প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
খেলাধুলা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাগর তীর যেন হয়ে উঠে এক টুকরো চাঁদপুর

সাগর তীরে সবাই যখন ক্লান্তি দূর করতে ব্যস্ত, আর তখনই নানান ধরনের বিনোদনের পসরা সাজিয়ে বসেছিলো শাহরাস্তি প্রেসক্লাব পরিবার। এখানে কী ছিলো না তা বলা ছিল মুশকিল। ছিলো শিশু-কিশোরদের জন্যে খেলাধুলা, ছিলো বয়স্কদের জন্যে খেলাধুলা। আর ছিল মহা আকর্ষণীয় র্যাফেল ড্র।
দিনটি ছিল শুক্রবার, বিকেলের নাস্তা খাবার পর কাজল ভাই সবাইকে নিয়ে বিচে গেলেন। সূর্যাস্ত ডোবা দেখা ও সেখানে নাচগানের আনন্দে মেতে উঠার জন্যে। যাই হোক। বিচে গিয়ে দেখা যায় সাগরে জোয়ার শেষে ভাটা পড়ে গেছে। সাগরের বিশাল জলরাশির দক্ষিণ থেকে হিমেল বাতাস এসে আমাদের মন ছুঁয়ে দিলো এক পলকে। সন্ধ্যার পর কেউ কেউ পরিবারের জন্যে বার্মিজ মার্কেটে কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে উঠে। আবার কেউ কেউ মুক্ত বাতাসে হারিয়ে যাচ্ছে কোনো এক অজানা গাঁয়ে। এরই মধ্যে আমরা সবাই গলা ছেড়ে গান ধরি--আসিবে বলে কথাটা দিলে, তুমি আমি মুখোমুখি বসে দুজন, তোর মনের পিঞ্জিরায় তুই কারে দিলি ঠাঁই, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলাসহ আরো কয়েকটি জনপ্রিয় গান। গানের সুর যতদূর যায় তার গান ও সুরের মূর্ছনায় মুগ্ধ হয়ে চোখের সামনে ছুটে আসে অনেক ভ্রমণ পিয়াসু গানপ্রিয় প্রেমিক। সকলের গাওয়া সেই গানগুলো অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করে ছড়িয়ে দেয় পুরো পৃথিবী জুড়ে। সেখানে আরো গান গেয়ে আমাদের আনন্দ ভ্রমণটাকে প্রাণবন্ত করে তোলেন প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজল ভাই, ফয়েজ, হেলাল, হাসানুজ্জামান, রাফিউ হামজা, আমিনুল ইসলাম, হাসান মাস্টারসহ অন্য সদস্যরা। রাত আটটার দিকে সবাই হৈ-হুল্লোড় শেষে আবারও হোটেলে ফিরে এলাম। ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবারের পালা। কিন্তু রাতে কোনো স্বাভাবিক খাবার নয়, ছিল বারবিকিউ পার্টি। আর সবাই প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো স্যান্ডি বিচ রেস্টুরেন্টে। মুহূর্তে অন্য এক অভিজ্ঞতা। সাগরের গর্জন আর হালকা আলোতে সে এক ভিন্ন অনুভূতি। তারই মাঝে শিল্পীর গানে আর আমাদের সদস্যদের নাচের তালে স্যান্ডি বিচ হয়ে উঠে একটি আনন্দের টুকরা। বয়সের ভেদাভেদ ভুলে সবাই একসাথে নেচে গেয়ে রাত বারোটা যে কখন বেজে গেল সেদিকে কারোই নজর নেই। তারপর রাত ১২টায় পোড়া মাছ আর পোড়া মুরগির সাথে নানরুটি দিয়ে আমরা ডিনার সেরে নিলাম। রাত দুটায় সবাই হোটেলে চলে আসি আর ঘুমিয়ে পড়ি।
শনিবার সকাল নয়টায় ডাক আসে নাস্তা খাওয়ার। সবাই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে হোটেল লাবণীতে নাস্তা সেরে ১০টার সময় শুরু হয় পরিবারের সদস্যদের খেলাধুলার পর্ব। এই পর্বটি পরিচালনা করেন ক্রীড়া বিভাগের দায়িত্বশীল হাসান আহমেদ। তাকে সহযোগিতা করেন ক্রীড়া বিভাগের সদস্য মাইনুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম ও জুয়েল । এছাড়া অন্যান্য সদস্যও সহযোগিতা করেন। এই সময় ছিলো শিশুদের দৌড়, বেলুন ফোলানো ও ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ। এই খেলাগুলোতে কাউকে পরাজিত হতে দেয়া হয়নি। সকল প্রতিযোগীকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেন সভাপতি মইনুল ইসলাম কাজল। তিনি এই সময় বলেন, আমরা আসছি আনন্দ করতে। তাই অংশগ্রহণকারী সকলকে আমরা পুরস্কৃত করব। আর এর মধ্য দিয়ে খেলাধুলা শেষ করা হয় এবং পরবর্তী খেলা রাতে শেষ করার নির্দেশ দেন।
