বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৩, ০০:০০

বিরহ বেদনা বিলাপ
ফরিদুল ইসলাম নির্জন

প্রেম-বিচ্ছেদ, আশা-নিরাশা নিয়ে আমাদের জীবন। সেখানে সুখ-দুঃখ, আনন্দণ্ডবেদনার কত না তরঙ্গ আমাদের ছুঁয়ে যায়। বিশ্বাসঘাতকতা, সংঘাতের পাশাপাশি খুঁজে পাই আস্থা রাখার মতো নির্ভযোগ্য হাত। আমাদের আশপাশের এসব ঘটনা থেকেই জন্ম গল্পগুলোর। চরিত্রগুলোও চেনা-জানা। তবু, তরুণ গল্পকারদের গদ্যশৈলীতে পাঠক পাবেন নতুনের স্বাদ...

বুকের ভেতর অভিমানের বারুদ। যেকোনো সময় বিস্ম্ফোরণ ঘটবে। কোনো জলের করিডোর ভেঙে এই বিস্ফোরণ বন্ধ করতে পারবে না। জয়কে কতদিন বলেছি, 'আমাকে মানুষ মনে হয় না? আমি কি খেলনা পুতুল? রাস্তায় পড়ে থাকা কোনো সিগারেটের শূন্য প্যাকেট?'

এমন কথার শুধু উত্তর, 'সাঈমা আমাকে বোঝার চেষ্টা কর। সময়কে মেনে নাও। বিয়ের আগের জীবন আর পরের জীবন এক নয়।'

বুুঝতে বুঝতে বিয়ের এক বছর পার। দিন যত যায়, তত ব্যস্ততা বাড়ে। টুকরো টুকরো অভিমান এখন বুকের ভেতর পাহাড় গড়েছে। অথচ তাকে পাওয়ার জন্য আমার কত লড়াই ছিল। আমার মা-বাবা বিয়েতে অরাজি ছিল। ঘুমের ওষুধ খেয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে চেয়েছিলাম। জয়কে ছাড়া অন্যকে ভাবা মানে নিশ্চিত মৃত্যু মনে করতাম। ভাগ্য বিধাতার কৃপায় আমি বেঁচে যাই। আমার পাগলামিকে বরণ করে নিতে বাধ্য হয় পরিবার।

বিয়ের আগে সে আমাকে নিয়ে কত ঘুরতে চাইত, ক্যাম্পাসে ক্লাস শেষে আমাকে যেতে দিত চাইত না। সারাক্ষণ পাশাপাশি বসে, চোখে চোখ রেখে কথা বলতে কী যে ভালো লাগত! হৃদয়ের সুখানুভূতিগুলো জেগে উঠত। মনের ভেতর অজানা তোলপাড় কাজ করত। ওর ভয়েসটা সবচেয়ে বেশি ভালো লাগত। মুগ্ধতা নিয়ে শুনতাম তার গাওয়া গান। প্রতি রাতে তার গান শুনতে শুনতে কল্পনায় বিভর হয়ে ঘুমিয়ে যেতাম।

'সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে' আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে গানটি আজ শুনছি আর চোখে বর্ষণ হচ্ছে। সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার, সে আমাকে খুব ব্যস্ততা দেখায়। অথচ অফিসে সে মাস্তি মেরে বেড়ায়। নতুন একটা মেয়ে এসেছে। তার সঙ্গে খুনসুটি, ভালোই আড্ডা মারে আর আমাকে উপদেশ দেয়, 'টিভি, ল্যাপটপ, ট্যাব, স্মার্টফোন আছে। সেগুলো ব্যবহার কর। রান্না করতে ভালো না লাগলে, অনলাইনে অর্ডার করে খেতে পার। তোমাকে তো আর অভাবে রাখিনি।'

এসব জীবন ধারণের জন্য মনের খোরাক কীভাবে মেটাব। ইদানীং যে সমস্যা হচ্ছে, তার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছি। দেরিতে অফিস থেকে ফিরলে, মনে হয় সেই মেয়েটার সঙ্গে আড্ডা মেরে এসেছে। রাতে না খেলে, মনে হয় সেই মেয়েটির সঙ্গে খেয়ে এসেছে।

