মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

আমাদের সমস্যা রোগ নয় টক্সিন
অনলাইন ডেস্ক

রোগ আমাদের শত্রু নয়। রোগের নাম শুনলেই ভয়ে, আতঙ্কে আমরা জড়সড় হয়ে যাই। হতাশা, নিরাশা ইত্যাদি আমাদেরকে ঘিরে ধরে। অনেকে রোগকে গালমন্দ করতে থাকে। রোগকে শত্রু হিসাবে মনে করে। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে বিষয়টি সত্য হলেও প্রকৃতপক্ষে রোগ আমাদের শত্রু নয়। যেমন জ্বরের কথাই ধরা যাক, তা বহু কল্যাণ বহন করে দেহ ও মনকে পবিত্র করে। যেমন একটি হাদিসে আছে, তোমরা জ্বরকে গালি দিও না। কারণ তা গুনাহকে এমনভাবে মিটিয়ে দেয় যেভাবে আগুন লোহার মরিচা এবং ময়লা পরিষ্কার করে দেয় (তীব্বে নববী)’। জ্বর আমাদের দেহের টক্সিন নামক বিষাক্ত পদার্থকে জ্বালিয়ে দেয় এবং দেহব্যবস্থাকে পরিষ্কার করে। সুতরাং ঔষধের সাহায্যে আমরা জ্বরের সাথে মোকাবেলা না করে নিম্নলিখিত উপায়ে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।

* ছয় থেকে আট গ্লাস পানিতে সোনা অথবা রূপা অথবা তামা অথবা লোহাসহ জ্বাল দিয়ে অর্ধেক করে (হালকা গরম ) ঘন ঘন পান করতে দিন। তা আমাদের জীবন ব্যাটারীকে সক্রিয় করে।

* যদি তা সম্ভব না হয় তবে দেড় ঘণ্টা পরপর এক গ্লাস গরম পানি পান করতে দিন।

* সম্ভব হলে কয়েক ঘণ্টা ভুখা রাখুন না হয় সবুজ রস এবং ফলের রস পান করতে দিন।

* যদি তাপমাত্রা ১০২ অথবা এর বেশি হয় তবে মাথা ও পাকস্থলিতে (পেটে) বরফের প্যাকেট রেখে দিন। কিন্তু ঠাণ্ডা অথবা সাইনোসাইটিস থাকলে মাথায় বরফ দেয়া ঠিক নয়।

* শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিন।

* ১২টি গোল মরিচ চুর্ণ ও ৩ চামচ চিনি এক গ্লাস পানিতে রাত্রে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পান করুন। জ্বরের প্রচণ্ডতা বেশি হলে দুই তিন ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখেও পান করতে পারেন।

* জ্বরের কারণে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিগুলো, হজম প্রণালীর সাথে সম্পর্কিত অঙ্গসমূহ, ফুসফুস ও কিডনী দুর্বল হয়ে পড়ে এই জন্য এই সকল অঙ্গের বিন্দুতে দিনে দুবার আকুপ্রেশার চিকিৎসা করুন। এভাবে আমরা যেকোন রোগকে প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।

রোগ দর্শন : গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অধিকাংশ রোগই আমাদের দেহে রাতারাতি প্রবেশ করে না। যেকোন জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রকাশের পূর্বে দেহ কিছু সতর্ক সংকেত বা লক্ষণ দেয়। এই সব সংকেতগুলো বুঝে যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যায় তবে ঐ সমস্ত জটিল রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। যেমন যকৃতে (লিভার) পিত্তরস উৎপন্ন হয়ে পিত্তথলিতে সংগৃহীত হয়। সেখান থেকে প্রয়োজনমত পিত্তরস ক্ষরণ হয়। কোন কারণে পিত্তপ্রবাহ বেড়ে গেলে দেহের তাপ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত তাপ বের করে দেয়ার জন্য ঘন ঘন ঠাণ্ডা লাগে। সুতরাং ঘন ঘন ঠাণ্ডা লাগা লিভার ও পিত্তথলির জন্য একটি সতর্ক সংকেত। ঔষধ দ্বারা তাকে চাপা দিলে ধীরে ধীরে সাইনোসাইটিস, অ্যালার্জি, অ্যাজমা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয় । এরপরও যদি এই অতিরিক্ত তাপকে অবজ্ঞা করা হয় তবে দেহ এর চেয়ে শক্তিশালী সংকেত জন্ডিসকে পাঠায়। তাকেও অবজ্ঞা করলে লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সার ইত্যাদি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়।

