রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

নাগরিকের অধিকার থেকে

-----------রহমান মৃধা-----------

অনলাইন ডেস্ক
নাগরিকের অধিকার থেকে

> কর্তব্য এবং দায়ভার পালন করে যে তারই চাওয়া-পাওয়ার অধিকার থাকার কথা। সেক্ষেত্রে বাবা-মা, গুরুজন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সকল স্তরের কর্মচারীর নৈতিক দায়িত্ব এবং কর্তব্যের মধ্যেই কিন্তু সেবা নেওয়া এবং সেবা দেওয়া পড়ার কথা। কিন্তু পৃথিবী সৃষ্টির শুরুতেই শোষণ এবং শাসনের দাপটে ঢাকা পড়ে গেছে মানবজাতির এই মূলমন্ত্রটি। যার ফলে মাঝেমধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে চলেছে। যেমন বাবা-মাকে ঘাড় ধরে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, কাজের লোকের প্রতি অন্যায়, অবিচার বা অত্যাচার করা, সমাজের প্রভাবশালী লোকের কাছে সাধারণ মানুষের লাঞ্ছিত হওয়া, শিক্ষক বা গুরুজনকে পুকুরে নিয়ে পানিতে চুবানো ইত্যাদি।

> বিশ্বে যুদ্ধ চলছে, টাকার মান কমেছে,তবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলেছে। পুঁজিবাদীরা যাতে সমস্যায় না পড়ে তার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। যেমন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সুদের হার বাড়িয়ে পুঁজিবাদীদের সন্তুষ্ট করছে। বেচারা গরিব মেহনতি মানুষের জীবনে যে ঝড় বয়ে চলেছে তাতে কারও কিছু যায় আসে না। সমাজটা এভাবেই যেন স্থাপন করা হয়েছে। তাই যখন প্রভাবশালী কাউকে কিছু করা বা বলা হয়, ঠিক তখনই ঝড় তুফানের সৃষ্টি হতে দেখা যায়! এটা যে শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা নয়, এটা গোটা বিশ্বের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু এমন তো কথা ছিল না আল্লাহর সৃষ্টিতে!

> মূলত সম্মান, বোধগম্যতা, সহনশীলতা, সহযোগিতা, আবেগ, অনুরাগ, ভালোবাসা এর সব কিছুই হবার কথা পারস্পরিক সম্মানের মধ্য দিয়ে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেটা সমাজ তথা দেশ থেকে বিলীন হবার পথে। শুধুমাত্র ক্ষমতা এবং অস্ত্রের বলেই সম্মান ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে। যার ফলে যার যতো ক্ষমতা সে-ই ততো বাহাদুর সেজে শিক্ষক থেকে শুরু করে বাড়ির কেয়ারটেকারকেও অপমান করতে দ্বিধাবোধ করছে না। তাছাড়া কাজের লোকটিকে অবমাননা করা বা অন্যায়ভাবে তার ওপর জুলুম বা অত্যাচার করা সমাজের চোখে যে অপরাধ কখনও সেটা মনে হয় না, বিশেষ করে বাংলাদেশে, যদিও তারাও কিন্তু সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে চলেছে। ডাক্তার, শিক্ষক যেমন সেবা প্রদান করে বিনিময়ে মজুরি পাচ্ছে, ঠিক বাড়ির কাজের লোকটাও অনুরূপভাবে মজুরি পাচ্ছে। কিন্তু তাকে যখন কিল, ঘুষি বা অবমাননা করা হচ্ছে তখন সমাজের কেউ কিছু বলছে না। অথচ যখন একজন শিক্ষককে অবমাননা করা হলো, ব্যস সারাদেশে হৈহুল্লোড় পড়ে গেল! আমি নিজে গুরুজনদের সম্মান করি, পাশাপাশি বাড়ির কাজের লোকটিকেও কিন্তু ভালোবাসি, সম্মান করি। কাজের লোকটার মতো কিন্তু প্রশাসনের 'টপ টু বটম' সকল কর্মচারীর সেবা দেবার কথা, হচ্ছে কি সেটা মনঃপুত? সেটা যখন হচ্ছে না বা কাজের লোককে মারলে টনক নড়ছে না, শিক্ষককে মারলে জ্বালা কেন? সমাজের নিম্নশ্রেণির জনগণ সব সময় গোলাম হয়ে বন্দি হয়ে আছে প্রভাবশালীদের কাছে, এটাই হচ্ছে সমস্যা এবং ঠিক এখানে থেকে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তাহলে এমন সাহস কখনও কেউ পাবে না, যে একজন গুরুজনকে অবমাননা করে।

