প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩, ০০:০০
খিলগাঁওয়ে কাজ করি। ছুটি পাইনি। তাই বেতনও পাইনি। জমানো ২০০০ টাকা ছিল। রাত পোহালে ইদ। যে করেই হোক নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে হবে। তার আগে ছোট ভাইয়ের জন্য একটা টি-শার্ট কিনলাম। একটা প্যান্ট কিনলাম। নিজের জন্য, মায়ের জন্য কিছুই নেয়া হলো না। ঈদে ডাবল ভাড়া নিয়ে হিসাব কষলাম। রিকশা নিলাম। রেলস্টেশন পর্যন্ত আসলে যানজটে আটকে গেলাম। অনেকক্ষণ বসে আছি। জানতে পারলাম। ছুটতে ঘণ্টা লেগে যেতে পারে। হেঁটেই রওনা দিলাম।
টার্মিনালে পৌঁছতে সাড়ে বারোটা বেজে গেল। দুই মিনিট আগেই লঞ্চ ছেড়ে দিয়েছে। আমরা ক’জন পাঁচশত টাকা দিয়ে ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে লঞ্চে উঠলাম। আমি ছোট দেখে পঞ্চাশ টাকা নিলো। যাই হোক, লঞ্চের কার্নিশে কোনো রকম দুই পা রেখে, একহাত দিয়ে ধরে ঝুলে ঝুলে চাঁদপুর আসলাম। রাত সাড়ে তিনটা। এখানে চাঁদপর টু ফরিদগঞ্জে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া দুইশত টাকা! নিরূপায় হয়ে উঠতে হলো।
অতঃপর চরকুমিরা রাস্তায় নেমে গেলাম। এখান থেকে রিকশা ভাড়া দেড়শ’ টাকা চাচ্ছে! তাই তিন কিলোমিটার ফের হেঁটে চলে আসলাম। চারদিকে ফরসা হয়ে গেছে। হাতের পশম দেখা যায়। বাড়ির ঘাটে মানুষের আনাগোনা। ঈদের আমেজ বোঝাই যাচ্ছে। আহা! কি আনন্দ লাগছে। সকল ক্লান্তি মুছে গেল।
ঘরে ঢুকলে মা আনন্দে জড়িয়ে ধরে। আহা! কি প্রশান্তি। ছোট ভাই, কী আনছেন? বের করে দিলাম। মুখটা ওর ম্লান হয়ে গেল। ও হয়তো আরো ভালো কিছু প্রত্যাশা করছিল। আসলে অতিরিক্ত প্রত্যাশা মানুষকে দুঃখী করে।
ভাইকে দুইশত টাকা বখশিশ দিলাম। তবুও যেন আকাশে কালো মেঘ সরেনি। অথচ মাকে বললাম, মা তোমার জন্য কিছু আনতে পারলাম না। মা আনন্দচিত্তে বলল, আমার কিছু লাগবে না। তুই এসেছিস এটাই আমার ইদ। ভাইয়ের জন্য মনটা খারাপ হলেও মায়ের জন্য মনটা ভালো হয়ে গেল।
মাকে কিছু দিব পকেটে হাত দিলাম। দেখি শুধু একটা পাঁচশত টাকার নোট আছে। কালকে আবার ফিরতে হবে। ভাড়ার টাকা কে দিবে? এই চিন্তায় বুকটা ফেঁটে যায়। তবুও দিয়ে দিলাম মাকে। একটা আনন্দ ও বেদনা নিয়ে গোসল করতে চলে গেলাম।