বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩, ০০:০০

সন্ধ্যাবেলায়
অনলাইন ডেস্ক

বিষণ্ন আকাশে যখন বারিষ ঝরে পোড়ামাটির ভেজা গন্ধে তখন হৃদয় উদ্বেলিত হয়। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, তবুও কি সাধ্য আছে তার এই মাটিকে পুড়তে না দেওয়ার? পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হওয়ার জন্যই যেন পৃথিবীতে এত মায়া। পারস্পরিক মায়া! এত মায়া তবে কেন এত পোড়ায়?

সূচিতার হাতের আঙুলের সঙ্গে মেঘদূতের আঙুলের নিবিড় আলাপন। মেঘদূতের কাঁধের ওপর সূচিতার হেলানো মাথা। হেমন্তের শেষ বিকেলে শীতলাসিক্ত পেলব নরম ঘাসের ওপর পা ছড়িয়ে বসে নদীর ওপাড়ে লালিমা সাজানো পশ্চিম আকাশের দিকে মুখ করে বসে আছে তারা। দল বেঁধে পাখিদের ঘরে ফেরার তাড়া। নদীর ওপারের ওই দূর সোনালি ধানক্ষেতের আল ধরে রাখাল বালকের গরু নিয়ে ফেরা। ফেরার জন্যই যেন এই জীবন!

মেঘদূত বলে, আমরা কি চেয়েছিলাম কখনও এই মাটি পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হোক? কষ্টের আঁচড়ে হৃদয় জমিন ক্ষত হোক- এটি কে-ই বা চায় বলো। এই পোড়ামাটি সে তো এই দগ্ধ হৃদয়ের জমিন। এই সবুজ ভূমি, কাকচক্ষু জল, নীলে-লালে মাখামাখি আকাশ, এসবই তো সাক্ষী রইল আমাদের ভালোবাসার। তবু এখান থেকে গিয়ে আমাদেরও ফিরতে হবে। ভিন্ন পথে ভিন্ন বাঁকে আমাদের ফেরা হবে।

এই ফেরাই শেষ ফেরা নয়- সূচিতা বলে। ফেরা তো তখন হবে, যখন আজকের এই দিনটির মতো জীবনের কোনো এক গোধূলি বেলায় আমরা ফিরে আসব আমাদের জীবনের মোহনায়। আমি সেই ফেরার অপেক্ষায় থাকব। তোমার অপেক্ষায়।

মেঘদূত বলে, আমিও থাকব তোমারই অপেক্ষায়।

মেঘদূতের বুকের আরও কাছাকাছি সরে আসে সূচিতা। চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, তোমাকে পেয়েছিলাম স্বপ্নের আঙিনায়। অতঃপর কঠিন বাস্তবতায়। আর পেয়েছি বলেই জেনেছি, তোমাকে পাওয়ার আরও ঢের বাকি আছে আমার। এ এক প্রবল তৃষষ্ণা! অথচ পই পই করে আমিতো তোমারই। যাকে পাওয়ার পর আরও বেশি করে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগায় মনে, সেই তো আমার প্রেম। পেয়েছি বলেই রক্ষা করে চলি আপ্রাণ। কখনও এই আকাঙ্ক্ষা অবসান হওয়ার নয়। সূচিতার দীর্ঘশ্বাসকে মুঠিতে ভরে নিয়ে ভালোবাসার টিকা আঁকে মেঘদূত। বলে, কখনও নিরাশাকে ঠাঁই দিওনা মনে। ভরসা করে দেখ, তোমার আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করার জন্য আমি সবসময় আছি, থাকব তোমার পাশে। তুমিই তো মাঝে মধ্যে আমাকে অমিত বলে ডাক। আর তুমি আমার লাবণ্য। তুমিই আমাকে রবিঠাকুরের 'শেষের কবিতা'র সঙ্গে পরিচয় করিয়েছ। প্রতিদিনের ঘড়ায় তোলা জল, আর দীঘির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, আমরা দু'জনেই খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি। আমরা পরস্পর পরস্পরের দীঘি আর মুক্ত আকাশ হয়ে থাকব। যেখানে কোনো বাধা ছাড়াই আমাদের মনের অবাধ সাঁতার আর ভেসে বেড়ানো হবে।

সূচিতা বলে, হুম। মনের তো কোনো দেয়াল নেই। কে তাকে শাসন করে। আর আমার মন তো আমার নেই। কবে থেকে তা তোমার দখলে। যে মানুষ দূরে থেকেও কাছে থাকার অনুভূতি জাগায় সেই তো কাছের মানুষ। পথের দূরত্ব যেখানে মনের দূরত্বকে বাড়তে দেয় না, সেই তো প্রিয় মানুষ। তোমার উপস্থিতি সব সময়েই আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। এক অদ্ভুত ধ্যানে আমি ডুবে থাকি। এই ধ্যান আমি কখনও ভাঙতে চাই না।

রক্তিম আকাশে লাল টিপের মতো সূর্যটি তখন শেষবারের মতো পৃথিবীকে বিদায় জানাচ্ছে নতুন করে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। সন্ধ্যার ধূসরতা, হেমন্তের কুয়াশা আর অস্তমিত সূর্যের দিকে চেয়ে মেঘদূত বলে, সময় হয়ে এলো ফিরে যাওয়ার। প্রতিশ্রুতি রইল, ফিরব কোনো এক গোধূলি বেলায়। ফিরতে আমাকে হবেই। কেননা জীবন তো এখানেই। জীবনের কাছে না ফিরে কবে কে দূরে সরে থাকতে পেরেছে বল।

ওরা উঠে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ কারও মুখে কোনো কথা নেই। সূর্যটি আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে গেলে তারা পরস্পর পরস্পরের চোখের দিকে তাকিয়ে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে আসে। চোখে জল, বুকে কম্পন, নিঃশ্বাসে হাহাকার নিয়ে হাতে হাত, কপালে চুম্বন, হৃদয়ে হৃদয় মিশিয়ে তারা নিবিড় আলিঙ্গনে ডুবে যায় একাত্ম হয়ে।

মন বলে, আশা আর স্বপ্ন। ফিরব কোনো এক গোধূলি বেলায়। আর প্রতি মুহূর্তই হৃদয়ে লালন করে যাব শত বর্ষের প্রেম, শাশ্বত প্রেম। হৃদয়পোড়া মাটির গন্ধ সেদিন বাতাসে বিলীন হয়ে যাবে। সেদিন শুধুই স্বর্গের ফুল তার সৌরভ ছড়াবে। প্রতিশ্রুতি রইল।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়