> কী, আমার এ কথা শোনার পর খেপে গেলেন নাতো? বিষয়টি ভাবুন, আমরা সবাই মানুষ, সবাই সমাজের গুরুদায়িত্ব পালন করে চলেছি। তবে হ্যাঁ, কম শিক্ষার কারণে এক শ্রেণির লোক হয়তো সমাজের নিম্নমানের কাজটি করে চলছে, সেটা কি যথেষ্ট নয়? তারপরও কেন সেই নিম্নমানের কর্মের মানুষের প্রতি অবিচার? কেন তাকে সমপরিমাণ সম্মান দেখানো হচ্ছে না? আর কতোদিন অপেক্ষা করতে হবে এই পরিবর্তনের জন্যে? তাহলে কি বিবেকের মরণে শকুনের আবির্ভাব হয়েছে?

> এখন কয়েকটি বিষয় আরেকটু আলোকপাত করি। অপ্রিয় সত্য হলেও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে বিষয়গুলো দেখতে চেষ্টা করুন। যেমনটি আমি দেখেছি।

> দেশ ও জাতিকে অভ্যন্তরীণ বা বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রথম কাজ। সরকারি এবং বেসরকারি প্রশাসনের ব্যর্থতায়, বিশেষ করে যেখানে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সর্বস্তরে দুর্নীতির ছোঁয়া লেগেছে, যে দেশে কোনো অপরাধীকে গ্রেফতারের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রয়োজন, লাখ লাখ কর্মকর্তা থাকতেও ভেজালবিরোধী অভিযানে সফলতা নেই, যে দেশে প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসীরা জীবন্ত মানুষকে রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করছে, শত শত মানুষ পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে। মানুষে মানুষে খুনোখুনি, দিনের বেলা, তাও জনসমুদ্রে? যে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, যে দেশে শিক্ষকসমাজ আত্মসম্মানবোধ হারিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত, লোভী, স্বার্থপর ও চরিত্রহীন হয়ে পড়েছে। এতো বড় সাহস বঙ্গবন্ধুর দেশে এবং জননেত্রীর প্রশাসনে! এ নিশ্চয়ই ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। মনে হচ্ছে এ ধরনের শকুনের দল দেশে জন্মেছে গণতন্ত্রকে তথা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে।

> এদিকে পৃথিবীর সমস্ত দেশের কূটনীতিকরা সব কিছু দেখছে, তারপরও তারা নীরবতা পালন করছে, কারণ কী? তারা কি চায় যে সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক বা আরো যেসব দেশ সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিবাজদের কবলে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে, নিজেরা নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করছে, বাংলাদেশও ঠিক সেই পথে যাক? সারাক্ষণ দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে দেশের উদীয়মান পথকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে যে সমস্ত রাজাকারের বাচ্চারা উঠে পড়ে লেগেছে, তাদের মেনে নিয়ে কীভাবে দেশপ্রেমিক জাতি নীরবতা পালন করছে? শত শত কোটি টাকা দুর্নীতি করে দেশ থেকে পাচার করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। একজন কেরানির শত শত কোটি টাকা ব্যাংকে। তদন্ত চলছে, দুদক নোটিস জারি করছে, যেন এসব কালপ্রিট দেশ ত্যাগ করতে না পারে। তারপরও তারা ইমিগ্রেশনের চোখের সামনে দিয়ে শত শত কোটি টাকা নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে! স্যাটেলাইটের তাহলে কী ব্যবহার হচ্ছে? নাকি সেই দুর্নীতির টাকার কিছু অংশ ঘুষ দিয়ে কালপ্রিটরা দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে? যাদের মেহনতি মানুষ, কৃষক কিংবা মজুরের টাকা দিয়ে দেশের বর্ডার রক্ষা করার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে, আজ তাদের চোখে ধুলো দিয়ে সবাই পালিয়ে যাচ্ছে।