সেদিন রাতে এসে বলল, 'আমি খেয়ে এসেছি। তুমি খেয়ে নাও।'

আমি বললাম, 'মেয়েটির সঙ্গে খাওয়া হয়েছে। কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি, তার জন্য হৃদয়ে একটুও মায়া নেই।'

'তুমি বেশি বলছ। এবার থাম।'

আমি চিৎকার করে বললাম, 'চাকরি পরিবর্তন করবে। তা না হলে আমাকে পরিবর্তন করে ফেল।'

সেও চিৎকার করে বলল, 'তুমি পাগল হয়ে গেছ। এসব থেকে আমাকে মুক্তি দাও।'

'তোমাকে মুক্তি দিলে পথ সোজা হবে, মেয়েটিকে নিয়ে নতুন সংসার করতে পারবে।' কথাটি বলতেই আমাকে থাপ্পড় মারে। সেই থেকে দু'জনের সরাসরি আর কথা নেই; যা কথা হয় মেসেঞ্জারে।

রাতে একই বেডে শুয়ে থাকি, কেউ কারও সঙ্গে কথা বলি না। মেসেজে বলি, কাল আমার টাকা লাগবে। বালিশের নিচে রেখে দিও। টেবিলে খাবার রান্না আছে, খেয়ে নিও।

সে লেখে, আমার আসতে দেরি হবে। রাতে খেয়ে নিও। কাল বাসায় ফিরব না। অফিসের কাজে বাইরে থাকব।

সবচেয়ে দুঃখজনক সে আমার অভিমানগুলো না ভাঙিয়ে, কথা না বলে অযথা বাড়িয়ে দিচ্ছে। সে যদি বলে, 'সাঈমা খেতে এসো।' আমি তোলপাড় হয়ে যাব তার কাছে। কখনও তা বলেনি। মা-বাবাকে হাউমাউ করে কান্নায় সব বলে দিয়েছি। আমার এমন কান্না কখনও শোনেনি। তারা বলেছে, 'আমি তোকে আগেই বলেছিলাম। ছেলেটি এমন। তুই আমাদের কথা বিশ্বাস করিসনি। সমস্যা নেই। চলে আয় বাসায়। এখানে এসে পরামর্শ করে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিস।'

মা-বাবার কথায় একটু স্বস্তি পেলাম। ভাবলাম সেখানে ফিরে কোনো চাকরি করব। বাকি জীবনটা বিয়ে না করে কাটিয়ে দেব। এভাবে ধুঁকে ধুঁকে না মরে, যতদিন থাকি নিজের মতো করে বাঁচতে শিখব।

সব গুছিয়ে ফেলেছি। একটা চিঠিও লিখলাম। বেডের ওপর রেখে দিলাম। বাসায় তালা দিয়ে বেরুতেই অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন। জানলাম জয় স্ট্রোক করে হাসপাতালে। কথাটি শোনার পর ভেতরটায় একটা টর্নেডো বয়ে যেতে লাগল। দ্রুত হাসপাতালে গেলাম। জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় রইলাম। হাসপাতালে গিয়ে অফিসের কলিগের সঙ্গে পরিচয়। অফিসের সেই মেয়েটি বিবাহিত। স্বামী-স্ত্রী মিলে একসঙ্গে জব করে। আমি কত নোংরা চিন্তা করেছি মেয়েটিকে নিয়ে। অফিসের এক কলিগ বলল, 'আপনার জন্য নেকলেস কিনেছে। সামনের মাসে আপনাকে নিয়ে সিঙ্গাপুর যাবে। সেখানে গিয়ে সারপ্রাইজ দেবে।' আরও অনেক কথা বলছে। শুনতে ভালো লাগছে না। নিজের প্রতি খুব অনুশোচনা হচ্ছে। মনের গহিনে চিন্তা একটাই জয়ের কখন জ্ঞান ফিরবে, নাকি ফিরবে না!

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়