বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩, ০০:০০

তছলিম হোসেন হাওলাদারকে মনে পড়ে
পলাশ দে

চাঁদপুর শহরের সাহিত্য-সংস্কৃতির আপনজন ও চেনা মুখ, বিশিষ্ট কবি, লেখক ও সংগঠক, চাঁদপুর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি তছলিম হোসেন হাওলাদারের অকাল মৃত্যুতে গভীর শোকাহত। ১৫ মে বিকেল থেকে শুরু করে সারা রাত শুধুই অস্থিরতায় কাটিয়েছি। কারণটা হলো শ্রদ্ধেয় কবি লেখক তছলিম হোসেন হাওলাদারের মৃত্যুবরণ সহজভাবে মেনে নিতে পারিনি। তাকে যতটুকু কাছ থেকে মিশে দেখিছি, তাতে মনে হয়েছে তিনি সবসময় শিশুসুলভ এবং সহজসরল স্বভাবের সৎ মানুষ ছিলেন। তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ, সাংগঠনিকভাবে কাজ করাসহ অনেক স্মৃতি মনের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছে।

মৃত্যু হবে একদিন, চির সত্য ও বাস্তবতা তাই। কিন্তু হঠাৎ করে কিছু মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া বা জীবন্ত আর কখনোই না দেখতে পাওয়া ভাবলেই মনটা ভিষণ অশান্ত হয়ে যায়।

চাঁদপুর শহরের জোরপুকুর পাড়, রেলের প্লাটফর্ম, শহীদ মিনারের পাশের চায়ের দোকানে বসে প্রায়দিনই সন্ধ্যার পরে চায়ের কাপে চুমুক গল্প কথায় হারিয়ে যাওয়া। হ্যাঁ, তবে গল্প কথা হবে, শুধু আর কোনদিনই উপস্থিত থাকবেন না তছলিম হোসেন হাওলাদার। তার মৃত্যুতে চাঁদপুরের সাহিত্য-সংস্কৃতির যে ক্ষতি হলো তা সত্যিই অপূরণীয়।

জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন সৃষ্টিশীল কবি সাহিত্যিক ভাবধারার উদার মহৎ মনের খাঁটি বাঙালি মানুষ।

মৃত্যুর আগপর্যন্ত তার ভাবনায় ছিলো লেখা ও কবিতা গল্প সৃষ্টি করা। চাঁদপুর শহরে অবস্থানকালীন তিনি প্রতিদিন নিজ বাসভবন পুরাণবাজারের জাফরাবাদ থেকে সকাল-বিকেল ছুটে আসতেন শহরের সাহিত্য একাডেমিসহ সাহিত্য সংস্কৃতিমনা বা গড়োনার মানুষের সাথে আড্ডায়।

আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি কবি ইকবাল পারভেজ, খান-ই-আজম, মুহাম্মদ ফরিদ হাসান একত্রে মিলে মিশে আড্ডায়। আমার সত্যিই সুভাগ্য হয়েছে কবি ও লেখক তছলিম হোসেন হাওলাদারের সাথে মিশবার। তিনি প্রায় আমার বাবার বয়সী। কিন্তু খুব বন্ধুসুলভভাবেই ওনার কাছ থেকে স্নেহ আদর-মমতাণ্ডভালোবাসা পেয়েছি। তিনি সব সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সজাগ থাকতেন। ফেসবুকে কিছু শেয়ার করা মাত্রই তা তিনি কমেন্ট বা লাইক দিতেন। তার মনের ভিতর তারণ্য ও সৃষ্টি ময় কাজ করতো। প্রায় সময়ই তিনি বাবুরহাট আসতেন আড্ডা দেবার জন্য। বিশেষ করে আমি ও কবি ও লেখক মোখলেছুর রহমান ভুঁইয়ার সাথে দেখা করে আমায় ডাকতেন। অনেক গল্প কথা হতো, যা আজ শুধুই স্মৃতি।

আমার এক আত্মীয় ও বন্ধু বিপ্লব দে হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা বাজারে ব্যবসা করতেন তিনি বর্তমানে মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত, তো তার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে প্রায়ই যেতাম বাকিলা, তো হঠাৎ একদিন কবি ও লেখক শাহমুব জুয়েলসহ তছলিম হোসেন হাওলাদার ভাই বাকিলার কফি হাউজে কপি খাচ্ছেন, এমন সময় আমি ও বিপ্লব দা কফি খাওয়ার জন্য দোকানে প্রবেশ করতেই আমাকে দেখে সব সমযের সেই মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, আরে পলাশ দে, এখানে কি কফি খাওয়ার জন্য আসা হইছে...? তার পর কিছু সময় বাকিলা কফির দোকানে চাঁদপুর শহরের সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলে এক পর্যায়ে বিপ্লব দার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আবার দেখা হবে বলে বিদায় নিয়ে যার যার স্থানে চলে আসলাম!