> প্রশ্ন আসে, কী দরকার আছে তাহলে এসব জীবন্ত প্রতিমূর্তি পালন করে? সর্বোপরি দুদক যদি না পারে তার দায়িত্ব পালন করতে, পুলিশ যদি না পারে সৎপথে থেকে দায়িত্ব পালন করতে, সচিবরা যদি না পারে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে, রাজনীতিবিদরা যদি না পারে দেশ চালাতে, তবে পুরো দেশের মানুষের কাছে একটিই অনুরোধ, নতুন করে স্বাধীনতার জন্যে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে কালপ্রিটদের দেশ থেকে বের করে তালপট্টির দ্বীপে পাঠিয়ে আরেক নতুন অস্ট্রেলিয়া তৈরি কর। যেন নতুন প্রজন্ম বলতে পারে, ২০২৪ সালে দেশের সমস্ত কালপ্রিটদের তালপট্টিতে পাঠিয়ে নতুন অস্ট্রেলিয়া তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে।

> ঘৃণা করতেও ঘৃণা করছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে। জনগণ ভোট দেয়া থেকে বঞ্চিত, জনগণ প্রতিবাদ করা থেকে বিরত হয়ে পুতুলের মতো নীরবতা পালন করছে। কারণ কী? তাহলে এই জনগণেরই আপনজনেরা এসব অরাজকতার জন্যে দায়ী?

> বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে আর বাকি নেই। বিবেকের মৃত্যু হয়েছে, অথবা তাকে প্যারালাইজ্ড করে রাখা হয়েছে।

> “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সবাই আপনার কাছে বিচার চাচ্ছে। কেন? আপনার কাছে বিচার চাইতে হবে কেন? এটা দ্বারা কী বোঝায়? দেশে কোনো বিচার নেই? বিচারব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে? বাকিরা (যাদের বেতন দিচ্ছেন) কী করছেন? কীভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে? আর সুশাসন ব্যতীত কীভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সাধিত হবে? কী হচ্ছে এসব, একটু ভাবুন!”

> দেশের কিছু মানুষ যখন বেঈমান হয়ে ধ্বংস করে মনুষ্যত্বকে, ঠিক তখন মরণ হয় মানবতার। মড়ক পড়েছে মানবতার আর আবির্ভাব হয়েছে শকুনদের। মড়কের অবসান ঘটিয়ে কখন এই শকুনের দল দূর হবে বাংলাদেশ থেকে? সেটাই এখন প্রশ্ন!

> ৭ই মার্চের চেতনায় হৃদয়ে বাংলাদেশ। অনেক শক্ত কথা লিখেছি, কিন্তু উপায় কী? দেশকে সঠিক পথে ফিরে পেতে কী করণীয়!

