প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
রেজাল্ট শিটে চোখ বোলাতেই মাথার ভেতর চরকির মতো ঘুরে ওঠে। রায়হান, তমাল, তারেকের ঠাঁই হলেও তালিকায় নেই লেলিনের নাম! অপেক্ষমাণদের মধ্যেও স্থান হয়নি ওর। অথচ বাকি তিনজনের চেয়ে খারাপ পরীক্ষা দেয়নি লেলিন! আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে। ‘তোরা কেউ না পেলেও এই সাবজেক্টে আমি চান্স পাবই’-জাতীয় ঘোষণাও দিয়ে রেখেছিল। অন্যদের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব ছিল, তবে মনের সব কথা অকপটে তমালকে বলত লেলিন। কাজেই ওর চান্স না পাওয়ার দুঃসংবাদ জানানোর দুরূহতম কাজটি তমালের ওপর এসে পড়ে। বিব্রতকর সে সময়ে তমালের মনে হয়েছিল, তার পরিবর্তে লেলিন সুযোগ পেলেই বোধ হয় ভালো হতো!
২. বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর লেলিনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। মুঠোফোনে যৎসামান্য কথা হতো তমালের আগ্রহে। ওর নির্লিপ্ত কণ্ঠ সেই আলাপকে কখনোই দীর্ঘ হতে দিত না। পরিবারের ইচ্ছায় একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও ক্লাসে যেত কালেভদ্রে। বন্ধুরা মিলে কোনো আয়োজন করলে তাতে বেশির ভাগ সময় অনুপস্থিত থাকত লেলিন। কেউ কেউ ওর প্রতি তমালের দুর্বলতাকে বাড়াবাড়ি মনে করত বলেই লেলিন নিজেকে সরিয়ে রাখত। সামান্য একটা ফলাফল কীভাবে দুজনের অবস্থানকে বদলে দেয় ভেবে একই সঙ্গে বিস্মিত ও বিমর্ষ হতো।
৩. পরের বছর ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন হঠাৎ লেলিনের ফোন। ও তমালকে কল করতে পারে, বিষয়টি তত দিনে বিস্ময়ের পর্যায়ে পৌঁছেছে। উচ্ছ্বাস থাকলেও তা চেপে রেখে যা বলে, তার জন্য তমাল মোটেও প্রস্তুত ছিল না, ‘আমি এবার তোদের সাবজেক্টেই চান্স পেয়েছি। তোরা তো এখন আমার বড় ভাই। তবে আমি ছোট ভাই হতে পারব না, বন্ধুই থাকব।’ আনন্দের চেয়ে ওর ধৈর্য আর সাধনা দিয়ে স্বপ্ন ছোঁয়ার ঘটনায় বেশি শিহরিত হয় তমাল। বন্ধুর জন্য গর্ব হয় খুব। এখন কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরামর্শ চাইলে সাতপাঁচ না ভেবে লেলিনের কাছে পাঠিয়ে দেয়।