আবার কোন কারণে পিত্তপ্রবাহ কমে গেলে দেহে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়। দিনের বেলা কর্ম ব্যস্ততার কারণে এই পানি উত্তপ্ত থাকে ফলে এর কোন প্রভাব লক্ষ্য করা যায় না। কিন্তু রাত্রের ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং ঘুমের মধ্যে শরীর যখন শীতল হয়ে যায় তখন এই পানি ফুসফুস ও মস্তিষ্কে আদ্রতা সৃষ্টি করে। দিনের জলীয়বাস্প যেমন রাত্রে শিশির আকারে পড়তে থাকে তেমনিভাবে সকালে ঘুম থেকে উঠলে মস্তিস্কে জমা এই পানি সর্দি আকারে পড়তে থাকে এবং ঘন ঘন হাঁচি আসে। অতএব, ঘন ঘন ঠাণ্ডা লাগা, জন্ডিস, সর্দি, হাঁচি ইত্যাদি হলো লিভারের সমস্যার পূর্বাভাস।

সমস্যার প্রথম দিকে ফুসফুস ও মস্তিস্ক পরিষ্কার থাকে। ধীরে ধীরে এইসব অঙ্গে শ্লেষ্মা জমা হতে থাকে। পরবর্তীতে সাইনোসাইটিস, অ্যালার্জি, অ্যাজমা ইত্যাদি রোগের সৃষ্টি হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে এক অঙ্গের সংকেতকে অবজ্ঞা করলে অন্যান্য অঙ্গও আক্রান্ত হয়।

কিডনীর কাজ হলো রক্তকে ছেঁকে বিশুদ্ধ করা এবং দূষিত পদার্থ (কার্বন, টক্সিন ইত্যাদি) শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু কিডনীর কোন সমস্যা হলে তা দূষিত পদার্থ ছাঁকতে পারে না। ফলে রক্তে দূষিত পদার্থ বেড়ে যায়, প্র¯্রাবের পরিমাণ কমে যায়, প্র¯্রাবের দুর্গন্ধ হয় এবং হাত পা ফুলে যায়। সমস্যার প্রথম দিকে বাস, ট্রেন ইত্যাদি ভ্রমণে অথবা দীর্ঘ সময় চেয়ারে বসে থাকলে পা ফুলে যায়। সুতরাং হাত পা ফুলে যাওয়া, প্র¯্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, প্র¯্রাবে দুর্গন্ধযুক্ত হওয়া ইত্যাদি কিডনী সমস্যার সতর্ক সংকেত। এইভাবে যেকোন অঙ্গে সমস্যা হলেই শরীর আমাদেরকে কোন না কোন সংকেত দেয়। এই সব সংকেত সবার পক্ষে বুঝা সম্ভব নাও হতে পারে। কিন্তু শরীরে কোন অস্বাভাবিক অবস্থা হলেই এর একটি প্রভাব (ব্যথা) ঐ অঙ্গের সুঁইচের উপর পড়ে। সুতরাং শরীরে কোন সমস্যা দেখা দিলেই আকুপ্রেশারের বিন্দুগুলো পরীক্ষা করে কোন অঙ্গে সমস্যা তা বের করা যায় এবং কোন রকম ঔষধ ব্যবহার না করেই নিরাময় করা যায়।

আকুপ্রেশারের এই বিন্দুগুলোর অবস্থান নির্ণয় এতো সহজ যে, যে কোন ব্যক্তি এমনকি দশ বছরের শিশুও চিত্র দেখে যেকোন অঙ্গের সুঁইচের অবস্থান নির্ণয় করতে পারবে এবং চাপ দিয়ে এর সুস্থতাণ্ডঅসুস্থতা সম্বন্ধে জানতে পারবে।

বিভিন্ন অঙ্গের আরও কতিপয় সংকেত

* কোন রোগীর চোখের কোণায় (নিচের পাপড়ীর ভিতরে) যদি লালবর্ণ না থাকে অর্থাৎ সাদা থাকে তবে তা রক্তশূন্যতা এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে কৃমি আছে নির্দেশ করে।

* কোন রোগীর চোখের নিচের পাপড়ীর নিচে যদি বৃত্তাকার ফোলা ও কালো থাকে তবে তার কিডনী সঠিক ভাবে কাজ করছে না বুঝায়।

* কোন রোগীর মুখে যদি অসংখ্য কালো তিল থাকে তবে তার শরীরের উত্তাপ বেশি এবং তার লিভার ও পিত্তথলি সঠিকভাবে কাজ করছে না।

* কোন বালকের পরিণত বয়সে দাড়ি-গোফ না গজায় তবে তার যৌন সমস্যা আছে অথবা তার অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হয়।

* যদি কোন মেয়ের দাড়ি-গোফ গজায় তবে বুঝতে হবে তার যৌনগ্রন্থি সঠিকভাবে কাজ করছে না।

