প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
আমি বরাবরই একটু চঞ্চল স্বভাবের। লেখালেখির প্রতি ঝোঁক কখনোই ছিল না বললেই চলে। মাঝে মাঝে ছোট ছোট ছন্দ লিখতাম ফোনের নোটপ্যাডে। আবার মুছে ফেলতাম। আমার নিজের সাথে, আশপাশের কারো সাথে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটলে কিংবা কোনো ধরনের খুশির কিছু ঘটলে আমি তা নিয়ে ভাবতে বসে পড়ি এবং টুকটাক লেখার চেষ্টা করি। মূলত নিজের চিন্তাধারা, সুখ-দুঃখ, ভালো লাগা-খারাপ লাগা, মন খারাপ এসব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে কবিতাকে বেছে নিয়েছি। এছাড়া আমার নিজেকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যার সাথে লড়াই করার জন্য এবং নিজেকে সফলভাবে তৈরি করার জন্য অনুপ্রেরণামূলক দুই-একটি লাইন লিখি। যাতে করে একজন মেয়ে হিসেবে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সাহস অন্য কারো কাছে চাইতে না হয়। এভাবেই আমার কবিতা লেখার হাতেখড়ি।
তৃষ্ণা
চারপাশে কত সম্পর্কের হাতছানি
গল্প গুলোর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা,
প্রতিটা সম্পর্কের কত রঙিন কাহিনী ,
অথচ সুখের পথ কি নির্মম বাঁকা।
আমার খোলা আকাশ আর সুতো কাটা ঘুড়ি
লাটাই ছুঁয়ে স্মৃতির দুঃখবিলাস,
আমি সমাজ চেতনায় কুড়িতেই যখন বুড়ি
অবসরে আজ মনে বড্ড হাঁসফাঁস।
কোথায় জলছবিদের আনাগোনা আজ?
কোথায় রঙের মাহাত্ম্য ?
স্মৃতিচারণে গোধূলি রাঙা সাঁঝ,
স্বাধীনতার লোভে জন্ম তৃষ্ণার্ত।
ভেবে দেখেছি গুটি কয়েক প্রহর
নিয়ম মেনে বাড়ছে শুধুই ভয়,
জীবনযাপনের নিয়ম বড্ড জঠর
কত চরিত্র - তবু কেউ কারো নয়।
কামনা
রিক্ততা সব ভুলে গিয়ে সময় যায় পেরিয়ে
নতুন কুঁড়ির শুদ্ধতায় প্রকৃতি পায় প্রাণ,
অবহেলিত গাছের পাতা পঁচে যায় নিশ্চুপ
বছর শেষে পুরোনো দিনপঞ্জিকাও বড্ড বেমানান।
এক এক করে নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি
পুরোনো যাবে, আসবে নতুন নিয়মের যত খেলা,
নীড়ে ফেরার তাড়ায় অনাবিল যে সুখ
পেয়ে হারানো, হারিয়ে পাওয়ায় ফুরিয়ে আসে বেলা।
যন্ত্রণা গুলো ফুল হোক
তীব্র আঘাত গুলো হোক ঝরে পড়া পাপড়ির মতো নিঃশেষ,
কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল গুলোকে রাঙিয়ে দিক সূর্য
ওষ্ঠ জোড়ায় আবার ফুটুক উজ্জ্বল হাসির রেশ।
অদৃশ্য প্রান্তর
কি জানি! কোন তারার আলোয় ভোরের দেখা পাবো
মেঘের সাথে তালমিলিয়ে পাহাড় চূড়ায় যাব,
প্রজাপতির রঙিন ডানায় আঁকবো স্বপ্ন কবে
সন্ধ্যা বেলার তীব্র বাতাস কবে আমার হবে?
কত শত স্বপ্ন দেখা, ছোট্ট জীবন জুড়ে
সবই আবার হারিয়ে ফেলি শত বাধার ভরে,
তবু এগিয়ে চলা হোক সুন্দর কণ্টকাকীর্ণ পথে
পিছুডাকে দিব না সাড়া এই মুহূর্ত হতে।
আমি আকাশ দেখবো, পাহাড় আঁকবো
শুনবো পাখির কিচিরমিচির,
বৃষ্টি হয়ে ঝরবো বাধাহীন ভাবে
যাবো মাটির পথের গভীর।
জংলী টগর এর শুভ্রতায় হার মেনে নেই প্রতিদিন
পথ চলার তীব্র ইচ্ছা তবু হয় না শেষ
পথের ধুলো মেখেই নিচ্ছি শুধুই
পৃথিবীর তরে বেড়েই যাচ্ছে ক্রমশ ঋণ,
জানি সম্ভব নয় এতো কঠিন ইচ্ছাকে করা সহজে রূপান্তর
তবুও আমি হেঁটে যেতে চাই প্রান্তর থেকে প্রান্তর।
প্রজাপতি
পাথর চূড়ায় স্বপ্ন কুড়ায়
রঙিন প্রজাপতি,
শুভ্র মেঘের ডানায় চড়ে
আলোর পথে প্রাপ্তি।
মধ্যরাতে কালো জাহাজে
বোঝাই করা দুঃখ,
ভোরের আলোয় মিলিয়ে যায়
করে অন্ধকার সমাপ্ত।
আলোর খেলায়, আঁধার লুকায়
মেঘ গুলো সব হয় বিলীন ,
আকাশ দেখবো,জোছনা মাখবো
সময় হবে লাগামহীন।
আকাশ, বৃষ্টি,জোছনা আঁকবে
রঙিন ডানার প্রজাপতি,
ফুল গুলো সব করবে প্রকাশ
রঙের প্রতি আসক্তি।
বৃষ্টি আসবে, শহর ভিজবে
রংধনুদের উপত্যকায়,
রঙিন স্বপ্ন বুনবো আবার
হবে প্রজাপতি চিত্রকর।
পরিযায়ী তুমি
তুমি সীমাহীন আকাশ হও, আমি সীমাবদ্ধ হতে চাই।
সকল না পাওয়া আমার হোক,
নতুন সৃষ্টির উল্লাসে ভেসে যাও তুমি।
স্তব্ধতার ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছি সে তো পুরোনো দিনের গান,
অবেলায় তুমি দিও না আর ডাক
রেখো অবহেলার মান।
কত আশা-আকাঙ্খায় চেয়েছি তোমায়
জানার চেষ্টা করো না কোনো দিন ,
আশা রাখি সময় গুলো নিশ্চয়ই চলে যাবে দিব্যি তুমিহীন ।
এইতো অবশেষে তোমাকে হারাই,
বদ্ধ দেয়ালের অন্দর মহলে কাটাই সময়,
শুধু চাই,
তোমার আফসোস হোক থাকতে না পারার এই সীমাবদ্ধতায়।
অবশেষে আমিই মুক্ত,বদ্ধতায় আমি সুখি,
খোলা আকাশে অবাধ চলাফেরায় তুমি অসুখী, ঘর বিমুখী।