প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৩, ০০:০০
জীবনের গল্প
গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে পড়াশোনা চালানো কঠিনই ছিলো ছেলেটির। বারবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে পড়াশোনা বারবারই হুমকির মুখে পড়ে। তখন আমি তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। নতুন চর জাগার কারণে বাসস্থান পরিবর্তন, কিন্তু সেখানে তেমন কোনো বিদ্যাপীঠ ছিলো না বললেই চলে। তাই তখনই পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার রাস্তা তৈরি হলো। নতুন চরে বাসস্থান হওয়ায় সেখানে গ্রামের মক্তবই ছিলো। যেটুকু ছিলো শুধু ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া আর অন্য শিক্ষা ছিলো না। গ্রামের যারাই পড়াশোনা করেছে তারাই অন্য স্থানের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থেকেই শিক্ষাগ্রহণ করতে হয়েছে। পড়াশোনা মনে হয় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো-সেটি যখন ছেলেটি বুঝে গেলো তখন কখনও বাবার মুদি দোকান আবার কখনও নদীর পাড়ে একা একা বসেই সময় কাটাতো। কিন্তু সময় কি আর শেষ মন যে পড়ে আছে বিদ্যাপীঠে। বাবা-মা ও পরিবারের অন্যরা বিষয়টি বুঝতে বাকি রইলো না যে কী কারণে ছেলেটির মন খারাপ থাকে।
|আরো খবর
এর কয়েকদিন পর ছেলেটির ফুফু তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। তিনিও বিষয়টি অবলোকন করলেন। এক পর্যায়ে বলে বসলেন, আমি তাকে নিয়ে পড়াশোনা করাবো। যেই কথা, সেই কাজ। শুরু চতুর্থ শ্রেণি থেকেই লজিং মাস্টারের কাজ। তবে সুখের বিষয় হলো পড়াশোনা তো হবে। বাবা ব্যবসার কাজে যখন যেতো তখন দেখা হতো এবং মাসের হাত খরচের টাকা ফুফুর কাছে দিয়ে আসতো। কোনো বাবার সেই স্নেহমাখা মুখটি দেখতে পেতাম আবার কোনোদিন দেখতে পেতাম না। স্কুলে যাওয়ার সময় ফুফাতো ভাই দেলোয়ারও আমার সাথে যেতো। সাথে যেতো অন্য সহপাঠীরা। সকালে স্কুলে যাওয়ার পূর্বেই কোনোদিন পান্তা ভাত ও আবার কোনোদিন রুটি খাওয়া হতো। কিন্তু কষ্টটি ছিলো অন্য জায়গায়। ফুফুর পরিবারটি ছিলো কৃষকের পরিবার। তাই গোয়ালে গরু, কৃষিকাজেই জীবিকা নির্বাহ হতো। ফুফুর গোয়ালে অনেক গরু ছিলো। বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে ফুফুর নির্দেশ ছিলো যেহেতু তোমরা স্কুলে ওই পথ দিয়ে যাবে বই-খাতা ও সাথে গরুগুলো ক্ষেতে বেঁধে দিয়ে স্কুলে যাবে। তাই ফুফুর নির্দেশমতো ফুফাতো ভাইসহ সেই কাজটি রুটিনে পরিণত হয়েছিলো।
