প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
আমাদের বিয়ে ঠিক। রাতুল ফোন করে বললো পোশাক আর সাজসজ্জা নিয়ে তোমার চাহিদা লিস্ট পাঠাও। আমি শান্ত গলায় বললাম, এই নিয়ে পরে কথা বলবো। নামাজ পড়ে নিই। রাতুল বললো, এখন রাত ১টা বাজে। এখন কী নামাজ?
আমি বললাম, শোকরিয়া নামাজ। আপনার সাথে আমার বিয়ে হবে শোকরিয়া জানাবো না, তা কি হয়! বিধাতার কাছে আপনাকে চেয়ে কতো রাত মোনাজাতে কেঁদেছি। আজ হাসিমুখেই শোকরিয়া জানাবো। রাতুল মিষ্টি গলায় আচ্ছা রাখো।
ভাবি এসে বললো, তিথি, চুল কীভাবে সাজাবে? কোন্ পার্লারে যাবে ভেবে নাও। আমি বললাম, আর কখনো চুল কাউকেই দেখাবো না এটা তো কবেই থেকে জানেন। নামাজ শেষ করে রাতুলকে বললাম, আপনি একটু দেখা করতে পারবেন? রাতুল বললো, কেনো নয়! আমি বললাম ঠিক সকাল নয়টায়। আমি যথাসময়ে উপস্থিত। রাতুল এসে মুচকি হেসে বললো, লিস্ট এনেছো? আমি বললাম নাহ। কিছু কথা গোপনীয় ছিলো সেটা বলতে এসেছি। রাতুল হো হো করে হেসে বললো, তুমি আবার কথা গোপন রাখো? যেই কথা বলো খই ফুটে। আমি এই প্রথম গভীর দৃষ্টি নিয়ে রাতুলের দিকে তাকিয়ে বললাম, আপনি ভুল বললেন, আপনার সঙ্গ শান্তি লাগে তাই বেশি কথা বলি। রাতুল বললো, তা-ই। বলো।
আমি বললাম, এইবার মূল কথায় আসি। রাতুল মুগ্ধতা নিয়ে বললো, বলো। আমি বললাম, বিয়ের সাজসজ্জার লিস্ট নেই। আপনি লাল শাড়ি কিনবেন। আর মুঠোভর্তি কাচের চুড়ি, বেলি ফুলের মালা আর হিজাব। রাতুল বললো, তুমি শপিংয়ে যাবে না? আমি বললাম, একদমই না। আপনি যা দেন আমার তাই ভালো লাগবে। এই নিয়ে আমার পরিবার কিংবা আমি অভিযোগ করবো না। রাতুল বললো, লেহেঙ্গা পরবেনা? আমি একটু রাগ নিয়ে বললাম, একটু কথা বলতে দিবেন তো। রাতুল বিস্ময়ে বললো, আচ্ছা বলো।
আমি দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে বললাম, আমি আপনাকে পাওয়ার জন্যে বিধাতাকে একটা শপথ করেছিলাম। আমি বলেছিলাম, আমি যদি আপনাকে পাই তাহলে বিয়ে, সংসার নিয়ে আমার অতিরিক্ত চাহিদা থাকবে না। ইসলামিক নিয়ম মেনে বিয়ে এবং সংসার হবে। তাই আমার কোনো চাহিদা নেই। আরো একটা শপথ করেছিলাম, যদি আপনাকে পাই প্রতি বছর তিনটি রোজা রাখবো। আপনি দেনমোহর নিয়ে চিন্তা করবেন না ইসলামে সর্বনিম্ন যতো দেয়া আছে আপনি ততোই দেবেন।
রাতুল চেয়ে থাকলো। শুধু বললো, আমায় এতো ভালোবাসো কেনো? কী আছে আমার? আমি বললাম, কারণ আপনাকে দেখলে যে সুখ অনুভূত হয় তা পৃথিবীর কোথাও পাইনি। আপনাকে আশপাশে থাকলে আমার পৃথিবী ভীষণ শান্তি লাগে তাই। রাতুল শুধু বিস্ময়ে বললো, জীবন নিয়ে তোমার চাহিদা নেই? আমি বললাম, না নেই। আমি বললাম, আপনি আমার চাহিদা। রাতুল বললো, অন্য কেউ এই জায়গায় হলে তুমি কি এই চাহিদাহীন হতে? আমি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম, অন্য কারো সাথে সংসার হবে এইটুকুই তো কখনো ভাবিনি। রাতুল অবাক বিস্ময়ে বললো, প্রতিটি মোনাজাতে আমাকে দোয়া কেনো করো? কারণ আমি জীবনেই সব কিছুই আল্লাহের সন্তুষ্টির ভেতরে রেখেছি।
শোনেন রাতুল সাহেব, আপনি পৃথিবীর একমাত্র মানুষ যাকে দেখার পর আমার মনে হয়েছে ইহকাল ও পরকালে দুটোতে আপনাকেই লাগবে। রাতুল আপনি জানেন, কোনো এক দেখায় আপনাকে গায়ে সবুজ শার্ট ছিলো। আমি ঠিক শুভ্র শরীরে সবুজ শার্টে আপনাকে চালতা ফুলের মতো লাগছিলো। আপনাকে দেখেই আমার যে সুখ অনুভূত হয়েছিলো অর্থ, বিত্ত, উচ্চশিক্ষিত পুরো পৃথিবীর নিকট মূল্যহীন। ঠিক সেদিন থেকে আমি আপনার প্রতি ভীষণ আসক্ত হয়ে পড়েছি। আপনাকে প্রেমেই পড়েই আরো ধার্মিক হয়ে গিয়েছি। এখন পরপুরুষকে চুল, মুখ দেখাতে ভীষণ ভয় হয়। আপনি কি জানেন একটা মেয়ে কখন প্রেমের প্রস্তাব না দিয়ে জীবনসঙ্গী করতে চায়?
নাহ কেনো বলো?
যখন ধর্মভীরু হয় ঠিক তখনই। রাতুল বললো, তুমি আমাকে এতো পবিত্রতায় ভালোবাসো আজ জানলাম। এতোদিন কেনো বলোনি!
তোমার হাত একটু ধরতে পারি? ওহ তুমি তো আমাকে পবিত্রতায় চেয়েছো। আরো সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করি। আমি বিস্ময়ে বললাম, ঠিক এই জন্যে আপনাকে ভালোবেসেছি। আপনার ভদ্রতা, ন¤্রতা আমাকে গভীরভাবে আসক্ত করেছে। পুরো পৃথিবীতে অন্য কোথাও যেমন হোন আমার নিকট পৃথিবীর সেরা ভদ্র পুরুষ।
ঠিক তখনি অ্যালার্ম বেজে উঠলো। উঠে দেখি এটা স্বপ্ন ছিলো। চোখ জলে লাল হয়ে গেলো। নিঃশ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো। টেবিলের উপর রাখা পানি ঢোক ঢোক করে গিলতে থাকলাম।। ঠিক ৫টা বেজেছে। আজানের সুর ভেজে আসছে কিছু কিছু ফ্লার্টে আলো জ্বলছে। খাটে মাথা হেলিয়ে রাতুলের পুরোনো একটা ছবি গুগল ড্রাইভের ভেতর সেভ ছিলো সেটা দেখতে থাকলাম। সব মেসেজ, ছবি ডিলিট এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন শুধু একটা ছবি ভীষণ প্রিয় তা-ই রেখেছি। যখন ভীষণ কান্না পায় ছবিখানা দেখি। পুরোনো সব কথা মনে পড়ছে। বাঁধভাঙ্গা অশ্রু বেয়েই পড়ছে।