বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

উঁকি
আয়েশা সিদ্দিকা

বাড়ির পূর্ব পাশের বড় পুকুর পাড়ের ঘাটে বিকেলবেলা আমিসহ কয়েকজন একসাথে বসে গল্প করছি। কেউ চাচি বয়সের আবার কেউ ছোট বোন। কেউ সিঁড়িতে বসে আছে আবার কেউ বসার বেঞ্চিতে। সে কতো রকম গল্প। কার আগে দাঁত পড়েছে, কে দাঁত পড়ার সময় কীভাবে কান্না করেছে, কে স্কুলে ম্যাথে ফেল করেছে, আবার কে ইংরেজিতে মাত্র পাঁচ পেয়েছে তাই টিচাররা পরের ক্লাসে উঠায়নি। কেউ কেউ নতুন সাঁতার শিখেছে, তাই নিয়ে সে কতো উল্লাস। এইসব গল্প হচ্ছিলো।

ঘাট থেকে কিছুটা দূরে পুকুর পাড়েই বড় একটা আকাশমনি গাছ। গাছে হলুদ রঙের ফুল ফোটা। ফুলগুলো আমাকে আকর্ষিত করছে। ফুল দেখতে বার বার গাছের দিকে তাকাই। গাছের আশপাশে পুকুরের পুরো কিনারা জুড়ে ছিলো অনেক পাটিবেত গাছ। হঠাৎই গাছের দিকে নজর পড়েছে আমার। পাটিবেতের ফাঁকে দুটো চোখ আমার চোখে পড়লো। আকাশমনি গাছে হেলান দিয়ে এদিকে তাকিয়ে আছে একজন। লুকিয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। অন্যরা নিজেদের মতো গল্পে ব্যস্ত। অন্য কেউ দেখতে পাচ্ছে না। আমার পরিচিত চোখ। এ চোখ আমি রান্না ঘরের জানালা দিয়েও বাইরের দিকে দেখেছিলাম আগে একবার। বড্ড মায়ায় ভরা চোখ। আমাকে আটকে রাখছে যেন। চোখের দিকে তাকিয়ে আর কারোর কথা শুনতে পাচ্ছি না। অথচ এক পলক চোখে চোখ পড়ার পরেই সে পালিয়ে যেতে লাগলো। আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম আমি যাকে ভাবছি সে নাকি। আমি সামনে এগিয়ে গাছের দিকে গিয়ে দেখলাম আমার ধারণাই ঠিক। পালানোর সময় পেছন থেকে দেখলাম। সে আর কেউ না, অনিক। আমি অনেক আগে থেকেই পছন্দ করি তাকে। তবে এটা জানি না সে আমাকে পছন্দ করে নাকি। তার আচরণে আমার মনে হতো সে আমাকে অপছন্দ করে। কিন্তু আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো কেনো ওভাবে! এইসহ দুইবার এভাবে লুকিয়ে দেখতে নোটিস করেছি। তবে কী সে ও আমাকে পছন্দ করে! তাকে এভাবে দেখে বেশ খুশি খুশি লাগছে। এই ভাবতে ভাবতে হাতের সাথে লেগে কিছু একটা কাপছে এমনটা মনে হলো। আমি ঘুম ঘুম চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি অনিক ফোন দিচ্ছে। আমি চোখ মুছতে মুছতে সদ্য ঘুম ভাঙা একটু অগুছালো মোটা স্বরে বললাম, ‘আজকে কী হয়েছে জানো?’ ‘কী হয়েছে’। ‘তোমায় দেখি পুকুর পাড়ে আমায় উঁকি দিয়ে দেখছিলা। এটা করেছো কখনো’ অনিকের উত্তর আমাকে অবাক করলো, আর মুগ্ধ ও করলো। অনিক উত্তর দিলো ‘দেখো স্বপ্ন তোমাকে আমার ভালোবাসার গভীরতা বোঝাতে চায়, তবুও তুমি বুঝো না। সম্পর্কে এতো নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও আমি তোমাকেই চাই। দূরে থেকেও সবার আড়ালে থেকে আমি দেখি তোমাকে। তোমার স্বপ্ন এটাই বুঝিয়েছে তোমাকে। শুধু তোমারই মনে হয় আমি পালিয়ে যাই’। আমি হাহা করে হেসে বললাম, ‘আমার জীবনের সব প্রতিবন্ধকতার সমাধান তো তুমি, দেখো স্বপ্নেও তুমি, তারপর ঘুম ভাঙার পরেও তুমি। তোমার দিকে তাকালেই তো মনে হয় সব সমস্যা সমাধান। আর তুমি চলে যবে এরকমটা তো বলি ভয় লাগে তাই। তোমায় হারানোর ভয় আমাকে বড্ড পেইন দেয়।’ ওপাশ থেকে অনিক, ‘আমি হারিয়ে যাবোটা কোথায়? গত তিন বছরে তোমার এবসেন্স এও তো কাউকে ভালো লাগলো না’। আমি বললাম, ‘ভয় পেতে তো দোষ নেই অনিক। হারানোর ভয়ে ভালোবাসা বাড়ে, আর আগলে রাখার ইচ্ছে ও প্রবল হয়’। অনিক বললো, ‘হইছে এবার উঠে ফ্রেশ হও’। ‘আচ্ছা টাটা, রাখছি’। তারপর হঠাৎই ভ্যানের ট্রিং ট্রিং শব্দ কানে শুনতে পাচ্ছি। সবজির ভ্যান হতে পারে। রাস্তার পাশে দোতলায় বাসা। ঘুম চোখে ফোনটা অন করতেই দেখি স্ক্রিনে অনিকের ছবিটা ভেসে উঠলো। ছবি দেখতে দেখতেই কখন জানি ঘুমিয়ে পড়েছি রাতে। আর এখন ভেতরে একটা স্বস্তির অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি খুব খুশি আজকে। অনেক দিন পরে অনিককে বাস্তবের মতো দেখলাম। আবার ফোনে কথাও হলো। আসলে পুরোটাই স্বপ্ন ছিলো। স্বপ্নেই অনিককে জানালাম তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার কথা। তবুও বাস্তবের মতোই সুন্দর, জীবন্ত অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছিলো এইটুকু দেখা আর কথা বলার জন্যই হয়তো থেমে থাকে আমার জীবন, অপেক্ষায় বসে থাকি আমি। নিজেকে হালকা লাগছে খুব। সব আগের মতো মনে হচ্ছে। অথচ অনিকের সাথে দেখা হয়না প্রায় তিন বছর হয়ে গেলো। আমাদের সম্পর্কের সমাপ্তি সেই তিন বছর আগেই। তবুও এ নিরব অপেক্ষা শুধু এইটুকু স্বপ্ন দেখার জন্য। এই প্রত্যাশা নিয়েই ঘুমোতে যাই প্রতি রাতে। এই ভাবতে ভাবতে ফোনের কোণায় তাকিয়ে দেখি আটটা বিশ বেজে গেছে। সারে আটটায় ক্লাস। উঠে পাচ মিনিটে রেডি হয়ে ক্লাসে গেলাম। বাসা থেকে পাচ মিনিট লাগে ক্লাসে যেতে। যতোই ক্লাসে কন্সেন্ট্রেট করার ট্রাই করি না কেনো চোখে সেই উঁকি দেয়া চোখ দুটো ভাসছে। আর কানে বাজছে ‘দূরে থেকেও সবার আড়ালে থেকে আমি দেখি তোমাকে’।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়