শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়াকণ্ঠের সাথে আলাপচারিতায় সাবেক ফুটবলার টুটুল চক্রবর্তী

জেলার ফুটবল উন্নয়নে আমাদেরকে কখনো ডাকা হয়নি

চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম ॥
জেলার ফুটবল উন্নয়নে আমাদেরকে কখনো ডাকা হয়নি

চাঁদপুর জেলা শহরের ফুটবলার হিসেবে খেলেছেন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে বিভিন্ন মাঠে। ঢাকার মাঠে খেলা ছাড়ার পর কোচিংয়ের সাথে জড়িত হয়ে পড়েন। ব্যবসা করার পাশাপাশি খেলাধুলার সাথে এখনও জড়িত রয়েছেন। যখন সুযোগ পান তখনই ছুটে যান খেলার মাঠে। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি ছিলো তার প্রচণ্ড আগ্রহ। খালি পায়ে শুরু করেন খেলাধুলা।

তিনি হলেন টুটুল চক্রবর্তী। তার বাবার নাম স্বর্গীয় নৃত্য গোপাল চক্রবর্তী ও মায়ের নাম স্বর্গীয় লক্ষী রাণী চক্রবর্তী। বসবাস করেন চাঁদপুর শহেরর হাজী মহসিন রোড এলাকায়। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তার স্ত্রীর নাম নুপুর চক্রবর্তী। তাদের একমাত্র ছেলে কর্ন চক্রবর্তী। পড়াশোনা করেন গনি মডেল হাইস্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে।

টুটুল চক্রবর্তী বর্তমানে ফুটবল কোচিংয়ের পাশাপাশি হাজী মহসিন রোডে অনুপম ইলেকট্রিক অ্যান্ড হার্ডওয়্যার ব্যবসার সাথে জড়িত। খেলাধুলা শুরু করেন তার বাড়ির পাশেই চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠে। ফুটবল জীবনে খেলেছেন মা মণি গোল্ডকাপ ফুটবল। খেলেছেন বাংলাদেশ বয়েজ, আরামবাগ, ধানমন্ডী ক্লাবসহ চট্টগ্রামের ফুটবল দলগুলোতে। খেলারত অবস্থায় খেলেছেন মধ্যমাঠ, রাইটব্যাক ও লেফ্টব্যাকে।

খেলোয়াড়ী জীবনের বিভিন্ন বিষয় ও জেলার ক্রীড়া উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হয় ক্রীড়াকণ্ঠের সাথে টুটুল চক্রবর্তীর। তিনি খোলামেলা বলেন কিছু কথা। তার কথাগুলো পাঠকদের জন্যে হুবহু পত্রস্থ করা হলো।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনার খেলাধুলা শুরু হয় কীভাবে?

টুটুল চক্রবর্তী : আমার খেলাধুলা শুরু হয় ১৯৯২ সাল থেকে। মা মণি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের মাধ্যমে আমার ফুটবলের যাত্রা শুরু হয়। জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে এ খেলার অনেক জোয়ার ছিলো। আমি ওই টুর্নামেন্টে চাঁদপুর জেলার অনূর্ধ্ব ১৪ দলের হয়ে সিলেটে খেলতে যাই।

ক্রীড়াকণ্ঠ : কীভাবে জেলা অনূর্ধ্ব ১৪ দলে সুযোগ পেয়েছিলেন? ওই দলে কারা কারা ছিলেন?

