বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

লাল মাছের স্মৃতি
তুহিনা আক্তার সাথী

বাবা বাবা বলে চিৎকার করে ডেকে, আট বছর বয়সী মেয়ে রুম্পা দৌড়িয়ে আসলো আলু ক্ষেতে। সদ্য তোলা কিছু নতুন আলু হাতে নিয়ে বাবা বলল, কী রে মা কী হয়েছে? বিলের পুকুর থেকে বড় চাচা খবর দিছে, আমাদের ভাগে যতটা কচুরিপানা পড়েছে, তা আজকেই তোমায় সাফ করতে হবে, না হলে এবার তোমার মাছ ধরা বন্ধ, বলে হাঁপাতে থাকলো রুম্পা। আলুর ডালা বাবার মাথায় তুলে পিছনে হেঁটে রুম্পা বলল, শিগগির চলো বাবা। উঠানের উত্তর দিকের রোদে বসে খেজুর রসের পায়েসের সাথে মুড়ি মেখে খেয়ে, গামছা কাঁধে বিল পুকুরে রওনা হলো রুম্পার বাবা। শেষ বিকাল নাগাদ কচুরিপানা তুলে পানির নিচে কয়েকটা বাঁশের চোঙা ডুবিয়ে রেখে বাড়ি ফিরল সে। সপ্তাহখানেক পর পানি কিছুটা শুকালে শুরু হবে মাছ ধরা ।

বাঁশের খলই নিয়ে রুম্পা বসে আছ, নতুন ঘরের বারান্দায়। মাঠের কাজ শেষ করে বাবা বাড়ি ফিরে, বিলের পুকুরে মাছ ধরতে যাবে। প্রতি বছর মাঘের শেষ দিকে, বাড়ির প্রত্যেকে জাল ফেলে বিলের পুকুরে মাছ ধরে। ঘরে ফিরে কিছু মুড়ি, মোয়া মুখে দিয়ে জাল হাতে বের হলো বাবা। পিছন পিছন রুম্পাও দৌড়ালো। রুম্পার বাবাকে দেখে সকলে চিৎকার করে বলে উঠলো, এসে গেছে মেজ সাহেব! এইবার দেখি, মাছ পালায় কই? বাবা জাল ফেলে, পানিতে নেমে কিছুক্ষণ জালের চারদিকে হাতিয়ে, উপরে উঠে জাল টানলো। রুম্পা হাততালি দিয়ে চিৎকার করে বলল, বাবা লাল মাছ, লাল মাছের বাচ্চা! বাবা জাল থেকে লাল কার্প মাছের পোনাগুলো খলইয়ে দিয়ে বলল, মাকে বলবে, আমাদের নতুন পুকুরে যেন ছেড়ে দেয় মাছের পোনাগুলো। খলই বুকের সাথে চেপে এক দৌড়ে বাড়ি ফিরে মায়ের সাথে মাছগুলো পুকুরে ছেড়ে দিল রুম্পা। নতুন পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে লাল মাছগুলো কি সুন্দর করে খেলতে লাগলো। খলই নিয়ে আবার ফিরে গেল বাবার কাছে সে। পানির নিচের চোঙা তুলে পেল, অনেকগুলো কই, আর শিং মাছের বাচ্চা। সেখান থেকে কিছু শিং মাছের পোনাও নতুন পুকুরে ছেড়ে দিল বাবা । প্রতিদিন রুম্পা পুকুর ঘাটে বসে মাছের বাচ্চাদের খাবার দেয়। পরের বছর লাল মাছের পোনা আরো বেড়েছে পুকুরে । মাঝেমধ্যে বাবা জাল ফেলে নিজের পুকুর থেকে লাল মাছ ধরে।

প্রতি বছর পৌষ মাঘের মাঝামাঝি সময়ে শহর থেকে রুম্পা ছেলে,মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি বেড়াতে আসে। এখানে এসে রুম্পার ছেলে মেয়ে, তার ভাই, বোনের ছেলে মেয়ে সবাই মিলে লাল মাছের বাচ্চা দেখে আনন্দ পায়। বিলের পুকুরে সকলে মিলে জাল ফেলে মাছ ধরে। দশ বছর আগে মাছ ধরার মত সকল আনন্দ মিটিয়ে গত হয়েছে রুম্পার বাবা। বাচ্চাদের সাথে পুকুর ঘাটে এসে চোখের জল ফেলে রুম্পা বলে, বাবা, হয়তো মেয়ের বায়না আর রাখতে পারবে না বলেই, সেদিন বাঁচতে দিয়েছিলে, এই লাল মাছের পোনাগুলোকে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়