যে কথা সে কাজ। নিয়মিত শান্ত পরিবেশে খাবার গ্রহণ শেষে শুরু হয় আমাদের খেলাধুলা। আর ক্রীড়া বিভাগের দায়িত্বে থাকা হাসান আহমেদ এই দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় নারীদের জন্যে নির্ধারিত বালিশ খেলা ও পুরুষদের জন্যে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলাধুলা শেষে হোটেলের হল রুমে সকলের জন্যে চমক হিসেবে অপেক্ষা করছিল আমাদের সাথে থাকা দুজনের জন্মদিনের পার্টি। কেক কাটার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া পার্টি হইচই আর নাস্তা গ্রহণের মাঝে শেষ হলে কাজল ভাই বললেন সবাইকে ঘুমিয়ে পড়তে, পরদিন সকালেই আমাদের অনেক কাজ আছে। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম। রোববার সকালে খুব ভোরে উঠে পড়লাম সবাই। নাস্তা সেরে এদিক সেদিক একটু ঘোরাঘুরি করার পর সকলের ডাক আসে হল রুমে যাওয়ার জন্যে। এখানে আমাদের জন্যে ক্রীড়া বিভাগের দায়িত্বে থাকা হাসান আহমেদ, মাইনু ভাই, রফিকুল ইসলাম ও জুয়েলসহ মঞ্চ সাজিয়ে রেখেছেন পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ও র্যাফেল ড্রয়ের। আর সকাল ১১টার দিকে ফয়েজ আহম্মেদ ও হাসান আহম্মদের সঞ্চালনায় শুরু হয় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। এতে সভাপতিত্ব করেন মঈনুল ইসলাম কাজল। মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন সাধারণ সম্পাদক স্বপন কর্মকার, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাবেক অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির ও সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল উদ্দিন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বে থাকা হাসানুজ্জামান, জামাল হোসেন, জসিম উদ্দিন, খাদ্য বিভাগের রাফিউ হামজা এবং অন্যান্য সদস্যের মধ্যে ফয়সাল, মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।
চরম আনন্দ ও উৎকণ্ঠার মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এক এক করে সকলের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার পর শুরু হয় আকর্ষণীয় পর্ব। আর সেটি ছিলো র্যাফেল ড্র। এক এক করে টানটান উত্তেজনার মাঝে র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এতে নানা চমক ছিলো। আর সকল চমককে ও সকলের উৎকণ্ঠাকে এক পাশে রেখে প্রথম পুরস্কার পায় জুয়েল। এর মাঝ দিয়ে র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠান শেষ হয়। এই সময় সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সকলের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। সভাপতি সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে আমাদের আনন্দ বিনোদন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণসহ সকল অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন। এভাবেই আমাদের এই মহাআনন্দের সমাপ্তি ঘটে।
আমি শাহরাস্তি প্রেসক্লাব পরিবারের এবং এই আনন্দ ভ্রমণের একজন সদস্য হতে পেরে নিজেকে অনেক গর্বিত মনে করছি, পাশাপাশি প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাদের শাহরাস্তি প্রেসক্লাব পরিবারের চারদিনের এই আনন্দ ভ্রমণটা ছিলো সত্যি অনেক মনোমুগ্ধকর।