টুটুল চক্রবর্তী : আমি যখন চাঁদপুর কলেজ মাঠে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতাম তখন চাঁদপুর ব্রাদার্স ক্লাবের আমাদের বড়োভাই বিএম হারুনুর রশিদও অনুশলীন করতেন। তার অনুপ্রেরণায় এবং পরামর্শে আমি জেলার অনূর্ধ্ব ১৪ দলে ট্রেনিংয়ের জন্যে অনুশীলনে যোগ দেই। তখন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মুনির আহমেদ। আর ফুটবল কমিটির দায়িত্বে ছিলেন ক্রীড়া সংগঠক শাহ্ জাহাঙ্গীর। আমাদের সময় সিলেট জেলায় অনূর্ধ্ব-১৪ দলের খেলা হয় সিলেট ওসমানি স্টেডিয়ামে। ওই টুর্নামেন্টে চাঁদপুর জেলা দল রানার্সআপ হয়েছিলো।

আমি যখন জেলা দলে খেলার সুযোগ পাই, তখন আমার সাথে খেলোয়াড় ছিলেন ওয়াহিদুজ্জামান লাবু, গোলকিপার কামাল হোসেন, সোহাগ, বাবুরহাটের আক্তার, পুরাণবাজারের লিটন সরকার, বাদশা হোসেন নুহ, হাবিবসহ আরো অনেকেই।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি ঢাকাতে প্রথম খেলার সুযোগ পান কীভাবে?

টুটুল চক্রবর্তী : আমি যখন সিলেটে মা মণি গোল্ডকাপ খেলি, তখন মাতুয়াইল ক্লাবের লোকজন আমাকে তাদের দলে খেলার জন্যে সিলেক্ট করেন। ঢাকার ৩য় বিভাগে মাতুয়াইল উদয়ন সংঘের হয়ে আমার যাত্রা শুরু।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি কখনও জাতীয় ফুটবল দলে বয়সভিত্তিক খেলায় ডাক পেয়েছিলেন?

টুটুল চক্রবর্তী : আমি ঢাকার মাতুয়াইলে ২ বছর খেলারত অবস্থায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৬ জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাম্পে ডাক পাই। অনুশীলনকালে আমার সাথের খেলোয়াড় ছিলন গোলকিপার আমিনুল ইসলাম, বিপ্লব, কিংশুক, টিটু ও মিঠু। অনুশলীনকালে ইনজুরির কারণে আর দলের হয়ে খেলতে পারিনি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ঢাকার কোন্ কোন্ ক্লাবে খেলেছেন?

টুটুল চক্রবর্তী : ১৯৯৬ সালে ঢাকায় খেলারত অবস্থায় বাংলাদেশ বয়েজ ক্লাবে খেলার ডাক পাই। সেখানে খেলার পর অগ্রণী ব্যাংকে চলে যাই। টানা তিন বছর ওই ক্লাবে খেলার পর চলে আসি ঢাকার আরমবাগ ক্লাবে। ওই সময় ঢাকার এই ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন বর্তমান জেলা বিএনপির সভাপতি ও গণমানুষের নেতা শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ভাই। তাঁর আমলেই আমি তিন বছর ক্লাবের হয়ে খেলি। আরামবাগে খেলা অবস্থায় ধানমন্ডি ক্লাবে ডাক পাই। সেখানে দুবছর খেলার পর চলে আসি দীপালি ক্লাবে। ওই ক্লাব থেকেই ঢাকার ক্লাবের হয়ে মাঠ ছেড়ে বিদায় নিয়ে আসি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি দেশের বাইরে কোথাও খেলতে গিয়েছিলেন?

টুটুল চক্রবর্তী : হ্যাঁ। আমি যখন আরামবাগ দলে খেলি, তখন ভারতের সিকিমে অল ইন্ডিয়া গভর্নর গোল্ডকাপ কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নেই।

ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর জেলায় কোন্ কোন্ ক্লাবের হয়ে খেলেছেন?

টুটুল চক্রবর্তী : আমি চাঁদপুর স্টেডিয়াম মাঠে জেলা ফুটবল লীগে আবাহনী, নতুনবাজার, মোহামেডান, ব্রাদার্স, পশ্চিম শ্রীরামদী ক্রীড়া চক্রের হয়ে মাঠে নেমেছি। শরীয়তপুরেও ফুটবল টুর্নামেন্টে ভাই ভাই ক্লাবের হয়ে খেলেছি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : জেলা ফুটবল দলের হয়ে কোথায় কোথায় খেলেছেন?