> সমস্যা এসেছে সমাধান খুঁজতে হবে। দেশের পরিকাঠামো বা অবকাঠামো বলতে কিন্তু শুধু ব্রিজ তৈরি, রাস্তা তৈরি, বিসিএস ক্যাডার এসবকে বোঝায় না। দরকার মূল কারণ খুঁজে বের করা এবং যেগুলো নিম্নরূপ :

> কিন্ডারগার্টেন থেকেই শুরু করতে হবে পরিবর্তনের ওপর প্রশিক্ষণ, তা না হলে বয়ঃসন্ধির আবির্ভাবের সঙ্গে দৈনন্দিন কাজকর্মের ফল মনের মধ্যে ভালোমন্দের কনফ্লিক্টের সমন্বয় ঘটাবে, যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে জীবনের বাকি সময়ে। শিশুর অনুকরণ ও অনুসরণ করার ক্যাপাবিলিটি সবচেয়ে বেশি শৈশবে এবং বয়ঃসন্ধির আগ পর্যন্ত সময়ে। তাই স্কুলে নয় কিন্ডারগার্টেন থেকেই শিশুকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে শুরু করতে হবে সুশিক্ষার ওপর বেস্ট প্রাকটিসের মধ্য দিয়ে। তা না হলে সমাজে দিন দিন বাড়তে থাকবে ব্যস্ততা, ব্যর্থতা, পরশ্রীকাতরতা এবং স্বার্থপরতা, যা জন্মের শুরুতে না হলেও বিবেক যখন বেশ তাড়া দেবে, ঠিক তখন থেকেই মানুষের ভেতর পরশ্রীকাতরতা, স্বার্থপরতা ও ব্যস্ততার প্রবণতা দেখা দেবে। “আমি নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করি, যখন কেউ কিছু বলতে চায় আমি আকারে ইঙ্গিতে বলে দেই আমার সময় নেই, তবুও তাদের কিছু বলতে সময় দেই বটে, তবে শোনার সময় নেই, কারণ আমি অন্যমনস্ক। আমার অনেক কাজ, আমার অনেক দায়িত্ব, আমি ছাড়া তো কিছুই ঠিকমতো হয় না, হবেও না। এদিকে আমার কত কাজ, আমি ব্যস্ত মানুষ।” এই হলো একজন ব্যস্ত, ব্যর্থ, পরশ্রীকাতর এবং সেলফিস মানুষের পরিচয়, যে শুধু নিজেকেই বড় মনে করে এবং অন্যের ভুলত্রুটির ওপর সারাক্ষণ লেগে থেকে তাকে নিচে নামিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। সমাজে এ ধরনের লোকের অভাব নেই। তারপরও দিন দিন এদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত, সুশিক্ষার অভাবে। কথা হবে আজ এদের নিয়ে, যা আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে লক্ষ্য করেছি। আসুন জানি কিছু বাস্তব উদাহরণ থেকে।

