প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খান কোরআনে হাফেজসহ অসহায় দুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করে তাদের আস্থার জায়গা দখল করেছেন। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সাবেক লেকচারার। সেখানে থাকাবস্থায় ২০০৮ সালে তিনি সরকারি চাকুরি থেকে অব্যাহতি নেন। এর আগে অর্থাৎ ২০০৪ সালে তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলার আলীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ছিলেন।
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খানের জন্মস্থান ঢাকা। বর্তমানে তিনি চাঁদপুর শহরের মিশন রোডে নোভা এইডে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। পাশাপাশি তিনি সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত রয়েছেন। রোববার তিনি চাঁদপুর কণ্ঠের ‘চিকিৎসাঙ্গন’ বিভাগের মুখোমুখি হন।
সাক্ষাৎকার নেন আলআমিন হোসাইন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খান : মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ রহমতে ভালো আছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে কোথায়?
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খান : আমার শৈশব কেটেছে কক্সবাজার। আর কৈশোর কেটেছে ঢাকা এবং বরিশালে। আমার জন্মস্থান ঢাকা। কর্মসূত্রে বর্তমানে চাঁদপুরে বসবাস করছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খান : কক্সবাজার গভর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে এসএসসি ও ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করি। পরে ডিপ্লোমা-ইন-অ্যাজমা এডুকেশন ফর হেলথ্ (ইউকে) সম্পন্ন করি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হওয়ার ভাবনাটি সূচনা হলো কীভাবে?
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খান : ছোটবেলা থেকেই আমি মানুষের জন্য ভালো কিছু করার চিন্তা করতাম। অসহায় মানুষের পাশে থাকা, তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করার শিক্ষা বাবা-মা ছোটবেলা থেকেই শেখাতেন। ফলে বাবা-মায়ের স্বপ্ন আমি যেনো চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে পারি। কারণ চিকিৎসক হিসেবে মানুষের সেবা করা সবচেয়ে সহজ। আমি অসহায়-দুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে সেবা দিই। এছাড়া কোরআনে হাফেজ, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্য ও রিকশাচালকদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করি। এতে আমি মনে তৃপ্তি অনুভব করি। মহান আল্লাহ যেনো আমৃত্যু আমাকে মানুষের সেবায় কবুল করেন সে কামনা করি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হিসেবে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলুন।
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খান : বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাস করে সেখানে যখন একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে নিয়োজিত হই, সেদিনের আনন্দ অনেক। নিজেকে পিতামাতার গর্বিত সন্তান মনে হয়েছে। মনে হয়েছে মানুষকে সেবা দিতে আমি প্রস্তুত। দিনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ সময় আমি হাসপাতালে রোগীদের সেবায় ব্যয় করতাম। কীভাবে একজন রোগীকে দ্রুত সেবা দিয়ে সুস্থ করা যায় সে চেষ্টা করতাম। এক্ষেত্রে আমাকে সহযোগিতা করতেন প্রফেসর ডাঃ সানোয়ার হোসেন, সার্জারির প্রফেসর ডাঃ আনওয়ারুল ইসলাম ও মেডিসিনের প্রফেসর ডাঃ লতিফ স্যার (বর্তমানে প্রয়াত)।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের লেকচার ছিলেন, সে সম্পর্কে কিছু বলুন।
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খান : আগেই বলেছি, আমি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। পাস করার পর সেখানে ইন্টার্ন করি। আমি ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সেখানের লেকচারার ছিলাম। ২০০৮ সালে আমি সরকারি চাকুরি থেকে অব্যাহতি নিই। এর আগে, ২০০৪ সালে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার আলীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুরের চিকিৎসাব্যবস্থার সার্বিক দিক নিয়ে কিছু বলুন।
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খান : চাঁদপুরের চিকিৎসা ব্যবস্থা অতীতের তুলনায় বর্তমানে অনেক ভালো। আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালে সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। চাঁদপুরসহ আশপাশের জেলার মানুষ এ হাসপাতালে সেবার জন্যে আসেন। পাশাপাশি চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ হওয়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ চাঁদপুরে আসছেন। সাধারণ রোগীরা সহজেই তাঁদের শরণাপন্ন হয়ে সেবা গ্রহণ করছেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার কাছে কোন্ ধরনের রোগী বেশি আসে?
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খান : অ্যাজমা এবং শ্বাসকষ্টের রোগী বেশি আসেন। এছাড়া মেডিসিন সংক্রান্ত রোগীরা আসেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগীদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কি?
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খান : রোগীদের কাছে প্রত্যাশা তারা যেনো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলেন। শারীরিক যে কোনো অসুস্থতায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসকের ওপর আস্থা রেখে ধৈর্য সহকারে চিকিৎসার কোর্স সম্পন্ন করেন। কোনো অবস্থায়ই অনভিজ্ঞ-আনাড়ি লোকের পরামর্শ ওষুধ সেবন না করেন। একই সাথে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিকসহ জরুরি ওষুধ সেবন করতে হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসা জীবনের একটি সুখের এবং একটি দুঃখের স্মৃতির কথা বলুন।
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খান : চিকিৎসা জীবনে দুঃখের স্মৃতি নেই, তবে সুখের অনেক স্মৃতি আছে। চিকিৎসা সেবার পাওয়ার পর রোখীর মুখের হাসি আমার সুখের অন্যতম কারণ। বিশেষ করে, বৃদ্ধ রোগীরা যখন সুস্থ হয়ে মাথায় হাত রেখে দোয়া করেন, প্রশংসা করেন তখন চিকিৎসক হিসেবে অনুপ্রাণিত হই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কী কী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন?
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খান : সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো রোগীদের অজ্ঞতা। রোগীদের সচেতন হতে হবে। কম মূল্যে সেবা দেয়ার লোভ দেখিয়ে দালাল চক্র তাদের সর্বস্বান্ত করছে। এজন্যে দালালে খপ্পরে পড়া যাবে না।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলে প্রথম যে তিনটি কাজ করতেন?
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খান : আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলে সংখ্যায় কম হলেও মানসম্মত মেডিকেল কলেজ স্থাপন করতাম। উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্যে মেডিকেল অফিসারদের সাথে রোগভিত্তিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রোগীদের রেফারেন্সের ব্যবস্থা করতাম। এমবিবিএস পাস করার পর সরাসরি চিকিৎসকদের নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করতাম। চিকিৎসক ও রোগীবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করতাম।
চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খান : রোগমুক্ত জীবনযাপনের জন্যে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ব্যালেন্স ডায়েট করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : অবসরে কী করেন?
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খান : অবসরে খেলাধুলা করি। ভ্রমণ করি। ভ্রমণ করা আমার সখ।
উল্লেখ্য, ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান খান চাঁদপুর সেন্ট্রাল রোটারী ক্লাবের সদস্য ও চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য।
* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]