রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   বয়ারচর সংযোগ ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীর মানববন্ধন
  •   জার্মানিতে কঠিন হচ্ছে রাজনৈতিক আশ্রয়
  •   ইতালির দ্বীপে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ২১
  •   অভিভাবকহীনতায় দিশেহারা চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা
  •   আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

মূত্র সংক্রমণ এড়াতে সচেতনতা

ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
মূত্র সংক্রমণ এড়াতে সচেতনতা

মূত্র আমাদের দেহের রেচনঘটিত বর্জ্য পদার্থ যার মধ্য দিয়ে দেহে বিপাকের ফলে উৎপন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানগুলো নিষ্কাশিত হয়। একজন সুস্থ মানুষ দৈনিক গড়ে ১.৫ থেকে ২.৫ লিটার মূত্র ত্যাগ করতে পারে। মূত্রে পানির পরিমাণ ৯১ থেকে ৯৬ শতাংশ ও দৈনিক ৮ থেকে ১০ বার মূত্র ত্যাগের প্রয়োজন হয়। মূত্রে অস্বাভাবিকতা রোগ নিরূপণের একটি বড় হাতিয়ার। মূত্রের স্বাভাবিক বর্ণ ফ্যাকাশে হলুদ।

মূত্রের পরিমাণ ডায়াবেটিস মেলাইটাস ও ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস নামক রোগে বৃদ্ধি পায়। মূত্র ত্যাগের হারও এ দুই রোগে বাড়ে। শীতকালে পুরুষদের মূত্র ত্যাগের প্রবণতা বাড়ে। অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রপিক হরমোন নিঃসরণ বাড়লে মূত্র ত্যাগের হার ও পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফ্রুসেমাইড বা হাইড্রোক্লোরোথায়াজাইড কিংবা স্পাইরোনোল্যাক্টোন জাতীয় মূত্রকারক ওষুধ সেবনে মূত্র ত্যাগের হার ও পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। হার্ট ফেইলিওর, কিডনি ফেইলিওর, লিভার ফেইলিওর হলে মূত্র ত্যাগের পরিমাণ ও হার কমে যায়। প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বৃদ্ধি পেলে পুরুষের মূত্র ত্যাগের প্রবণতা বাড়ে; কিন্তু প্রতিবারে মূত্র ত্যাগের পরিমাণ কমে যায়। ফোঁটা ফোঁটা মূত্র ত্যাগ হতে পারে, মূত্রের ধারা দুর্বল হয়ে যায়, মূত্র ত্যাগের পরেও মূত্র জমা রয়ে যায়। মূত্র জমা অনুযায়ী মূত্র ত্যাগ হয় না এবং রাতে ঘুম ভেঙে একাধিকবার মূত্র বিয়োজনের চাপ তৈরি হয়। মূত্র বিয়োজনে জরুরি অবস্থা তৈরি হয়, মূত্র ধরে রাখা যায় না।

মূত্রে পটাশিয়াম বা ধনাত্মক আয়ন বেশি নির্গত হলে মূত্র ত্যাগে জ্বালাপোড়া হয়। ঘাম বেশি হলে মূত্রের পরিমাণ কমে যায় ও মূত্র ত্যাগে জ্বালাপোড়া হয়। মূত্রে ইনফেকশন হলে বা প্রস্রাবের থলিতে ইনফেকশন হলে মূত্র ত্যাগে জ্বালাপোড়া হয়। গনোরিয়া বা সিফিলিস জাতীয় যৌনরোগে মূত্র ত্যাগে জ্বালাপোড়া হয়। মহিলাদের ভালেভাভ্যাজাইনাইটিস রোগে মূত্র বিয়োজনে জ্বালাপোড়া হয়।

মূত্রের বর্ণ স্বচ্ছ বা বর্ণহীন হলে বুঝতে হবে মূত্রে পানির পরিমাণ বেড়ে গেছে। মূত্রের বর্ণ গাঢ় হলে তবে জীবাণু সংক্রমণ বা কম মূত্র উৎপাদনের কথা বিবেচনা করতে হবে। গাঢ় খড়ের রঙের মতো হলুদ মূত্র মানে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে বা জন্ডিস হয়েছে বুঝতে হবে। স্বাভাবিক মূত্রে ইউরোবিলিনোজেন থাকে আর গাঢ় খড়ের বর্ণধারী মূত্রে বিলিরুবিন বেশি থাকে। শিশুদের অ্যাকিউট গ্লোমারুলোনেফ্রাইটিসে মূত্রে লোহিত রক্তকণিকা নির্গত হয়। এ কারণে মূত্রের বর্ণ লাল হয়ে যায়। কিডনি বা মূত্রনালি বা মূত্রথলিতে পাথর বা টিউমার বা ক্যান্সার হলেও মূত্রের বর্ণ লাল হতে পারে ও মূত্রে রক্ত নির্গত হতে পারে। আঘাত বা যে কোনো ট্রমার কারণে হেমাচুরিয়া হলে মূত্রের বর্ণ লাল হয়ে যায়। মূত্রনালিতে ক্ষত বা আলসার বা যক্ষা হলেও মূত্রের বর্ণ লাল হতে পারে। মূত্রের মাধ্যমে লসিকা বা লিম্ফ নির্গত হলে মূত্র দুধের মতো সাদাটে ঘোলা হয়ে যায়। লিভার সিরোসিস বা হেপাটাইটিসে মূত্রের বর্ণ গাঢ় বিলিরুবিনের কারণে লালচে হয়ে যায়।

