর্বের ন্যায় সতেজতা, স্বাভাবিক জীবন-যাপন।
শিক্ষাক্ষেত্রে কোভিড-১৯-এর প্রভাব : মনোবিজ্ঞানীরা মতামত দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন শ্রেণি কার্যক্রম থেকে দূরে থাকার কারণে অনেকের মাঝেই আচরণগত পরিবর্তন আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কেননা শ্রেণিতে নিয়মিত থাকলে একটা রুটিন-মাফিক পড়াশোনা চলমান থাকতো। শ্রেণির কাজ, বাড়ির কাজ, ক্লাস টেস্ট, সেমিস্টার পরীক্ষা যথানিয়মে চলতে থাকলে সিলেবাস সম্পন্ন হতো, তাহলে শিক্ষার স্বাভাবিকতা চলমান থাকতো। কিন্তু ক্লাস বন্ধ হওয়ায় সব কিছু থমকে গেছে। কোমলমতী শিক্ষার্থীর মেধার বিকাশে
প্রতিবন্ধকতার দেয়াল তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ক্লাসের বাইরে থাকায় একাকিত্বের যন্ত্রণায় অবাধ্যতার আলামত প্রকটাকার ধারণ করেছে।
অভিভাবক,শিক্ষক, মুরুব্বি শ্রেণীর সাথে রূঢ় আচরণ করা যে মহা অন্যায় এ অনুভূতি শক্তি অনেক শিক্ষার্থীর হারিয়ে গেছে। যার প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকের সাথে শিক্ষার্থীর অসদাচরণ যত্রতত্র ঘটেই চলছে। যার মাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন মহল কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে জাতি বিনির্মাণের কারিগর শিক্ষকদের উপর নিপীড়ন সমাজে ট্র্যাডিশনে রূপ নিতে পারে। যা সভ্যতার জন্য হুমকিস্বরূপ। এমনকি শিক্ষকতা পেশা নিন্দনীয় হিসেবে সাব্যস্ত হবে। উদীয়মান তরুণসমাজ সাধারণ ব্যাপার বলে শিক্ষক নিপীড়নে জড়াতে দ্বিধাবোধ করবে না।
কর্তৃপক্ষ শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে বিকল্প চিন্তায় অনলাইনে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, অভিভাবক মহল সাইকোলজিস্টের দ্বারস্থ হয়ে অভিযোগের ভাষায় বলেন, অনলাইনে পাঠদান কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে ছেলেমেয়েরা মোবাইল ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে। যাতে করে বাবা-মার সাথে সন্তানের সম্পর্কও হুমকির সম্মুখীন। অভিভাবকের চোখের আড়াল হয়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত হয়ে চ্যাটিং, টিকটিক, গেমস্সহ মোবাইল আসক্তিতে উতলা হয়ে পড়েছে। সীমিত আকারে শ্রেণি কার্যক্রম, অ্যাসাইনমেন্টের পদ্ধতি চালু করলেও পরীক্ষা পদ্ধতি না থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর নিকট পড়ার গুরুত্ব হ্রাস পেয়েছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, অল্প কয়েক বিষয় পরীক্ষা অটোপাস পেরিয়ে যে সব শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষা, চাকরির ইন্টারভিউতে উপনীত হতে যাচ্ছে, তাদের মাঝে কিছুটা ভীতি কাজ করছে। তারা প্রতিযোগিতায় অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনা করে পাস করা শিক্ষার্থী থেকে পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, কোভিড-১৯-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সন্তানের মানসিক এবং সামাজিক উন্নয়ন ও বিকাশে বাবা-মাকেই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে।
আমরা শিক্ষক মহল কোভিড-১৯-পরবর্তী সময়ে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর উদাসীনতা, শ্রেণির মূল্যায়নে অংশগ্রহণ না করা, বাড়ির কাজ সঠিকভাবে উপস্থাপন না করা, প্রাতিষ্ঠানিক অনুশাসন না মানার মানসিকতা, এ রকম অনেক নতুন নতুন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় শিক্ষককে। একদিকে শারীরিক শাসনে নিষেধাজ্ঞা অন্যদিকে শিক্ষার্থীর উদাসীন ও অশালীন আচরণ বৃদ্ধি, সব মিলে শিক্ষক যেন শাঁখের করাত। শিক্ষক -ছাত্র-অভিভাবক এ তিনের সমন্বয় ছাড়া তো শিক্ষার উন্নতি কল্পনাই করা যায় না। বর্তমানে অভিভাবক মহল থেকে ও শিক্ষককে সাহায্যের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। কোন প্রকার শাসনের খবরে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিক্ষককে অভিভাবক কর্তৃক অপমানিত হতে হয়। এখন ভাবনার বিষয়, এমন ভারাক্রান্ত হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে কতটা প্রাণবন্ত পাঠদান করতে পারবেন?