শুধু বাংলাদেশে নয়, এ অভিজ্ঞতা আমার বিদেশেও হয়েছে। কিছু কলিগের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি কীভাবে তারা ছোট করতে চেষ্টা করেছে। মিটিং-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনার মাঝে হয়তো ভাষাগত ত্রুটি হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে ভুলটা ধরে সবার সামনে ছোট করতে দ্বিধাবোধ করেনি বা কিছু জিজ্ঞেস করতেই বলেছে, আমি খুব ব্যস্ত, আমার অ্যাজেন্ডা দেখতে হবে। বাংলাদেশের অনেক পরিচিত বন্ধুকে ফোন করতেই তারা ভীষণ ব্যস্ত। যেহেতু সবাই ভীষণ ব্যস্ত, তাই আমি আবার টেক্সট করে জেনে নেই যে তাদের সময় হবে কি কথা বলার বা তারা সময় করে যেন কল ব্যাক করে। একজন হঠাৎ ফোন করতেই শুরু হলো তার ব্যস্ততার ওপর নানা কথা। এর মধ্যে তার আরেকটা ফোন বেজে উঠতেই আমাকে আটকে রেখে তার সাথে কথা বলতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পরে ফিরে এক্সকিউজের সঙ্গে সে যে কতো ব্যস্ত সেটাই প্রমাণ করলো। আরেকজন দিব্যি ফোন করে আর প্রায়ই নানা ধরনের ফালতু কথা বলতে পছন্দ করে। তবে কাজের কথা এলেই সে ভীষণ ব্যস্ত। শুধু কি তাই, সে ছাড়া তো সব কিছু অকেজো! তার বাড়ির বউ থেকে শুরু করে অফিসের কলিগরা এমনকি বন্ধুরা পর্যন্ত গাধা! কেউ কিচ্ছু জানে না বা বোঝে না, তার কথায়। আমার দূরপরবাস জীবনের প্রায় চল্লিশ বছর হতে চলেছে, জীবনে এতো ব্যস্ত কখনও ছিলাম না বা এখনও ব্যস্ত নই। হ্যাঁ চাকরি থেকে শুরু করে রান্না করা, ক্লিন করা, ডিশিং-ওয়াশিং করা, থালাবাটি পরিষ্কার করা, বাজার করা, গাড়ি চালানো, ছেলে-মেয়েকে সব ধরনের সাহায্য করা, সামাজিকতা করা, দেশ-বিদেশ ঘোরা, আড্ডা মারা, বিনোদন করা, এমনকি লেখালেখি করা সবই কিন্তু চলছে। তারপরও ব্যস্ত বা খুব ব্যস্ত এ কথা মাথায় আসেনি জীবনে, যা চারিপাশে শুধু শুনছি আর ভাবছি। যারা সারাক্ষণ ব্যস্ত বলে দাবি করছে, দেশে-বিদেশে তারা কিন্তু কোনো অবস্থাতেই এবং কোনোভাবেই আমার থেকে ভালো নেই, যা আমি বেশ লক্ষ্যও করেছি। তাহলে কী কারণ থাকতে পারে এই ব্যস্ততার পিছনে? কারণ একটাই, তা হলো এটি এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা। যারা জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে ব্যর্থ হয়েছে বা মেনে নিতে শেখেনি পরাজয়, সহজ সরল পথ ও উদারতা, তারা নিজেদের চারিপাশে স্বার্থপরতা ও ব্যস্ততার জাল বুনে নিজেকে বিশাল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চেষ্টা করছে মাত্র। বেশির ভাগ মানুষের ধারণা যে “আমি ছাড়া কিছুই ঠিক মতো হবে না, বা কেউ ম্যানেজ করতে পারবে না। আমার থেকে ভালো কেউ পারবে না বা বুঝবে না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মাও মনে করেন কী হবে ছেলে-মেয়ের যদি আমি বা আমরা না থাকি তাদের পাশে ইত্যাদি ইত্যাদি।”

> আসুন এবার পুরানো ইতিহাসের কিছু সত্য তুলে ধরি। যীশুর জন্মে বাবা ছিল না, মায়ের সাহায্যে তিনি বড় হয়ে এক বিশাল জনগোষ্ঠীর নেতা হয়ে আছেন। ইসলাম ধর্মে হযরত মুহম্মদ (সঃ)-এর জীবনের শুরুতেই বাবা-মা ছাড়াই তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানুষ এবং বিশ্বনবী ও রাসুল হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বলতে পারি “ডযধঃ রং ষড়ড়ঃবফ পধহহড়ঃ নব নষড়ঃঃবফ”. তবে আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই, যারা সমাজে যতো বেশি ব্যস্ত বলে দাবি করছে, তাদের কনট্রিবিউশন ততো কম পরিবার, সমাজ এবং দেশের প্রতি। কারণ এ ধরনের লোকেরা অন্যকে বিশ্বাস করে না, এরা সবসময় অন্যের জ্ঞানকে লো-প্রোফাইল বলে গণ্য করে। এদের ব্যাড ম্যানেজমেন্টের কারণে এদের কোনো ফলোয়ার থাকে না। এদের সংস্পর্শে যারা জড়িত তাদের নতুন কিছু জানা বা শেখার সময়ও ঘটে না। এরা মানুষকে নিচু করতে পারদর্শী। এরা পরিবার, সমাজ এবং দেশের জন্যে ক্ষতিকর এবং এরা অসুস্থ।

