বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

আপত্তি
ক্ষুদীরাম দাস

সোহেলীকে ছেলেপক্ষের লোকজন দেখতে এসেছে। দেখা শেষ হলে যখন ওরা বাড়ি থেকে চলে গেলো বাড়িতে কেনো জানি আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করেছে। ছোট কাকা তার মোবাইলটি পকেট থেকে বের করেই দূরের আত্মীয়স্বজনদের ফোন করতে লাগলো। সোহেলী তো কিছুই বুঝতে পারছে না। ছেলে পক্ষ এই প্রথম এসেছে, আর এসেই তাকে পছন্দ করে ফেলেছে। বিয়েটাও নাকি তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে, পরের মাসের পনের তারিখ। সোহেলী ঘরে গিয়ে ছেলে পক্ষের দেয়া আংটি দেখছিলো। খুবই সুন্দর আংটি; কিন্তু কেনো জানি সোহেলীর আংটি মোটেও ভালো লাগছে না। ছেলে পক্ষ এসেই তাড়াহুড়ো করে বিয়ের জন্যে আংটি পরিয়ে দেয়া, তাড়াতাড়ি বিয়ে ঠিক করে ফেলা, সবই যেন যাদুর মতো মনে হচ্ছে। সোহেলী মোটেও এমনটি আশা করেনি যে, তাড়াতাড়ি বিয়েটা হয়ে যাবে।

সোহেলীরা মোটেও ধনী নয়। আবার অভাবের সংসার সেটাও বলা যাবে না। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার। পরিবারে জনসংখ্যা বেশি বলে টানাটানির সংসার বলা যায়। সোহেলীর বাবা খরচের দিক থেকে খুবই হিসেবী। সে কারণে সংসারটি এখনো টিকে আছে। বেহিসেবী চলা তিনি মোটেও পছন্দ করেন না। হিসেব করে না চললে সংসার এতো দিনে ধ্বংস হয়ে যেতো। পড়াশোনাও মোটেও করা হতো না। একটি টাকাও মন চাইলেই ইচ্ছামতো খরচ করার উপায় নেই। ইচ্ছা মতো টাকা খরচ করে তারাই, যারা অনেক টাকার মালিক-আর তারা মন চাইলেই টাকা খরচ করতে পারে। মন চাইলেই কোনো কিছু করে দেখাতে পারে। গায়ের জামাটা পুরোনো হওয়ার আগেই নতুন আরেকটি জামা গায়ে জড়াতে পারে। তাছাড়া আত্মীয়স্বজনরাও যে খুব ধনী সেটাও নয়। সোহেলীর বাবা আবার দয়ালু ব্যক্তি। মানুষের পাশে দাঁড়াতে ভালোবাসেন। নিজের সংসার চলে টানাটানিতে, অথচ অন্যেরও উপকারের জন্যে টাকা বাঁচিয়ে খরচ করার প্রমাণ মিলেছে অনেকবার।

সোহেলীর মা এজন্যে অনেকবার তার বাবাকে বলেছেন, কিন্তু বেশি সুবিধা করতে পারেন না। কারণ, সোহেলীর মাও অনেক বেশি দয়ালু। সোহেলীদের বাসা থেকে একটু দূরে রিমিদের বাসায়। রিমির মা ঘরে বসে সেলাই মেশিনে কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালান। কম ভাড়ার একটা বাড়িতে একরুমে সবাই মিলে থাকেন। গ্রামের বাড়িতে তাদের তেমন কিছুই নেই। একদিন রিমির মা সোহেলীর মাকে কেঁদে কেঁদে মনের কথা বলেছেন। ব্যাস! হয়ে গেলো ষোলো কলা পূর্ণ। মা তো দুঃখের সাগরে ভেসে গেলেন। তাকে কিছু আর্থিক সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন। সোহেলীর মা কিছু রান্না করলেই বাটিতে ভরে রিমিদের দেয়ার জন্যে চলে যান। কোনো অনুষ্ঠানে সোহেলীর জন্যে কিনলে, তাদের জন্যেও কেনা দরকার। মনে হয় যেন তারাও এই পরিবারেরই লোকজন।

