প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক জীবনধারার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ মানসিক চাপ বা উদ্বেগ বা টেনশন। সম্ভবত এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যার কোনো দুশ্চিন্তা নেই। শিশুরাও আজকাল পরিস্থিতির চাপে পড়ে মন খারাপ করে থাকে। দীর্ঘমেয়াদে এই মানসিক চাপজনিত মন খারাপ একটা পর্যায়ে বিষণ্নতায় রূপ নিতে পারে। তাই সামগ্রিক সুস্থতার জন্যে সচেতনভাবে উদ্বেগ বা টেনশন এড়িয়ে চলার ব্যবস্থা করতে হবে।
মানসিক চাপ বা উদ্বেগজনিত সমস্যাগুলো সারা বিশ্বে অল্পবিস্তর। এ ধরনের মন খারাপ, বিষণ্নতার ফলে শরীরের নানাবিধ কার্যক্রমে প্রভাব পড়ে। যার ফলে নানা রোগের উৎপত্তি হয়। গবেষকরা বলছেন, এখনকার যুগে মানুষের বড় বড় অনেক অসুখের মূল কারণ টেনশন। প্রত্যেক মানুষের জীবনে কোনো না কোনো সময়ে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, মানসিক চাপ অনিবার্যভাবে থাকে। কিন্তু এটা দীর্ঘমেয়াদি হলে মারাত্মক রূপ নিতে পারে। তখন মনের পাশাপাশি শরীরেও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। একে একে স্নায়ুতন্ত্র, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ, রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা, শ্বাসতন্ত্র, বিপাক ক্রিয়া প্রভৃতি খারাপের দিকে যেতে থাকে। দীর্ঘস্থায় ক্লান্তিবোধ এসে হানা দেয়। পেটে আলসার, গ্যাসের সমস্যা বাড়ে, বমিভাব প্রকাশ পায়, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (আইবিএস) হয়। অল্পবয়সে কারও কারও মানসিক চাপজনিত কারণে যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যায়।
মন খারাপের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া যেনো অন্তহীন। এ সমস্যার জেরে হতাশার বিস্তার ঘটে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, মনসংযোগের ঘাটতি দেখা দেয়। কেউ কেউ জরুরি তথ্য বা কাজের কথা ভুলে যায়, কর্মক্ষেত্রে অমনোযোগী হয়ে পড়ে। কাউকে এসে গ্রাস করে অচেনা আতঙ্ক (প্যানিক অ্যাটাক)। সারাক্ষণ হীনম্মন্যতা, অবসাদ থাকলে জীবনযাত্রায় খারাপ প্রভাব পড়ে। মনের জোর কমে যায়, বুকে ব্যথা হয়, বুক ধড়ফড় করে, শ্বাসকষ্ট হয়, হাত-পা ঘামে, মাথার যন্ত্রণা হয়। এছাড়া অনেকে সামাজিক বিচ্ছিন্নতার বোধে আক্রান্ত হয়।
মন খারাপ ও মানসিক চাপের প্রভাবে শারীরিক যেসব প্রতিক্রিয়া হয়, তার মধ্যে হরমোনের গতি পরিবর্তন বিশেষ উল্লেখযোগ্য। টানা দীর্ঘদিন মানসিক উদ্বেগ বা চাপ থাকলে শরীরে নানারকম হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। মানসিক চাপের প্রভাবে কিছু হরমোনের উপস্থিতি শরীরে বাড়তে থাকে। স্ট্রেস হরমোন বাড়তে থাকে, যেমন কর্টিজল ও অ্যাড্রিনালিন। পরিণামে শরীরের ওজন বাড়ে। রক্তে শর্করার পরিমাণ এবং রক্তচাপও পাল্লা দিয়ে বাড়ে। দীর্ঘমেয়াদি টেনশনের প্রভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। আচমকা কোনো অসুখে পড়তে পারেন।
টেনশনমুক্ত থাকতে করণীয়
* সামাজিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে। বিচ্ছিন্নতা নয়, দলবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। একা একা কোনো কাজ করতে গেলে মানসিক চাপ আরও বাড়ে।
* মনকে একটা দিকে স্থির করে কেবল নিজের কাজে মনোযোগী হওয়া উচিত। প্রত্যাশা ও চাহিদার লাগাম টানতে হবে। মানসিক চাপ এড়াতে পরনিন্দা-পরচর্চা থেকে দূরে থাকা ভালো।
* একাগ্রতার জন্য নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন করা যায়।
* সীমিত ও পরিমিত খাবার গ্রহণ ও ঘুম মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
* নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম বা পরিশ্রম করতে হবে। মদণ্ডসিগারেট বা অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য পুরোপুরি বাদ দিতে হবে।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।