বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

মুখচ্ছবি
অনলাইন ডেস্ক

রুহানার অফিসের অভ্যর্থনাকক্ষের হিমশীতল আবহাওয়ায় বসে কফির পেয়ালায় চুমুক। কাচের দেয়ালের ওপাশে মাধবী গাছটার প্রতি দিকে দিকে দৃষ্টি আমার। খানিক পরপর একঝাঁক পায়ের আওয়াজ। আজকেই যোগদান করা তরুণ কর্মীদের উপস্থিতিতে অফিসটাতে উৎসবের আমেজ। নতুন মুখগুলো চাকরিজীবনের প্রথম দিনে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে কাজ বুঝে নিচ্ছে।

আমার মতো অভিভাবকের সংখ্যা মাত্র দু’জন, যাঁরা তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে এসেছেন। স্কুল-কলেজ এমনকি ভার্সিটির দিনগুলোতেও রুহানাকে একলা ছাড়তে পারিনি আমি। মেয়েও আমাকে ছাড়া কোথাও যেতে নারাজ। আজ চাকরির প্রথম দিন। আমি বলেছি, এবার থেকে আমাকে ছেড়ে দিস মা। তোর অফিসের পাশেই বাসা নেব, এখন থেকে তুই একাই চলবি।

আমার সামনে দিয়ে চলে গেলেন একজন। স্যুট-টাই পরা, সাদা-কালো ঘন দাড়ি, চোখে চশমা পরা ভদ্রলোকটি চলে যেতেই রুহানা এলো। বলল– মা, ওই যিনি এইমাত্র চলে গেলেন, তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান আরাফাত হোসেন। আমি একটু তাকিয়ে দেখলাম– তারপর বললাম, চল তাড়াতাড়ি বের হই, এই সময় গাড়িতে ওঠা এক মহাযুদ্ধ।

পরদিন লিফটের জন্য অপেক্ষা করছি। এমন সময় আরাফাত সাহেব এসে দাঁড়ালেন। রুহানা তাকে সালাম জানিয়ে আমার সঙ্গে সৌজন্যমূলক পরিচয় করিয়ে দিল। একসঙ্গে লিফটে উঠতে উঠতে মনের ভেতর অনেক পুরোনো একটা মুখচ্ছবি ভেসে উঠতে লাগল। একটি মুখ আর কিছু সংলাপ– একদম চুপ, চিৎকার করলে একেবারে লাশ বানিয়ে ফেলব।

মাথা তুলে সামনের মুখটির দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকলাম। না, ভুল হওয়ার কথা নয়, এই আরাফাতই সেদিনের সেই আরিফ। পাশের বাড়ির লজিং মাস্টার। যে আমাকে একাত্তরের ভয়াল সময়ে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দিতে সাহায্য করেছিল।

ভদ্রবেশী আরিফের সেই মুখ জীবনেও ভোলার নয়। মার্চ মাসের ঘোর বিপদের দিনে সে প্রায়ই খোঁজখবর নিতে আসত। দেশের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করত। আমার ভাই যে যুদ্ধে গিয়েছিল, সেই কথা প্রথমদিকে আমরা কাউকেই বলিনি। আরিফই কৌশলে সেই সংবাদ জেনে নিয়েছিল। বাবা নেই, আমরা অনেক ছোট; একমাত্র ভাই যুদ্ধে গিয়েছে। বাড়িতে আমি আর মা ছাড়া কেউ নেই। আরিফ একদিন দুপুরবেলা কয়েকজন লোক নিয়ে এলো। সবাই মিলে আমাদের তুলে নিল। আমার পাশেই বসল আরিফ। সবকিছু স্পষ্ট মনে আছে আমার। লিফট থেকে নেমেই রুহানাকে বললাম, আমি একটু কাজে যাচ্ছি। ফিরতে দেরি হলে তুমি চলে যেও বাসায়। ফিরে এসে সবকিছু বলব।

অনেক বছর পর একাত্তরের এক দালালকে চোখের সামনে পেয়ে ছেড়ে দেওয়া সমীচীন মনে করলাম না। ভদ্রবেশী দেশদ্রোহীকে শাস্তি পেতেই হবে। আরাফাত সাহেব সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব তথ্য জোগাড় করে মামলা করার উদ্দেশ্যে কোর্টের দিকে চললাম।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়