গীতিকবি মোখলেসুর রহমান মুকুল, আমি ওনাকে কাকু বলে ডাকতাম। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন। প্রায় প্রতিদিন চাঁদপুর স্টেডিয়ামের পাশে বাসায় মুকুল কাকুর খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য যেতাম, কখনো কখনো মুকুল কাকু ও আমাকে ডেকে নিতেন। একদিন কবি ও লেখক তছলিম হোসেন হাওলাদারসহ জোর পুকুর পাড়স্থ কবি ও লেখক লিটনের কম্পিউটার দোকানে গল্প করছি, এক সময় মোবাইলে কল বেজে উঠলো, পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি মুকুল কাকুর ফোন। ফোন রিসিভ করে তাঁর কথা শুনে আমি বললাম, কাকু আমি চাঁদপুরে আছি, এখন লিটনের দোকানে কবি ও লেখক তছলিম ভাইয়ের সাথে কথা বলছি। তবে বাবুরহাট যাওয়ার পথে আপনার সাথে দেখা করে যাবো।

মোবাইলে কথা বলে শেষ করতেই তছলিম হোসেন হাওলাদার আমাকে বললেন, মোখলেসুর রহমান মুকুল ভাই এখন কী অবস্থায় আছেন। ওনি খুব ভালো লেখেন। আমি একদিন সময় করে দেখা করবো। উত্তরে আমি বললাম, যাবেন অবশ্যই। এর কিছুদিন পরে তছলিম হোসেন হাওলাদার একটি গল্পের বই বেড় করবেন। তখন তিনি আমায় বললেন যে, বইটি আমার বেড় হচ্ছে এই বইটি আমি উৎসর্গ করবো শ্রদ্ধেয় মোখলেসুর রহমান মুকুল ভাইকে। তিনি তাই করলেন। বইটি নিয়ে শ্রদ্ধেয় তছলিম ভাইসহ মোখলেসুর রহমান মুকুল কাকুর বাসায় গিয়ে তাঁর হাতে পৌঁছে দিয়ে আসলাম। সেদিন অসুস্থ গীতিকবি ও লেখক মোখলেসুর রহমান মুকুল খুব খুশি হয়েছিলেন এবং দুজনেই কেঁদে ফেলেছিলেন। তখন মুকুল কাকু বিচানায়, উঠে বসতেই পারতেন না। সেই সময় আমাদেরও দুচোখ গড়িয়ে জল পরছিলো।তছলিম ভাই আমাদের বলেছিলেন একজন সৎ মানুষ ও গীতিকবিকে আমার লেখা বই উৎসর্গ করতে পেরে আমি ভীষণভাবে খুশি। আজ দুজনই আমাদের শ্রদ্ধা ভালোবাসার বন্ধন ছেড়ে চিরবিদায় নিয়ে চলে গেলেন না-ফেরার দেশে।

তছলিম ভাইয়ের সাথে আমার শেষ দেখা ও কথা হয় তা হলো প্রয়াত মোখলেসুর রহমান মুকুলের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মিঠুন ফ্রেন্ডস্ এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ২য় বার স্মরণ সভা আয়োজন করা নিয়ে। তছলিম ভাইয়ের আন্তরিক পরামর্শ ও সহযোগিতায় গীতিকবি মোখলেসুর রহমান মুকুল চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমি কার্যালয়ে প্রথম স্মরণ সভা করেছিলাম। মৃত্যুর ১ বছর পর ও চাঁদপুর সাহিত্য পরিষদ ও মিঠুন ফ্রেন্ডস্ এসোসিয়েশন যৌথ উদ্যোগে স্মরণ সভা করবো। শ্রদ্ধেয় তছলিম ভাই প্রতিটি মুহূর্তের ভালো উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য উৎসাহ ও প্রেরনা দিয়ে সব সময় পাশে থাকার জন্য চেষ্টা করতেন। কিন্তু শ্রদ্ধেয় তছলিম ভাইয়ের উপস্থিতিতে গীতিকবি শ্রদ্ধেয় মোখলেসুর রহমান মুকুলের স্মরণ সভা আয়োজন তাঁর জীবদ্দশায় তা আর হলো না, বরং তাঁর মৃত্যু বরণে স্মরণ সভা করার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

সৃষ্টিশীল মানুষের মৃত্যু নেই, তাঁরা বেঁচে থাকবেন প্রতিজন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ভাবধারার মানুষের মনের গভীরে শত শত বছর...। স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। বিদেহী আত্মার চির শান্তি কামনা করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়