মূত্রের বর্ণ কালচে হয় ব্ল্যাক ওয়াটার সিন্ড্রোমে। প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামে আক্রান্ত সেরিব্রাল ম্যালেরিয়াতে মূত্রের বর্ণ ব্ল্যাক ওয়াটারের মতো হয়ে যায়। এতে পরিবর্তিত রক্ত ও রক্তকণিকা থাকে। রিফামপিসিন জাতীয় যক্ষা রোগের ওষুধ সেবনে মূত্রের বর্ণ ম্যাজেন্টা কিংবা কমলা হয়ে যায়। পানিশূন্যতায় মূত্রের বর্ণ গাঢ় হলুদ হয়। ভিটামিন বি-২ বা রিবোফ্লাভিন মূত্রে নিষ্কাশিত হলে মূত্রের বর্ণ হলুদ হয়। মূত্রের বর্ণ কড়া কমলা বা আদামী গয় র‌্যাবেডামায়েলাইসিস বা গিলবার্ট সিন্ড্রোম হলে। মেলানোমার কারণে মূত্রের বর্ণ কালচে হয়। বিট আহারের পর মূত্রের বর্ণ গোলাপি হয়ে যায়। অ্যাসপারাগাস বা শতমূলী খেলে মূত্রের বর্ণ সবুজাভ হয়ে যায়। মেথিলিন ব্লু জাতীয় ওষুধ সেবন করলে মূত্রের বর্ণ নীলাভ হয়। ইউরিন ব্যাগ সিন্ড্রোমে মূত্র বেগনি রং ধারণ করে। এটা একটা বিরল ব্যাধি যাতে নারীদের কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে ও তারা দীর্ঘকাল ক্যাথেটার ও ইউরিন ব্যাগ পরিধান করে থাকে। মূত্র ঘোলা ও ফেনিল হয়, যখন তাতে বাতাস মিশে থাকে বা বায়ু বুদ্বুদ থাকে। এটা ক্রনস ডিজিজ বা ডাইভার্টিকুলাইটিস রোগেরও লক্ষণ হতে পারে।

মূত্রে জীবাণুর সংক্রমণ হলে তা ঘোলাটে হয়ে যায়।

মূত্রতন্ত্রে জীবাণুর সংক্রমণ, কিডনিতে পাথর, যোনিতে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ, মূত্রতন্ত্রে পরজীবী সংক্রমণ ও প্রোস্টেটের প্রদাহের কারণে মূত্রে তলানি পড়ে। মূত্রে অধিক প্রোটিন নির্গত হলে মূত্রে ফেনা হয়। নিটাজক্সানাইড ওষুধ সেবন করলেও মূত্র কড়া হলদে হয়।

সদ্য বর্জিত মূত্রের গন্ধ অ্যারোমার মতো মিষ্টি। যত পুরোনো হয়, তত ঝাঁঝালো হয়। এতে অ্যামোনিয়া ও ইউরিয়া তৈরি হয়। ইউরিনয়েডের কারণে মূত্রে দুর্গন্ধ তৈরি হয়। ম্যাপল সিরাপ ইউরিন সিন্ড্রোমে বাচ্চার মূত্রের গন্ধ ম্যাপল্ সিরাপের গন্ধের মতো মনে হয়। মূত্রে কিটোন নির্গত হলে ইঁদুরের গন্ধ পাওয়া যায়।

কোনো কোনো কোম্পানি গর্ভবতী নারীদের মূত্র থেকে হিউম্যান কোরিয়নিক গোনাডোট্রপিক হরমোন সংগ্রহ করে ও প্রজনন উর্বরতা বৃদ্ধিতে তা বাজারজাত করে।

প্রতিকার

পর্যাপ্ত পানি পান করলে মূত্রের কড়া বর্ণ দূর হয়ে যায়। জীবাণু সংক্রমণ রোধে যথাবিহীত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে মূত্রের ঘোলাটে বর্ণ দূর হয়ে যায়। রিফামপিসিন সেবন বন্ধ করলে মূত্রের ম্যাজেন্টা বা কমলা বর্ণ দূর হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়