বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

আমাদের মাহমুদ ভাই
পলাশ দে

জীবনের এ পথচলায় যে মানুষগুলোর সান্নিধ্যে স্নেহ ও ভালোবাসা পেয়েছি তাদের মধ্যে সদ্যপ্রয়াত শ্রদ্ধেয় মাহমুদ ভাই একজন। যিনি গত ২২ জুলাই শনিবার মরণঘাতী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। সংস্কৃতিকমনা এ মানুষটির হঠাৎ চলে যাওয়া আমাকে ব্যথিত করেছে খুব। আমার নিজের প্রতি নিজের খুব কষ্ট হচ্ছে এবং একটা অপরাধবোধ নিজেকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে প্রিয় মানুষটি যখন শয্যাগত, একবারের জন্যেও তাকে দেখতে যেতে পারিনি।

মাহমুদ ভাইয়ের সাথে আমার প্রথম পরিচয় তারই ছোট ভাই প্রগতিশীল ও সাংস্কৃতিক সংগঠক, রাজনীতিবিদ শ্রদ্ধেয় জাকির হোসেন মিয়াজী ভাইয়ের মাধ্যমে। যতদূর মনে পরে উদীচী সংগঠনে আমার অভিষেকের প্রারম্ভকালীন সময়ে। মাহমুদ ভাই ও জাকির ভাই আমার দেখা সেরা সহোদরদের উদাহরণ। তারা দুই ভাই বন্ধুসুলভ ছিলেন এবং বন্ধন ছিলো সত্যিই চোখে পড়ার মতো। চিত্রলেখা সিনেমা হলের বিপরীতে (বর্তমানে আধুনিক মার্কেটে রূপান্তরিত) মিয়াজী লাইব্রেরী বুক স্টলে দুই ভাই পর্যায়ক্রমে ব্যবসায়িক কার্য পরিচালনা করতেন। তারা দুই ভাই ছিলেন স্বাধীনচেতা এবং আধুনিকমনা মানুষ। মাহমুদ ভাই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ ছিলেন। প্রায় সাক্ষাতেই সাংগঠনিক বিষয়ভিত্তিক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করতেন তিনি। তার সাথে প্রত্যেক সাক্ষাৎপর্বেই আমি লাল সালাম জানিয়ে হাত বাড়িয়ে বলতাম, বড় ভাই আমি ‘অপরাধী পলাশ’। তিনি অট্টোহাসি দিয়ে বলতেন, আরে আপনি কেনো অপরাধী? আমি প্রতিত্তোরে বলতাম, দেখেন বড় ভাই আমার কথা বলায় বা আমার কার্যে অনেক ভুল হয় আমি জানি তাই তো নিজেকে প্রতিনিয়ত অপরাধী ভাবি। এ কথাগুলো শুনে ভাই শুধু হাসতেন, যা এখনো চোখে ভাসে। তার সৎ পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা আমার চলার পথকে উজ্জীবিত করেছে অনেক।

তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক গুণী মানুষ। একনাগাড়ে সাংবাদিকতা, মঞ্চ অভিনেতা, নির্দেশক ও আবৃত্তিকার। যার মননে ছিলো দেশপ্রেম, ছিলো সাংস্কৃতিক ভাবধারার প্রগতিশীল মানসিকতার বিস্তার। মনে পড়ে আজ, উদীচী চাঁদপুর জেলা সংগঠনের পক্ষ থেকে কক্সবাজার উদীচী সম্মেলনে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক বোদ্ধা ও সংগঠক শংকর সাওজাল রচিত নাটকটি মাহমুদ ভাই নির্দেশনা দিয়েছিলেন। যা পরর্তীতে চাঁদপুর বিজয় মেলা মঞ্চসহ চাঁদপুরের আরো বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে মঞ্চস্থ করা হয়। ওই নাটকে মাহমুদ ভাই নিজেও অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন। যা দর্শকনন্দিত হয়। এখনো মনে আছে আমার, নাটকের একটি দৃশ্যে তিনি গিটার হাতে ডান্স করছিলেন, যা অন্যরকম নৈপুণ্যতা ছড়িয়ে ছিলো নাটকে। আর তখন মনে হয়েছিলো এ যেনো মুম্বাই বলিউডের সুপারস্টার ডিস্কো ডান্সার নায়ক মিঠুন চক্রবর্তী। নাটকের রিহার্সেলের সময়ে ভাই আমাদেরকে বলতেন, মনযোগ সহকারে অভিনয়টা করতে হবে। ভুল হলে বারবার তিনি শোধরে দিতেন। মাঝে মাঝে ভীষণ রকম রেগে যেতেন। যা আজ শুধুই স্মৃতি।

মাহমুদ ভাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুকে) খুব সরব ছিলেন। তার ফেসবুক ওয়ালে তথ্যনির্ভর লেখাসহ জাতীয় ব্যক্তিত্ব ও গুণীজনদের মতবাদ তুলে ধরে পোস্ট দিতেন। তার ফেসবুক আইডির নামটিও আমায় খুব আকৃষ্টি করতো ‘চন্দ্রবিন্দু মাহমুদ’। তিনি সাংগঠনিকভাবে আমাকে খুবই পছন্দ করতেন এবং উৎসাহিত দিতেন। বিশেষ করে মিঠুন ফ্রেন্ডস্ এসোসিয়েশনের বিভিন্ন সময়ের কার্যক্রম নিয়ে আমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে প্রশংসা করতেন। ভাই প্রায় সময়ই বলতেন, মিঠুন চক্রবর্তীকে যদি একবার চাঁদপুরে নিয়ে আসতে পারতেন তবে খুব ভালো হতো সংগঠনের জন্য।

মাহমুদ ভাই আমার থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু তিনি আপনি ছাড়া কখনোই তুমি করে বলতেন না। একজন নিরহংকার মানুষ ছিলেন তিনি। যার বাচনভঙ্গি বা চলাচলে ছিলো সরলতা ও আধুনিক রুচিশীলতা। বেশ কয় বছর অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাস জীবন কাটিয়ে চাঁদপুরে এসে দৈনিক চাঁদপুর পত্রিকায় সম্পাদনা শুরু করেন। যার ধারাবাহিকতায় একসময় চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সদস্য পদ লাভ করেন। অবশ্য এক পর্যায়ে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সদস্য পদটি থেকে কেনো যেনো বাদ পড়ে যান তিনি। উদার মনের মানুষ ছিলেন তিনি। এ বাদ পড়া নিয়ে কোনো অভিযোগ বা প্রতিবাদও করেননি তিনি। কাউকে নিয়ে সমালোচনা করাটা একদম পছন্দ করতেন না তিনি। সৃষ্টিশীলতায় বাস্তববাদি ছিলেন সবসময়।

মাহমুদ ভাইয়ের মৃত্যুতে চাঁদপুরের সৃষ্টিশীল, প্রগতিশীল ও সাংস্কৃতিক জাগরণে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা সত্যিই অপূরণীয়। মৃত্যুর আগপর্যন্ত উদীচী চাঁদপুর জেলার সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন আমাদের সবার প্রিয় মাহমুদ ভাই। বিন¤্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।

পলাশ দে : সভপতি, মিঠুন ফ্রেন্ডস্ এসোসিয়েশন, বাবুরহাট, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়