মানুষ জাতির সবচেয়ে বড় পরিচয় কী? নিজের প্রতি বিশ্বাস (যাকে বলে তার আত্মবিশ্বাস) এবং সেই বিশ্বাস অর্থাৎ আত্মবিশ্বাস যখন না থাকে তখন এ ধরনের লোক মানসিক অসুস্থতার কারণে এমন আচরণ করতে শুরু করে, যা দিন দিন সমাজের অন্য লোকের জীবনে নেগেটিভ প্রভাব বিস্তার করে। কারণ এদের ধ্যানে ও জ্ঞানে এরা অন্যকে সব সময় নিচু করে, কথায় এবং কাজে। সর্বশেষে এদের আশেপাশে যারা বাস করে তারাও তাদের আত্মবিশ্বাস হারাতে থাকে। পরিবারের ক্ষেত্রেও কিন্তু এমনটি ঘটে, তখন ছোটরা ভয়ে কিছু বলতে সাহস হারিয়ে ফেলে, কারণ তারা মনে করে যে তারা সত্যি বোকা, গাধা, ভ্যালুলেস, ইউজলেস ইত্যাদি ইত্যাদি।

> শুধু পুঁথিগত বিদ্যা হলেই কি সুশিক্ষিত ও আদর্শ মানুষ হওয়া সম্ভব? না। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে রয়েছে ইউনিক কোয়ালিটি, যা ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের ব্যক্তিগত পরিচয়। এখন যদি এসব পণ্ডিত এবং ব্যস্ত লোক সারাক্ষণ আঘাত করে কারো দুর্বলতার ওপর, তখন তারা হারাতে তাকে নিজেদের কনফিডেন্স এবং শেষে এরাও নিজেদেরকে ব্যস্ত মানুষ বলে সমাজে বসবাস করতে শুরু করে।

> সময় এসেছে এর সমাধানের।

> জানা দরকার, ব্যস্ততার কারণ কী? আমি ছাড়া আর কি কেউ নেই যে, এ কাজটি করতে পারে? কে করবে সেদিন, যেদিন আমি হঠাৎ অসুস্থ হবো বা মারা যাবো? প্রায়োরিটি দিতে শিখতে হবে যে সব কাজই গুরুত্বপূর্ণ নয় বা গুরুত্বপূর্ণ সত্ত্বেও যদি তা না করি, কী হবে? জীবনে রিস্ক নেওয়া শিখতে হবে। মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে? গেলে যাক না? ম্যানেজমেন্ট বাই থ্রেট নয়, ম্যানেজমেন্ট বাই অবজেকটিভসের সমন্বয়ে সকলকে কাজে জড়িত করা, তাদেরকে বিশ্বাস করা, উৎসাহিত করা এবং সর্বোপরি নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখা সঙ্গে অন্যকে বিশ্বাস করা শিখতে হবে। সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। এর থেকে রেহাই পেতে হলে কী করা যেতে পারে? অবশ্যই এর সমাধান রয়েছে এবং তা হলো মনের কলুষতা দূর করা এবং নিজেকে জানা, সাথে দুটো রুলস তৈরি করা।

> রুলস নাম্বার ওয়ান, সুশিক্ষার সমন্বয়ে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস তৈরি করা।

> রুলস নাম্বার টু, ডোন্ট ফরগেট রুলস নাম্বার ওয়ান। আমি ভালবাসি মানুষকে তুমি ভালবাসো আমাকে, এমনটি প্রত্যাশায় প্রত্যাশিত হতে হবে।

> আল্লাহ তুমি বাংলাদেশকে দানবদের হাত থেকে রক্ষা কর। এদেরকে এমনভাবে ধ্বংস করে দাও, যাতে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়। আমরা কিছু না করতে পারলেও দুর্নীতিবাজদের অগত্যা মনেপ্রাণে ঘৃণা এবং চূড়ান্ত ধ্বংস কামনা করতে পারি।

লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়