স্কুলের সময় ছিলো সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। মাঝখানে বিরতি ছিলো। বন্ধুদের সাথে বিরতির সময় সবসময় বের হওয়া যেতো না। কারণ বাবা এক সপ্তাহ বা এক মাসের টাকা ফুফুর কাছে দিয়ে যেতো। তখন দোয়েলের ছবি-সম্বলিত দুই টাকার নোটের প্রচলন ছিলো। বাবা ছেলেকে খুশি করার জন্যে দুই টাকা নোটের বান্ডেল দিয়ে যেতেন। কত টাকা খরচের জন্যে দিয়ে যেতো সেটা শুধু ফুফু আর বাবাই জানতো। কখনও এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে বাবা বলতো তোমার ফুফু যা দিবে সেটাই। আর ফুফু আমাকে প্রতিদিন দুই টাকার একটি নতুন নোট দিতো। সে সময় দুই টাকায় অনেক কিছুই পাওয়া যেতো। তবে যেদিন বিরতির সময় কিছু খাওয়া হতো না সেদিনের টাকা পকেটে থেকে সেই টাকা বাড়িতে এসে বইয়ে মলাটে রেখে দিতাম। আর খাতা, কলম বা ব্যবহারের অন্যান্য জিনিসের জন্য বাবার বেয়াই সম্পর্কে একজন বলে গেছে। আমার যখন যেটা প্রয়োজন হতো তখন সেটা সেখান থেকে নিয়ে যেতাম। কষ্টের বিষয় ছিলো বিকেলে স্কুল ছুটি শেষে বাড়ি ফেরার পথে মাঠ থেকে গরুগুলো নিয়ে যেতে হবে। তখন ফুফাতো ভাইসহ স্কুল থেকে যাওয়ার পথে মাঠের গরু নিয়ে যেতাম। আরও কষ্ট লাগতো যাওয়ার পথে গরুর সাথে গরুর খাদ্য (মাস কলাই) সাথে নিতে হবে। এক হাতে বই অন্য হাতে কঞ্চি আর মাথায় গরুর খাদ্য হিসেবে কলাই। এ নিদারুণ কষ্টের কথা কাউকে কখনও বলা হয়নি।
বাসায় ফিরে গরুগুলো গোয়ালে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতাম। ক্ষিদেটা এতো পরিমাণ জমা হতো তখন সামনে যা আসতো তাই যেনো অমৃত হয়ে পেটে চলে যেতো।
বিকেলে পড়া টেবিলে ফুফাতো ভাই আর আমি পড়তে বসতাম। সে আমার চেয়ে এক ক্লাসের ছোট ছিলো। তাই অঘোষিতভাবেই তাকে পড়ানোর দায়িত্ব আমার উপর পরলো। এভাবে চলতে থাকে দিন, মাস ও বছর।
রাতে ফুফাতো ভাইসহ একটি আলাদা ঘরে ঘুমাতে হতো। কখনও কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যেতো। এতটুকু বয়সে একা ঘুমানোর কষ্টটা তখনই বুঝতে পারতাম। যে বয়সে ছেলে-মেয়েরা বাবা-মায়ের খুব কাছে থাকে সেই বয়সে থাকতে হয়েছে লজিং মাস্টার হয়ে।
কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে মাঝরাতে ভয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলেও সারাদিনের কর্মযজ্ঞের কারণে কখন যে আবার ঘুমিয়ে পরতাম সেটা বুঝতেও পারতাম না। ভোর হতে মুরগির ডাকে ঘুম ভাঙ্গতো বা কখনও ফুফু এসে ঘুম থেকে উঠাতো। চোখে আদো আদো ঘুম নিয়ে উঠে পরতাম। মক্তবে যেতে হবে আরবি পড়ার জন্যে। তখন গ্রামের মসজিদের ইমামের দায়িত্ব ছিলো গ্রামের সকল ছেলেমেয়েকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করা। ইমামগণও ছেলেমেয়েদের সেভাবেই গড়ে তুলতো। আরবি পড়ার সাথে নামাজ, সূরা ইত্যাদি বিষয়ে সঠিকভাবে তালিম দিতেন। সেখানে একজন ছাত্রদের মধ্যে একজন সেগুলো পড়তো বাকিরা তাকে অনুসরণ করতো। সেই যে শেখানো তা আর ভুলে যায়নি কেউ। ইমামের প্রিয় ছাত্র ছিলাম সবসময়ই। প্রিয় ছাত্র শুধু গ্রামের মক্তবের ইমামেরই নয়, প্রিয় ছাত্র ছিলাম বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের।
