প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
তানিয়া রাত্রীর একগুচ্ছ কবিতা
মানচিত্র
আমার মানচিত্র খুঁজে পাচ্ছ না?
তাহলে শরাব হয়ে যাচ্ছি প্রিয়
পেয়ালায় পান করে নিও?
তাহলে আমি তোমার ভেতরেই থাকবো-
আর খুঁজতে হবে না
আর আমার উপর তোমার কেমন নেশা হল-
সেটাও তো জানতে হবে!
***
তর্ক
এখন আর তর্ক করি না-
দুনিয়া আমাকে বুদ্ধিমান বানিয়ে দিয়েছে-
এখন আমি জানি
মরবার জন্য এক ফোঁটা বিষ খেলেই হয়!
কিন্তু ওষুধ বানাতে পুরো বোতলই লাগে!
অনিদ্রায় বাস করে
এটাও জেনেছি যে ভোর হতে কত সময় লাগে!
আমার কেবল একটি প্রশ্ন
যার উত্তর কেউ দেয় না-
আমিও উত্তর জানি না!
নিরিবিলি ঘরে বিছানায় লেপ্টে যেতে সবাই পারে!
ভর্তি বাজারে কে সাহস করে জড়িয়ে ধরার ক্ষমতা রাখে?
***
মৃত্যু
মানুষের মন তো
তাই যন্ত্রণায় কষ্ট পায়-
কাঁদবো আমি বার বার
কেন কেউ আমাকে কষ্ট দেবে!
তোমার উৎসব থেকে আমি উঠে এসেছি অনেক আগে-
কেউ টের পায়নি-
তুমিও পাওনি-
কিন্তু এখন কেন ঘুরে ঘুরে দেখছ আমাকে?
এটা কিন্তু আমার কষ্ট বাড়াচ্ছে
একজন দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রেমিক
আর আশ্রয়হীন ভালোবাসা-
একটি জীবনকে শেষ করে দিতে পারে কত সহজে!
তুমি সঙ্গে হাঁটবে
তাই তো থেমেছিলাম
না হলে একা চলা তো আমার পুরোনো অভ্যাস
আমি মরে গেলে-
আমার সমাধির গায়ে লিখে দিও
ভালোবাসার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালো!
***
শত্রুগুলো এগিয়ে যাক
আমাকে দেখে খোদা খুব অবাক হয়েছে
হঠাৎ কী এমন হল-
যে আল্লাহকে মনে পড়লো!
আমার জীবন দৌড়ে শত্রুগুলো এগিয়ে যাক-
কিন্তু বন্ধুটি যেন হাত ধরেই থাকে!
যখন ইচ্ছা তখনই যেন তাকে ডাকা যায়-
সে যেন চলে যাওয়া মুহূর্ত না হয়-
আমি তো ঠোঁটে
হাসি ঝুলিয়ে রাখি-
যেন আমার অশ্রু
চোখের কোণে ঠাঁই পায়-
ঈশ্বরের কাছে জানতে চাইলাম
আমাদের সম্পর্কটা এভাবে কেন থামলো?
উত্তরে তিনি বললেন
আমারি বা প্রিয়া কোথায় মিললো!
স্বপ্ন ধরে বেঁচে আছি
মরণের হাত ধরে
স্বপ্ন ছাড়াকে বাঁচতে পারে?
আমার স্বপ্ন! আমার মৃত্যু! আমার প্রেম সব একাকার হয়ে গেছে
মৃত্যু তোমার রূপ ধরে আসুক প্রিয়,
খুব আদর করে কাছে এসে বলুক
আমার সাথে চল
চল ভেসে যাই দূর কোন স্বপ্নের দেশে।
কত নগর-বন্দর খুঁজেছি আমি;
শেষ পর্যন্ত তোমার কাছে এসে থামি
তুমি যদি মরীচিকা- হও আমি তবে হবো মরুভূমি-
এই যে বাতাস নাকমুখ ছুঁয়ে গেল আঁধারের দিকে,
আচল বুক থেকে খসে পড়ল
তোমার ওই সুন্দর জন্তুর মতো দেহে
শুধু রক্ত, শুধু শরীর? আর কিছু নেই?
