শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

ভাবুক মনের দৃষ্টিতে দেখা সবই কবিতা
মুহাম্মদ হানিফ

মানব মনের সাহিত্য ভাবনার আদি ও শাশ্বতরূপ হলো পদ্য বা কবিতা। চিরসবুজ বাংলার প্রকৃতি আমাকে ভীষণভাবে আপ্লুত করে, চোখ জুড়ায়। নিসর্গ দেখার দৃষ্টিভঙ্গি আর অবচেতন মনে ভাবনার আলোড়ন সর্বোপরি কবিতার প্রতি ভালোবাসা ও দুর্বলতা থেকেই কবিতা লেখার প্রয়াস। ভাবুক মনের দৃষ্টিতে দেখা যে কোনো কিছুই কবিতা বা কবিতার বিষয় হতে পারে। কবিতায় যেমন সত্য-ন্যায়ের বন্দনা করা যায় আর প্রেমণ্ডপ্রকৃতিরও তেমনি করা যায় অন্যায়-অবিচরের প্রতিবাদ। কবিতায় সমকালীন দেশ ও বিশ্বভাবনা আর দৃশ্যকল্প ফুটিয়ে তোলা যায় সময়ের ক্যানভাসে। বিবিধ কবিতার মধ্যে ‘সনেট’ কবিতা পাঠে বেশি মুগ্ধ হই আমি। হৃদয়ের গহীনে জমে থাকা ভাবনাগুলোকে সরল বয়ানে প্রকাশ করার চেষ্টা করি।

চলনবিলের বাঁকে

চিরায়ত এই বাংলার সবুজ গ্রামে-গ্রামে

শীতের আবেশ মেখে হেমন্ত নামে।

মাঠে ধান হাওড়-বিলে অজানা ভাটার টান,

আছে নৈসর্গিক ভাঙ্গাগড়ার নীরব আহ্বান।

চলন বিল;

শত নদী-খাল-বিলে মধুর মিলনে এক মহাবিল।

বর্ষায় বিস্তর জলরাশি, নীড়ভাঙ্গা ঢেউ আর

বাণ ডাকা অবাধ্য জোয়ার।

হেমন্ত আনে ফসলের সমাহার, নদীর দু কূল

আর বালুচরে পাতিহাঁস, বকের যুগল।

মাঝে ছেঁড়া দ্বীপগ্রাম দিগন্ত ছোঁয়া বিল,

শস্যক্ষেত আর জলাভূমি।

অসম মেঠোপথে বাউরি বাতাসে,

লাজুক ডানা মেলে উড়ে প্রেয়সী ও প্রেমী

মুক্ত বলাকা যেমন আকাশে;

উড়ে অচিন বনের অভুক্ত দুপুরের চিল।

চলনবিলের মায়াবী গোধূলি বেলায় আবছা ধোঁয়ায়,

কুয়াশার মেঘ বলে যায় আগাম শীতের বারতা।

গাঁয়ের কর্মঠ পুরুষেরা মাছ ধরে, মাঠে যায়

জোয়াল কাঁধে; রমণীরা গাঁথে স্বপ্ন বুনে নকশিকাঁথা।

সন্ধ্যার আঁধারে শতকোটি জোনাক

আলোর মশাল হয়ে মিটিমিটি জ্বলে।

মাঝরাতে ক্ষণে ক্ষণে শেয়ালের হাক-ডাক;

বেত-লতার ঝোঁপে ডাহুকেরা

ঘর বাঁধে যে বিলে।

এমনই বিস্তীর্ণ বিলে নীরবতার কুয়াশায় ভেসে,

দূর গাঁয়ের নিশুতি মাইকের আওয়াজ আসে।

জারি-সারি-মরমী, ভাটিয়ালি-পল্লীগীতি’র সুর

বিরহী মন ছুঁয়ে যায়; ভাবায় অম্ল মধুর।

এমন নিঝুম রাত ও পাখির কথাই বলেছেন,

এই বাংলার প্রিয় রেনেসাঁর কবি ফররুখ।

কতো পাখি;

বাংলার খালে-বিলে, বনে-বাদাড়ে

করে উঁকিঝুঁকি।

আরো আছে দূর ঐ গাঁয়ে বহুদূরে,

কবি তাও জানতেন।

তবু লিখেছেন নিরীহ এক পাখি;

নাম তার ‘ডাহুক’।

তোমার মাটিতে পদচিহ্ন এঁকে ধন্য বহু গুণী পুণ্যবান,

বহতা নদীর বাঁকে বাঁকে দেখি কতো জনপদণ্ডহাট-বন্দর।

কিংবদন্তির বেহুলার বাসরে আজও ঘুমায় লক্ষ্মীন্দর,

মহুয়ার বনে জমা আছে যত দস্যুতা, রূপকথার উপাখ্যান।

চলন বিল;

অনাবিল সৌন্দর্যের আধারই নও তুমি,

জীবন ও জীবিকার অভয়াশ্রম।

কালে কালে তোমার গড়ছে বসতি জাগছে নতুন ভূমি;