মাঝে মাঝে শারীরিক অসুস্থতায় যখন পড়তাম মনে হতো পৃথিবীতে আমি সবচে অসহায় এক মানুষ। একবার মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ি। বিছানা থেকে উঠতে পারছি না। কোমরের ব্যথা ও জ্বর মনে হয় যেনো এই বুঝি জীবনপ্রদীপ নিভে যাবে। নিভে যাবে জীবনের শেষ স্বপ্নটিও। বাবা আসতে আরো এক সপ্তাহ। তখন যোগাযোগের মাধ্যমে ছিলো একমাত্র চিঠি লেখা। রাতে ঘুমের ঘুরে অসুস্থ শরীরে বাবা-মাকে স্বপ্নে দেখি। বাবা-মা শিহরের পাশে দাঁড়িয়ে বলছে তোমার কিছুই হয়নি। আমি নিরবে চোখের পানি ফেলছি। চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বিছানায় কখন যে আবার ঘুমিয়ে পড়েছি বুুঝতে পারিনি।
সকালে ঘুম উঠে আর বিছানা ছাড়তে পারছি না। এই বুঝি শেষ হলো শেষ নিঃশ্বাসটি। ফুফুকে বললাম বাড়ি যাবো। যেই কথা সেই কাজ। ফুফুর বাড়ি থেকে যেতে তিনটি বিশাল নদী ও চর পেরিয়ে যেতে হয়। তখন সেখানে রিকশা-বাস-কিংবা অন্য কোনো যানবাহনের প্রচলন ছিলো না। যানবাহন বলতে ছিলো দূরের মালামাল পরিবহনের জন্যে মানুষের চালিত ঠেলাগাড়ি। মনে মনে ভাবলাম ইশ ঠেলাগাড়িটি দিয়ে যদি আমাকে দিয়ে আসতো। কিন্তু সেটাতো আর সম্ভব নয়। একটি ঠেলাাগাড়ি চারজন মিলে চালাতো। সামনে একজন এবং পেছনে তিনজন থাকতো। যখন মালামাল বোঝাই করতো তখন তাদের অনেক কষ্ট হতো ইহা ঠেলে নিতে। মনে মনে ভাবতাম এরা এতো কষ্ট কেনো করে-জীবিকার জন্যেই। আমার পঠিত সকল বইয়ের সাথে প্রাত্যহিক সকল কাজের একটা মেল বন্ধন ছিলো। যা পড়ানো হতো বাস্তব জীবনে তাই দেখতাম। আর সেজন্যই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা মনে রাখতে সহজ হতো। জীবনের সাথে মিলে গিয়েছিলো-আষাঢ়ে, তালগাছ, ঠেলাগাড়ি ইত্যাদি কবিতার চরণ। যাক শরীর অসুস্থ হলে কি হবে বাড়ি আমাকে যেতেই হবে। ফুফুর বাসা ছিলো মাঝিকান্দি, সেখান থেকে আলমশাহের বাজার। আলমশার বাজার থেকে নদী পাড় হতে হবে। নদীর কাছে গিয়ে গাছতলায় বসে পড়লাম। হিমশীতল ঝিরঝির বাতাসে গা জুড়িয়ে গেলো। নৌকা নিয়ে মাঝি চলে আসলো। অর্ধনিমগ্ন একটি নৌকায় মাঝি লগ্গি দিয়ে একপাশে ঠেলা দিতে দিতে নৌকা ওপারে নিয়ে যেতো। নদীর ওপারে যখন নৌকা ভেড়ানো হতো অনেকেই ভাড়া না দিয়ে চলে যেতো। কেউ ৫০ পয়সা ভাড়া দিতো