* কোন রোগীর যদি হাত-পার তবে তার মুত্রথলিতে ইনফেকশান আছে।

আমাদের প্রধান শত্রু টক্সিন : টক্সিন এক ধরনের বিষ। তা বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোকে নিস্তেজ করে দেয়। বিশেজ্ঞদের অভিমত আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত এই ক্ষতিকর টক্সিন (খাদ্যদ্রব্য ও শ্বাস-নিঃশ্বাস) অবাধে প্রবেশ করছে। কখনো নিজের অজান্তে আবার কখনো জেনেশুনে প্রবেশ করাচ্ছি এই ভয়ংকর বিষ। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, আমাদের শরীর আল্লাহ তায়ালার এক আশ্চার্য সৃষ্টি। সে নিজেই জানিয়ে দেয় তার সমস্যা। সুতরাং শরীরে টক্সিনের মাত্রা বেশি হলেই বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তা জানিয়ে দেয়।

টক্সিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে কী কী সমস্যা হয় : মস্তিষ্কের নিউরোন কোষে (স্নায়ু কোষ) টক্সিন জমে থাকে ফলে সাইনোসাইটিস, ক্রমাগত মাথাব্যথা (মাইগ্রেনের সমস্যা), অনিদ্রা, টেনশন ও হাইপ্রেশার ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে হাঁটু ও কোমড়ে ব্যথা হয় এবং পায়ের সাইটিকা স্নায়ু শক্ত হয়ে যায়। ফলে উঠলে বসতে পারে না ও বসলে উঠতে পারে না।

কিডনী রক্তের টক্সিন ছেঁকে বের করে দেয়। শরীরে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে গেলে কিডনী অধিক কাজ করতে হয়। ফলে কিডনী দুর্বল হয়ে যায় এবং এর কর্মক্ষমতা লোপ পায়। আবার অতিরিক্ত এই টক্সিন ঘামের সাথে বের হয়। ফলে বিভিন্ন প্রকার চর্ম রোগ দেখা দেয়।

লিভার টক্সিনকে ধ্বংস করে। শরীরে টক্সিন বেড়ে গেলে লিভারকে অধিক কাজ করতে হয়। ফলে শরীরের উত্তাপ বেড়ে যায় এবং প্রচুর ঘাম বের হয়।

টক্সিন বেড়ে গেলে শরীরের ওজন বাড়তে থাকে। দেখা যায় খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করে কিংবা বিভিন্ন প্রকার ব্যয়াম করেও ওজন কমানো যায় না।

তাছাড়া শরীরে টক্সিন বেড়ে গেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, সামান্য পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে উঠা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাথা, ক্ষতস্থান দেরীতে শুকানো, ঘন ঘন জ্বর হওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।

টক্সিন শরীর থেকে বের করার পদ্ধতি

প্রথম পদ্ধতি : দু চামুচ কফি পাউডার, এক চামচ কাস্টোর-ওয়েল এবং আধা চামচ পানি ভালভাবে মিশিয়ে রাত্রে ঘুমানোর আগে ঢুস দিন। এই মিশ্রন শরীরের টক্সিনকে জ্বালিয়ে দেয়। এই পদ্ধতিতে এক নাগাড়ে সাত দিন ব্যবহার করে আমার এক রোগী প্রায় আট কেজি ওজন কমিয়েছে।

দ্বিতীয় পদ্ধতি : দুটি পেঁয়াজ নিন। প্রতিটি পেঁয়াজ পাঁচ টুকরা করে (পয়সার মত) কেটে নিন। রাত্রে শোয়ার সময় প্রতিটির মাঝের তিন টুকরা নিয়ে দু পায়ে মোজার মাধ্যমে অথবা নেকড়া পেঁচিয়ে ঘুমিয়ে থাকুন। সকালে পেঁয়াজের টুকরাগুলো মাটিতে পুঁতে রাখুন। পেঁয়াজ শরীর থেকে টক্সিন টেনে বের করে নেয়।

* প্রচণ্ড মাথা ব্যাথার সময় এক পিচ পেঁয়াজ কপালে বেঁধে রাখলে অল্প সময়ের মধ্যে ইনশাআল্লাহ মাথা ব্যথা ভাল হয়ে যাবে। এইভাবে কয়েক দিন বেঁধে রাখলে মাইগ্রেনের সমস্যা ভাল হয়।

* জ্বর হলে এক পিচ পেঁয়াজ কপালে রেখে দিলে দ্রুত জ্বর সেরে যায়।

* সর্দি, সাইনোসাইটিস, নাক ডাকা ও ঘন ঘন হাঁচি আসা ইত্যাদি সমস্যায় রাত্রে সোয়ার সময় এক পিচ পেঁয়াজ কপালে বেঁধে রাখলে কয়েক দিনের মধ্যেই ইনশাআল্লাহ এই সব সমস্যা ভাল হয়ে যাবে। এইভাবে শরীর থেকে টক্সিন বের করলে প্রথম প্রথম হালকা দুর্বলতা অনুভব হতে পারে। কিন্তু ভয়ের কোন কারণ নাই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়