প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
আলোর আলাদা একটা মোহময়তা আছে। আছে স্বচ্ছ করে তোলার অসহমীয় মায়াময় আঙুলের পরশ। ভোরের নিস্তব্ধতা আর অদ্ভুত হালকা অথচ জাগিয়ে তোলার স্নিগ্ধতা নিয়ে যে আলো কথা কয় তার আলাপনের শব্দমালা ছাড়া পৃথিবী অচল।
দিনভর আলোর বদল মনে করিয়ে দেয় মানুষের জীবনের প্রহরগুলো। প্রকৃতি আর মানবজীবন কী অদ্ভুত মিল। কখনো বিকেলের সোনাঝড়া মুগ্ধ হয়ে হয়ে তাকিয়ে থাকার মতোই আলোর মতো জীবনের সবচেয়ে দামী প্রহর চপল পায়ে উঁকি দিয়ে মনে করিয়ে দেয় মেয়ে তুমি ‘মা’।
মা একটা মাত্র শব্দ। জীবনে এ-র অর্থ বুঝতে পারার গভীরতা বা বোধ আমরা মানুষ হিসেবে অনেক কম মানুষ ধারণ করি। আমি নিজে মা হওয়ার পর প্রথম মনে হয়েছিলো, আহারে নিজের মায়ের কতোটা আত্মার অস্তিত্বে অক্ষুণ্ন জায়গা করে নিতে পেরেছি! কতোদিন বোনেরা মিলে হাহা, হিহি, গল্পে ব্যস্ত। এ-র মাঝে ডেকেছে, বিরক্ত লেগেছে। মা হওয়ার পর বুঝেছি মা শুধু শব্দ নয়, মা মানে নিজের শরীরজুড়ে, আত্মার অস্তিত্বে, নিজের সব মায়াবী জালে তুলে আনা নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসা আর বুকের গভীরে চিন চিন করে যে আকুতি আর মায়া তার অপর নাম মা।
মা কি শুধু নয় মাসে হওয়া যায়? আমার তা মনে হয় না। মা হওয়ার জন্য প্রতিটি মুহূর্ত চলে যায়। সন্তান যেনো মায়ের গভীরতম অনুভব। অনুভব প্রকাশ করা যায় না পুরোপুরি। পৃথিবীর কোনো ভাষার সে শব্দমালা নেই! অনুভব শুধু অনুভূতি দিয়ে বুঝতে পারা যায়। ভালোবাসা, মমতা, ঘৃণা, শ্রদ্ধা এসব অনুভব প্রকাশ করতে হয় না। যার জন্যে এ অনুভব তিনি/সে/তারা তা টের পায়। টের পায় নিজের অজান্তেই।
নিজের মা-বাবা, আর নিজে মা হতে গিয়ে বুঝেছি, বাবা-মায়ের কোনো চাওয়া থাকে না সন্তানের কাছে। আমার ক্লাস সেভেনে পড়া ছেলে যখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে ডেকে বলে, মা তাড়াতাড়ি এসো, দেখে যাও কী সুন্দর চাঁদ উঠেছে! আমি অনুভব করি আমি মা হয়েছি। আমার মেয়ে যখন আমার জন্যে বই কিনে আনে আমার সমস্ত সত্তা বলে উঠে তুমি মা হয়েছো।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর মায়াবী, মোহহীন, নিখুঁত, নিখাঁদ সম্পর্কের নাম বাবা-মা। আমাদের দেখে বড় হয় সে। আমার আচরণ, আমার জীবন প্রণালী তার। আমার প্রতিচ্ছবি তাঁকে গড়ে তুলছে। আজকের আমি মানেই আগামীর সে। অতএব, নিজের আয়নাটা পরিষ্কার রাখতে হবে মনে হয়। যে আয়নায় শুধু বাইরের প্রতিবিম্ব নয়, ভিতরের শুদ্ধতা, মানবিকতা আর আসলে চেহারার উন্মেষ প্রকাশ করা যাবে সহজে।
সাইদা আক্তার : সহকারী শিক্ষক, উদয়ন শিশু বিদ্যালয়।