আবার কেউ দিতো না। মাঝি জিজ্ঞেস করলাম আপনি অন্যদের কাছ থেকে ভাড়া নিলেন না কেনো। তখন মাঝি বললো আমি তাদের কাছ থেকে মাসে ধান বা চাউল নিয়ে থাকি, আবার কেউ কেউ মাসিক হিসাবে ভাড়া দিতো। এপার-ওপার এভাবেই মাঝি নৌকা চালাতো। কে নদী পার হতো আর কে নদী পার হতো সেটি তার হিসাব রাখার প্রয়োজন হতো না। কারণ তখন মানুষ ছিলো সহজ-সরল। কেউ কাউকে ঠকাবে সেটি তাদের মনে হতো না। মাঝি তার আপন মনে নৌকা চালাতো।
যাক নদী পার হয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম যেতে হবে আপন গন্তব্যে কখন বাড়ি ফিরবো মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমাবো সেটি মনে মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে আর পারছি না। হাতে নিজের পরিধেয় কাপড়ের একটি ছোট্ট ব্যাগ সেটি তখন অনেক বড় বোঝা মনে হলো। মনে মনে ভাবতাম এটি না নিয়ে ফেলে দেই-না আবার ভাবলাম এগুলোতো আমার বাবার কষ্টের টাকায় কেনা। পায়ে রূপসা পাচশ’ সত্তর (৫৭০) জুতা সেটি মনে হয় তখন দামি আমার কাছে।
অসুস্থ শরীরে হাঁটতে থাকলাম পথে কোনো পথিককে জিজ্ঞেস করলাম না আর কতটুকু পথ হাঁটতে হবে। কারণ স্কুল ছুটি থাকলে এ পথে বহুবার বাড়ি গিয়েছি। ক্লান্ত পথিক যেভাবে গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নেয় ঠিক সেভাবেই ছায়া ঘেরা একটি বটগাছের নিচে বসে পড়লাম। শরীরে আর হাঁটা শক্তিটুকু নেই। একদিকে অসুস্থ ক্লান্ত শরীর আর অন্য দিকে পানির পিপাসা। ওই দূরে মসজিদের একটি নলকুপ দেখা গেলো সেখানে গিয়ে তৃষ্ণা মেটানো হলো। আবার হাঁটতে হবে অনেক দূর যেতে হবে মায়ের সেই আদর মাখা মুখটি দেখতে হবে। আর উঠতে পারছিলাম না। দেহে শক্তি না থাকলেও মনে জোর ছিলো আমি বাড়ি পৌঁছাবোই। ধীরে ধীরে উঠে আবার হাটতে শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম আবার খেয়াঘাটে। সেখানে বসে আবার বিশ্রাম নিলাম কারণ মাঝি নৌকা নিয়ে ওপাড়ে ছিলো এই পাড়ে হয়ত সময় লাগবে। এদিকে পেটেও খিদে পেলো। কিন্তু খাবো কি করে পেটে যে খাবার যাবে না সেটা আগে থেকেই সিগন্যাল পেলাম। তাই পকেটে টাকা থাকা সত্ত্বেও কিছু খেতে মন চাইলো না। খেয়া নৌকা এসে পরেছে যারা ওপাড়ে যাবেন তারা সবাই উঠে পরলো। এবার মাঝি নৌকা ছাড়লেন অন্য পাড়ে নেয়ার জন্য। নৌকা যখন অন্য পাড়ে গিয়ে ভিড়লেন আবার সেই আগের মতো অনেকেই ভাড়া না দিয়ে চলে গেলেন কারণ তারা মাসিক হিসেবে নৌকার ভাড়া দেন।