প্রকৃতি বদলায় আর বদলায় মানুষ আদম।

বেঁচে থাকো চিরকাল তোমাকে বড়ই প্রয়োজন।

আমাদের আছো তুমি ঐশ্বর্যময়ী অনন্য বিল;

নামটি তোমার ‘চলন’।

স্বপ্নের সৈকতে

পাহাড়-ঝর্ণা-নদী বহুদূর অবধি অথই সমুদ্রের সীমানা যেখানে

সুদূর দৃশ্যহীন, সেখানেই মিতালি জলে আর আকাশে।

এইখানে ঝাউবনে উদাসী অলসক্ষণে, দখিনা বাতাসে

মুরলী বাজায় কোন বিরহী প্রেমিক; শতব্যথা অভিমানে।

প্রকৃতি জেগে উঠে সাগরের বুকচেরা প্রভাতের আলোতে,

নীলজলে নোনাঢেউ; গাঙচিল খেলা করে জীবনের সৈকতে।

সঙ্খ ঝিনুকের দল আর শান্ত উপলেরা নির্জন উপকূলে;

প্রবালের মায়ারূপ কী যে শোভা অপরূপ; মন রাঙা করে দিলে।

গোধূলির রং মেখে ক্লান্ত সব পাখিরা দলবেঁধে ফিরে যায়-

স্বপ্নের নীড়েতে। সন্ধ্যায় ঝিঁঝিঁরা সমগীতে মুখরিত; যেন অবাধ

প্রেমের গান। শরতের আকাশে মনহারা আবেশে ইতিউতি করে চাঁদ।

বালুতটে ঝিলিমিলি রুপালি আলোর কণা; কার ছবি ভাসে হায়!

উতলা সাগরতীরে সাথীহারা পথিকের পোড়ামন আনমনে

চেয়ে আছে অপলক; যদি সাথী ফিরে আসে এপথেই কোনক্ষণে।

ভয়ার্ত চোখ

কী নিদারুণ বিষণ্ণ চাহনি! মেয়েটির একজোড়া ভয়ার্ত চোখ

সারাক্ষণ চেয়ে থাকে জানালায়। মাঝে মাঝে

মনে হয় একাকিত্ব; হয়তোবা এমনই কোনো অসুখ।

অথবা সুবিচার প্রার্থনায় দিশেহারা; অধিক কাতর সে লাজে।

আমাদের চারপাশে এমন মায়ামুখ সচরাচর দেখা যায়,

কখনো তারা নিজের সর্বনাশের কথা বলে না অন্যের সাথে।

অনিবার্য প্রশ্নের উত্তর খোঁজে নিরালায় অমানিশার রাতে

কিংবা অসময়ে কাঁদে; অন্তর্জগতে জ্বলে হতাশায়।

অধুনা এদেশে আমরা প্রতিনিয়ত সংবাদপত্রে, টেলিভিশনে

আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কী দেখি, শুনি কানে?

যেমন সড়কে, অন্দরে-বন্দরে, ক্যাম্পাসে কোথাও অভয় নাই।

করুণমৃত্যু, পাশবিকতা, দুর্বৃত্তিপনা আরো জঘন্য খবর পাই।

বিংশ শতাব্দী পেরিয়ে এসেছি কবেই একুশ শতকে।

বলো, কবে মোরা সভ্য হবো; গড়বো নিজের দেশকে?

আবার বসন্ত

বসন্ত সমাগত ফুলে ফুলে অবিরত

অলিদের গুঞ্জন, উন্মুখ দেহমন।

কৃষ্ণচূড়ায় যেনো লেগেছে আগুন,

এই বুঝি এসেছে আবার ফাগুন।

ভালোলাগে ফাল্গুন; বসন্ত ভালোবাসি,

ফুলপাখি ভালো লাগে পাহাড় সমুদ্দুর।

ভালো লাগে জোছনায় পূর্ণিমার হাসি;

নদীর ওই কলধ্বনি সবুজের হাতছানি।

বড় ভালো লাগে রাখালি বাঁশির সুরে

উদাস দুপুর আর ঝিলমিল রোদ্দুর।

এমন প্রেমের দাম দিও তুমি একটুখানি;

বসন্ত থেকে যাও আমার আকাশজুড়ে।

ফুলতো ফুটবেই কোকিলেরা গাইবে,

জীবনের যতো বসন্ত স্মৃতি হয়ে থাকবে।

মেঘনার তীরে

কেটেছে দীর্ঘকাল এই মেঘনার তীরে,

যেথা যাই যতো দূরে আমি আসি ফিরে।

এখানেও বারবার উৎসব আসে যায়,

শতরূপে রঙ্গে আরও কত মহিমায়।

পদ্মা-ডাকাতিয়া ছুটিয়া আসিলো তারা

খুঁজে পেলো ঠিকানা; রক্তের স্রোতধারা।

মিলনের আহ্বানে অপরূপ মোহনা

হাতছানি দিয়ে ডাকে এপার-ওপার

আমি যে মুসলিম, বাংলাদেশি আর

চাঁদপুরবাসী ছাড়া অন্য কেউ না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়