রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

মোঃ আবদুল ওয়াহিদ চৌধুরী
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

ছেলেটির নাম সাদাকাত। বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে তার জন্ম। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। দেশে ভাল মানের চাকুরির সুযোগ না হওয়ায় পাড়ি দিয়েছে লন্ডনে। অনেক ডলার ব্যয় হয়েছে তার। তার মনে প্রশ্ন জাগলো, "কেন সে এত ডলার খরচ করে বিদেশের মাটিতে এসেছে।" উত্তর আসলো, শুধু ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্যে।

আমাদের দেশের অনেক ছেলেমেয়ের ভালো যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকুরি জোটে না বছরের পর বছর। অনেকের আবার মামা-খালুর জোর না থাকায় চাকরি নামক সোনার হরিণটি নিমিষেই হাতছাড়া হয়ে যায়। চোখের সামনে অক্ষম ও অযোগ্যরাই টাকার বিনিময়ে চাকুরিগুলো বাগিয়ে নেয়, আর যোগ্য ও মেধা সম্পন্ন ছেলেমেয়েরা হয়ে যায় পরিবারের বোঝা। হতাশার অমানিশা তাদের জীবনকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। তাই তো জীবনের অস্তিত্ব রক্ষায় তারা পাড়ি দেয় ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও কানাডা নামক অজানা রাজ্যে। সাদাকাত থেকে জানলাম, ডলার, বাড়ি, গাড়ি এমনকি নারীরও অভাব নেই। আরো আছে আকাশচুম্বী স্ট্যাটাস। সাদাকাত বললো নিজের পাজেরো গাড়ি নিয়ে মাইল কে মাইল ভ্রমণের কথা। সে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার পর বিরাট একটা মসজিদ তার নজরে আসলো। সে মসজিদের সামনে গেলো। সেখানে মসজিদ সচরাচর দেখা যায় না। দীর্ঘদিন পর মসজিদটা দেখে তার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। লোভনীয় চাকুরি, ওভারটাইম, শুধু ডলার আর ডলার কামানো ইত্যাদির চিন্তায় নিজের ধর্ম-কর্ম সবই এখন প্রায় ভুলতে বসেছে। টাকার কাছে বড্ড অসহায়। মসজিদ কম্পাউন্ডটা সে ঘুরে ঘুরে দেখলো। সামান্য ক'জন মানুষ ছাড়া পুরো মসজিদটা ফাঁকা মনে হচ্ছে। সাদাকাত বললো, সামান্য সময়ের মধ্যে নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ আরম্ভ হলো। মসজিদে বসে বেশ কান্না করলাম। আজ আমার অঢেল সম্পদ ও টাকা আছে, কিন্তু ধর্ম-কর্মের সময় পাই না। সব সময় ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা। তার মনে পড়ে, একসময় দেশে থাকতে মসজিদে আজান দিতো এবং সে ইমামের পিছনে নামাজ আদায় করতো। সুযোগ পেলে কোরআন ও হাদিস পড়তো। আজ সে এগুলো থেকে দূরে...বহু দূরে।

সাদাকাত আবেগাপ্লুত হয়ে বললো, তার মালিক তাকে বিনা পয়সায় বিয়ার, মদ, শূকরের মাংস খেতে দেয়। সে তা কৌশলে এড়িয়ে চলে। ছোটবেলায় ধর্মীয় শিক্ষার কারণে, পরকালের চিন্তা করে হয়তো তা সম্ভব হয়েছে। সে বললো, বিভিন্ন দেশের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা এই সুযোগগুলো সহজেই গ্রহণ করে। প্রবাসের এ চাকচিক্যে নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলে এবং তারা নিজের ধর্ম ও কর্মের কথা ভুলে যায়। সে বলতে চায়, ধর্ম-মা-মাতৃভূমি এগুলো যেন সব সময় মাথায় থাকে। মনে রাখতে হবে 'ভালো মানুষ' হওয়ার জন্যে নিজের ইচ্ছাটাই যথেষ্ট। কিন্তু ইদানীং অনেককে দেখি, অধিক টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদের কারণে ধর্মকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভাবে এবং ধর্মের নিয়মে থাকাটাকে নিজেকে অবরুদ্ধ মনে করে। কিন্তু সে যে এ পৃথিবীতে ক্ষণিকের মেহমান, এটা তাকে ভুলে গেলে চলবে না। যদি ভুলেও যায় তার জন্য তাকে অধিক মূল্য দিতে হবে। জীবন হবে তখন ঊষর মরুভূমি।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক (ইংরেজি), মেহের ডিগ্রি কলেজ, শাহরাস্তি, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়