তাই বাঘের বিক্ষোভ নিয়ে
আমাকে হরিণী করে
নদীর কিনারে-নিয়ে গিয়েছিলে- রাতে?
তুমি ফিরে এস আবার:
আমার উজ্জ্বল মৃত্যু হয়ে
আমার প্রেম হয়ে
দুঃখ ময় পৃথিবীতে আমরা সব পুরোনো হয়ে গেলাম
তবুও জলজপ্রাণীরা আজো করে ভিড়
শৈবালের নিচের জলের মায়ায়!
প্রেম-স্বপ্ন-মৃত্যু
প্রেম কি আমাদের হৃদয়ে?
হে স্ববির প্রেমিক, কী চাও বলো তো-
সাদা মেঘ বক পাখির পালকের মতো?
আর কত পরে আমার মৃত্যু হয়ে আসবে তুমি?
পাখির মত মেঘের মত সুন্দর নই আমি
তাই তো মৃত্যুও তোমার মত আমার মোহে পড়ে নাই আজও।
আজও সব চতুষ্পদ, সরীসৃপ নদীর ধারে
ঘুরে বেড়ায়।
কত রাতপাখির গান জোছনায় ধুলো হয়ে উড়ে গেছে!
আমি কেবল মৃত্যুর অপেক্ষায়
স্বপ্ন ধরে বেঁচে আছি।
***
পদাবলি শুনতে চাই
তোমার ঘরের সামনে যেন
আমার কবর হয়-
তাহলে যখনি তুমি পথে বের হবে
আমি তোমার সামনে পরে যাবো-
আর আমি যে অন্তর এর অচিনপুর থেকে বার বার তোমায় ডাকবো
আমার কবরের দিকে তাকালেই
তুমি তা শুনতে পাবে-
আমাদের মধ্যে আর কোন দূরত্ব থাকবে না-
আমি তো সারা জীবন তোমার
অফুরান জীবনের ধারা বিবরণী শুনেছি-
তোমার রূপকথাগুলো শুনেছি-
মৃত্যুর পরেও আমি তোমার-
পদাবলি শুনতে চাই-
***
বিশ্বস্ত প্রেমিক
পৃথিবীর সব সুখ নিয়ে চলে গেছে
আমার বিশ্বস্ত প্রেমিক-
এখন আর খোঁজার কিছু নেই
তবে তোমায় না পাওয়ার জলচিহ্ন একসময় আমি বুকে রেখেছিলাম!
এখন ওটা নদী হয়ে গেছে!
এর ঠিক বাঁ পাশে,
হাত রাখো
আমার বুক আর হৃদয় খুঁজে পাবে!
ওখানে জমে আছে প্রেম, স্মৃতি, সুখ, সুর!
এখনো ওরাই অছে
শুধু তুমিই থাকোনি!
আমার এখানে হাত দাও তো
টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব? পাচ্ছো না?
একটু দাঁড়াও আরেকটু সহজ করে দিই-
এই যে উপরে হাত দাও, তো
টের পাচ্ছো আমাকে?
পাচ্ছো না?
তুমি মন অন্ধ নাকি??
নাকি চোখে শুধু ভুল দেখো!
আহারে ওটা নয়, ওটাতো আমার কেশ।
এই যে আমার আঙ্গুল,
এইবার হাত ধর!
তুমি যেখানটায় হাত বুলাচ্ছ-
ওটাতেই কিন্তু অগ্নি!
***
আমার শহরে আগুন
এই দেখো আমার বিরাণ প্রাণ!
তুমি কখনও কোন মরুতে বৃষ্টি দাওনি! তাই না?
তাই আগুনজলে সর্বক্ষণ!
অথচ আমি এমন এক মরু যে
জলের বাসনায় ডুবেছিল!
তুমি বর্ষার মেঘের মত পাগল
জানোই না কোন পথ এড়িয়ে
কোন ছাদ ভিজিয়ে দিতে হবে
তবুও তোমায় সঙ্গে নিয়েই চলছি-
এবার আমার শহরে আগুন লাগবে!