প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
আমাদের কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল সৈয়দ সানোয়ার স্যার একজন হাঁপানির রোগী। এজম্যাটিক সমস্যা। রোগ বেড়ে গেলে তিনি হাসপাতালে যান ঠিকই, তবে ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকেন না। চেম্বারের সামনে বসে থাকা রোগীদের সাথে আলাপ করে দেখেন কার সাথে তার সমস্যা হুবহু মিলে যাচ্ছে। তারপর সে রোগী ডাক্তার দেখিয়ে এলে প্রেসক্রিপশন থেকে ঔষধের নামগুলো টুকে নিয়ে ফার্মেসি ঘুরে ঔষধ কিনে বাড়ি চলে যান। ঔষধও যথার্থ পাওয়া গেলো, ডাক্তারের ভিজিটও দেয়া লাগলো না।
জীবন চলার পথে একটু চালাক না হলে কি চলে! ডাক্তারদের যা মোটা অংকের ভিজিট, আর যতো টেস্ট! আঙুল কাটা নিয়ে হাসপাতলে যাবেন, হয়তো পাঁচটি টেস্ট দিয়ে দেবে, যার মাঝে তিনটিই অপ্রাসঙ্গিক। টাকা কামানোর ধান্দা।
পাশের ফ্লাটের মুহিবুর ভাই। যিনি কোট-টাই না পরে অফিসে যান না; তাকে দেখি লুঙ্গি পরে হাসপাতাল থেকে ফিরছে। হাতে এক্স-রে প্লেট, প্রেসক্রিপশন ও ওষুধপত্র।
জানতে চাইলাম, ‘লুঙ্গি পরে কেন?’
বললেন, ‘আর বলবেন না। গরিব মানুষ দেখলে ডাক্তারদের মায়া হয়। ভিজিট কম নেয়। প্রেসক্রিপশনে ছয়টি ঔষধের নাম লিখে জিজ্ঞেস করলো আমি কী করি। বললাম, একটা গার্মেন্টসে কাজ করি। সাথে সাথে দুটি ঔষধের নাম কেটে দিলো।
বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা তাদের কোম্পানির সেলস্ বৃদ্ধির জন্য ডাক্তারদের ফ্রিজ, টিভি, এসি এমনকি নগদ টাকা উপহার দেন। বিনিময়ে চুক্তি হয় রোগীদেরকে তার কোম্পানির ঔষধ সাজেস্ট করতে হবে। যে ঔষধগুলোর উপকারিতা বা অপকারিতা নেই। ডাক্তার মনে হয় আমাকে লুঙ্গি পরা গরিব ভেবে তেমন দুটি ঔষধের নাম কেটে দিয়েছেন।
একদিকে বাঙালি হলো অতি মেধাবী জাতি। সিনট্রম দেখে ডাক্তার যে ঔষধ দেন, তারা তা মনে রেখে অন্যের অসুখে নিজেই ডাক্তার সেজে পরামর্শ দেয়া শুরু করে। যেমন বুক ব্যথা? মনে হয় গ্যাসটিক, এন্টাসিড খান। চোখে-চামড়ায় এলার্জি? এলাট্রল দুই বেলা। পায়ুপথে রক্ত ঝরে? পাইলস্, ডিমোরাইড খেলে পনেরো দিনে সমাধান। মাঝেমাঝে ভাবি ওপেন হার্ট সার্জারিতে ডাক্তার রোগীকে পরিপূর্ণ অজ্ঞান না করলে হয়তো রোগীরা বুক কাটা শিখে এসে আত্মীয়-স্বজনদের সার্জারি করতে ডিসপেন্সারি খুলে বসতো।
আমার বন্ধু আরিফের বাবা একজন দাতব্য চিকিৎসক। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ রোগাক্রান্ত হলে তার সেবা-চিকিৎসায় সুস্থ্য জীবন পায়। হাজিপুর বাজারে তার ফার্মেসি। ফার্মেসির নাম নিরাময় কেন্দ্র, যার সাইনবোর্ডে লেখা, ‘আমি কোন ডাক্তার নই; আমি একজন অভিজ্ঞ রোগী। জীবনে নানান পীড়ায় ভুগিতে ভুগিতে নিজেই এখন ডাক্তার হইয়া গিয়াছি।’