-এ প্রশ্নটা জাতির নীতিনির্ধারক মহলের কাছে সবিনয়ে উপস্থাপন করছি। শিক্ষক ও জাতির তরুণ প্রজন্মকে নিরাপত্তাকল্পে সম্মান অটুট রাখার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ ও নীতিমালা প্রণয়ন করা অত্যাবশ্যকীয় বলে আমি মনে করি।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিবাহ বন্ধে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বাল্যবিবাহের পরিমাণ বেড়েই চলছে। এতে করে শ্রেণিকক্ষের অনেক অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। যাদের অতি অল্প পরিমাণই শ্রেণিতে ফেরত আসে। বাকি শিক্ষার্থীরা স্বামীর বাড়ির বলয়ে বন্দী হয়ে শিক্ষাজীবন থেকে ছিটকে পড়ছে। কোভিড-১৯-পরবর্তী বিড়ম্বনার শিকার হয়ে এসব কিশোরীর দল বিয়ের পিঁড়িতে বসলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাম্পত্য কলহের স্বীকার হয়। বিদ্যালয় নামক স্বর্গীয় স্থান থেকে অনেক মেয়েই ঝরে পড়েছে। এ সমস্যার সমাধান সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সফল হওয়া সম্ভব। শুধুমাত্র আইনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ সমাধান সম্ভব নয়।
অন্যদিকে ছাত্ররা ও কর্মসংস্থানের দুশ্চিন্তায় অল্প বয়সেই শিক্ষাজীবন থেকে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। আমরা দেখি এ দুর্যোগ-মহামারীর সাথে সাথেই অনেক ছেলেই পড়ালেখা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এর একাধিক কারণ থাকতে পারে বলে আমার ধারণা। একটু বোঝার ক্ষমতা হলে যখন দেখতে পায়, আশপাশের কেউ উচ্চশিক্ষিতা শিক্ষিত হয়েও সোনার হরিণ চাকরির পেছনে ছুটে হতাশার সাগরে নিমজ্জিত। শিক্ষার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি সেভাবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হচ্ছে না। বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ)-এর এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। দিন দিন উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে শিক্ষা নামক অমৃতের স্বাদ অনেকটা তেতো হয়ে যায়। লেখাপড়া আর ভালো লাগে না। কিছু কিছু অভিভাবকের শক্ত ভুমিকায় কেউ পড়া চালিয়ে যায়। আবার কেউ পড়া বন্ধ করে শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। কোন ছাত্র মোবাইল-জ্বরে আক্রান্ত। তাই মোবাইলের খরচ মেটাতে দিনমুজুরের কাজে নেমে পড়ে। ছাত্রের কিছু অংশ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত হয়, কিছু অংশ নারী মোহে আকৃষ্ট হয়ে বিয়ে করে পালিয়ে বেড়ায়।
কোভিড-১৯ নামক এক অদৃশ্য ভাইরাসের আক্রমণে তছনছ হয়ে পড়েছে একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ব ব্যবস্থা। বাংলাদেশও এর প্রভাবে জ্বরাগ্রস্ত। এ অবস্থা থেকে কবে মুক্তি মিলবে তার কোন সুস্পষ্ট ধারণা কেউ দিতে পারছে না। কিন্তু করোনাভাইরাস-পরবর্তী বিশ্ব সম্পর্কে যে সব বিশেষজ্ঞ ও ফিউচারোলজিস্ট মতামত ব্যক্ত করেছেন তাঁরা সবাই একটা বিষয়ে একমত, পৃথিবী আর আগের মতো নেই। কোভিড-১৯-এর ফলে যা ঘটেছে তার প্রভাব সূদুরপ্রসারি। এ মহামারীর পর পাল্টে যাবে আমাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড, জীবনাচার, ভ্রমণ-বিনোদন, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, রাষ্ট্র, সমাজ সব ধরনের পরিবেশ। আর শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশে তো আমূল পরিবর্তন। নীতি-নির্ধারক মহলের নিকট নিবেদন, যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে কীভাবে শিক্ষাঙ্গনের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়, এ ব্যাপারে ভাল উদ্যোগ ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিবেন-এ প্রত্যাশা। আপামর জনগণ ও সচেতন হতে হবে। কারণ মহামারি-পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনীতি, সমাজ ব্যবস্থা, জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে শিক্ষাক্ষেত্র পর্যন্ত যত জড়তা আছে তার সুন্দর সমাধানকল্পে সকলেরই সচেতনতা একান্ত জরুরি। নচেৎ এর বিষাতুর ফলাফল আমরাই বহন করতে হবে।
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া।
মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম : প্রভাষক, বাংলা বিভাগ, কাঞ্চনপুর, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর।
লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]