টুটুল চক্রবর্তী : আমি জেলা দলের হয়ে সিলেট, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা সহ দেশের বিভিন্ন বিভাগের জেলা দলের হয়ে বিভিন্ন মাঠে খেলেছি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : জাতীয় লীগে ও সোনালী অতীত ক্লাবের হয়ে কোথায় কোথায় খেলেছেন?

টুটুল চক্রবর্তী : আমি জেলা শহরের নাজিরপাড়া ক্রীড়া চক্রের হয়ে জাতীয় ফুটবল লীগে ঢাকা, রংপুর, বরিশাল ও খুলনার সাথে খেলাতে অংশ নেই। এছাড়া চাঁদপুর সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্য হওয়াতে ক্লাবের হয়ে চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলার খেলাতে অংশ নেই।

ক্রীড়াকণ্ঠ : কোচিংয়ের সাথে কি জড়িত রয়েছেন?

টুটুল চক্রবর্তী : চাঁদপুর কিশোর ফুটবল একাডেমীর ইউসুফ ভাইয়ের সাথে কোচিংয়ে জড়িত আছি। আমাদের দল ঢাকার পাইওনিয়ার ক্লাব ফুটবলে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো অনেক দলের সাথে জয় পেয়েছে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : বর্তমানে জেলার ক্রীড়া উন্নয়নে কী প্রয়োজন?

টুটুল চক্রবর্তী : জেলা ক্রীড়া সংস্থাতে বিভিন্ন ইভেন্টের ভালো কোচসহ ভালো মানের সাংগঠনিক লোকদের প্রয়োজন। প্রতি বছর ফুটবল খেলাকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্যে লীগ আয়োজন করতে হবে ক্লাবগুলোকে নিয়ে। গত কয়েক বছর জেলা স্টেডিয়ামে নিয়মিত হচ্ছে না জেলা ফুটবল লীগ। দক্ষ অফিসিয়ালের প্রয়োজন। ফুটবলের জন্যে জেলা পর্যায়ের সাবেক ফুটবলারদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে খেলার আয়োজন করা দরকার। আমাদেরকে তো কখনো ডাকেনি গত ১৭ বছরের কমিটির লোকজন। আমরা তো খেলোয়াড়, খেলাধুলার সাথেই তো আমাদের জড়িত থাকতে হবে। জেলার ফুটবল উন্নয়নের জন্যে আমাদেরকে কখনো ডাক দেয়নি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : অনুশীলনরত ফুটবলারদের উদ্দেশ্যে?

টুটুল চক্রবর্তী : অনেক ফুটবলারকেই এখন স্টেডিয়াম ও আউটার স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে দেখি। তবে চোখে পড়ে বেশি ফুটবল কোচ মানিক ও জাহাঙ্গীর ভাইয়ের নিয়মিত অনুশীলন। প্রত্যেককেই মনে রাখতে হবে, আমাকে ভালো ফুটবলার হতে হবে। যে যতো বেশি খেলার টেকনিকসহ পরিশ্রমী হবে, সে খেলায় অনেক দূর এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : জেলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান অবস্থা ?

টুটুল চক্রবর্তী : ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলের সিন্ডিকেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। আমরা জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে নতুনভাবে দেখতে চাই। এজন্যে জেলার সকলের প্রিয়মুখ সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় ও জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ভাইয়ের নেতৃত্বে নতুনভাবে ক্রীড়া সংস্থাকে ঢেলে সাজানো হোক। তাহলেই চাঁদপুর জেলার মৃত ফুটবল আবার নতুন করে জাগ্রত হবে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।

টুটুল চক্রবর্তী : জ্বি, আপনাকেও ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি জেলাবাসীর প্রতি রইলো আগাম শারদীয় শুভেচ্ছা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়