এবার হাঁটতে হবে কাশবনের মাঝখান দিয়ে একমাত্র চলাচলে পথ ধরে। এ পথে যখনই যেতাম মনে মনে ভয় কাজ করতো। তাই নৌকা থাকা অবস্থায় আগে ঠিক করতমা কোন পথিক পথের শেষ প্রান্তে যাবে তার সাথেই হাঁটতে হবে। কাশবনের মাঝদিয়ে মেঠোপথে হাঁটা যে কি কষ্টের সেটি শুধু ভুক্তভোগিই জানে। ভ্যাপসা গরম মাঝে মাঝে কাশফুল এসে নাক-মুখে আলতো পরশ দিয়ে যেতো। কয়েক মাইল হেঁটে আবার নদী পাড়ে চলে এলাম কারণ সেখানে দিনে দুইবার নৌকা ছাড়তো। একটি নৌকা ছাড়তো সকাল ১১টায় আবার অন্যটি ছাড়তো বিকেল চারটায়। এই দুই সময়ে যারা নৌকা পেতে তারাই ওপাড়ে যেতে পারতো না কোনো আত্মীয় কিংবা স্বজনের বাসায় রাত্রিযাপন করতে হতো।
চারটা নৌকা ছাড়লো। এবার ইঞ্জিন চালিত নৌকা বিশাল পদ্মা নদীর পাড় হয়ে মেঘনার প্রান্তে যেতে হবে। ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়েও প্রায় ১ ঘণ্টা সময় লাগবে। এই একটি ঘন্টা যেনো আর ফুরায় না। শরীরের শক্তি বলতে আর নেই। নৌকার একপাশে চুপ করে বসে রইলাম। নৌকার মাঝি ছিলো মামা সম্পর্কের তাই আমার কাছে ভাড়া রাখতো না। চুপ করে বসে থাকার কারণে মামা গায়ে হাত দিয়ে দেখলেন অসুস্থ কিনা। মামা অবাক বললো মামু তোমার গায়েতো অনেক জ্বর একা কিভাবে আসলে এতো পথ হেঁটে। অবশেষে নৌকা তীরে ভেড়ানো পর নেমে পরলাম। ভাবলাম এবার যদি মরেও যাই তাহলে মায়ের কোলে মাথা রেখে মরতে পারবো। হাঁটতে থাকলাম দ্রুতলয়ে কারণ মনে এই বুঝি মায়ের স্নেহমাখা মুখটি দেখবো। যখনই কোনো ছুটিতে বাড়ি যেতাম মা দেখতাম পথে এগিয়ে আসছে। মায়ের মন কোনো না কোনোভাবে জেনে যেতে তার হতভাগ্য সন্তান বাড়ি আসছে।
কিন্তু এবারতো মা এলো না। হৃদয়ে বোবা কান্না চলছে। মা কি এবার বুঝতে পারেনি সন্তান অসুস্থ শরীর নিয়ে বাড়ি আসছে। হাঁটতে হাঁটতে যতোই বাড়ির কাছে ছুঁটছি যতো ভেতরের কান্নার চাপ বাড়তে থাকলো। দূর থেকে মায়ের প্রতিচ্ছবি দেখা গেলো। মা তাকিয়ে আছে ওই বুঝি তার সন্তান বাড়ি এলো। মা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বুজতে পারলো সত্যিইতো মনে হয় এটাও বুজতে পারলো তাঁর সন্তান ভালো নেই। দৌঁড়ে ছুটে এলেন আর অন্যদিকে ক্লান্ত দেহে ছুটে আসা বহুদূরে পথ মাড়িয়ে আর চলতে চাইলো না পা দুটো। মা এসে তাঁর সন্তান বুকে তুলে নিলেন। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে, দাঁড়াতেও কষ্ট হচ্ছে। কোনো মতে চৌকির বাড়ি নিয়ে চৌকির ওপর শোয়ালেন। আর সন্তানের দুচোখ বেয়ে হৃদয়ে জামানো কান্না গড়িয়ে পরছে। মায়ের চোখেও পানি তার সন্তানের অবস্থা এতো খারাপ, কিন্তু যত্ন করার জন্যে ছিলো না। চোখের কোনে গড়িয়ে পড়া অশ্রু আর মনের ভাব এ রকম হলো-তখন রবীন্দ্রনাথে সেই ছুটি গল্পটির শেষ চরণটি মনে ভেসে উঠলো-মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে। আমি এখন বাড়ি যাচ্ছি।...