সোহেলীরা ভাই-বোন দু’জন। অভাবের সংসার বলে অতি কষ্টে সোহেলীর পড়াশোনাটা এখনো ধরে রাখতে পেরেছেন। আর সোহেলীর বিয়েটা হয়ে গেলে ভাইয়ের পড়াশোনার জন্যে একটু বেশি খরচ করতে পারবেন বলে চিন্তা করছেন। তাই এতো তাড়াহুড়ো করে বিয়েটা দেয়া। আর এদিকে ছেলে পক্ষ তো এসেই বিয়ের পাকা কথা দিয়ে দিলেন। সুতরাং সোনায় সোহাগা। এখানে আর দেরী করা চলবে না।

সোহেলীর সবচেয়ে বড় দুঃখ সহপাঠীদের সাথে সমানতালে চলতে পারে না। কারণ, ওরা অনেক ধনী। তাই অনেক সময় তাদেরকে এড়িয়ে চলতে চাইলেও সম্ভব হয়ে উঠে না। ওরা ভালো ভালো জামা কাপড় পরে, আর তার পরনে থাকে পুরোনো জামা এটা তার মনে বড় কষ্ট দেয়। তাই অনেক সময় বাবাকে বাধ্য হয়েই জোর করতে হয় নতুন জামার জন্যে। এজন্যে কয়েক সেট নতুন জামা, ভালো মানের লিপস্টিক, আর অন্তত সোনা না হোক ইমিটেশনের হলেও সমস্যা নেই। যাদের সাথে চলাফেরা তাদের সঙ্গে যদি অন্তত তাল মিলিয়ে চলতে গেলে এসব একটু দরকার হয়। সোহেলীর মা কলেজ পর্যন্ত পড়াশোনা না করলেও তিনি এসব জানেন। সোহেলীর বাবা যতোই হিসেবে হোক, সোহেলীকে হাত খরচের জন্যে প্রতিমাসে দুইশত টাকা তার মা দিয়ে থাকে।

সোহেলীর এ সময় বিয়ে করার মোটেও ইচ্ছা নেই। তবুও তাকে বিয়েতে রাজি হতেই হবে। তার ইচ্ছা ছিলো, পড়াশোনাটা অন্তত শেষ করে একটা চাকুরি করে মা বাবাকে সাহায্য করবে। কিন্তু বিয়ের বয়স যে হয়ে গেছে-সেটা তো আর থেমে নেই। সোহেলী তার মাকে অনেক দেখেছে, পরনের শাড়ি ছিঁড়ে গেলেও নিজ হাতে সেলাই করে পরে। একদিন তো রাগ করে সোহেলী মাকে বলেছিলো, আমরা কি এতোই গরীব হয়ে গেলাম যে, তুমি হাতে সেলাই করে শাড়ি পড়তে হবে? সেদিন তার মা বলেছিলো, আমি তো আর বাইরে বের হতে যাই না। কোথাও কি আমি যাই? সুতরাং ঘরে এমন শাড়ি পরলে কোনো সমস্যা নেই। কেউ দেখবেও না। আর তাছাড়া, ছোটবেলায় আমার মাকেও দেখেছি, এভাবে সেলাই করে শাড়ি পড়তে। সুতরাং আমরা পড়লে সমস্যা কোথায়? মায়ের সাথে সোহেলী সেদিন কথায় পারেনি। পরে অবশ্য ভেবেছিলো, তার মা ঠিকই বলেছেন। বুদ্ধিমান স্ত্রীরা এভাবেই সংসারকে বাঁচিয়ে রাখে। এটা যে সংসার বাঁচানোর কৌশল এটা সোহেলী পরিস্কার বুঝতে পারে। তাই অনেক সময় সোহেলীও নতুন পোশাকের জন্যে আব্দার করে না। তবে মনে মনে সোহেলী প্রতিজ্ঞা করেছিলো, বাবা মাকে নতুন জামা কাপড় কিনে দেবে একদিন। কিন্তু সোহেলীর সেই স্বপ্ন আর কোনোদিনও পূরণ হবে না। কারণ, তার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।

(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়