প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ঢাকায় ‘ড. নূরুন নবী : আজীবন মুক্তিযোদ্ধা’র প্রদর্শনী
মুক্তিযুদ্ধের অজানা ইতিহাসে চোখ ভিজে যায়
ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘ড. নূরুন নবী : আজীবন মুক্তিযোদ্ধা’র প্রদর্শনী করা হয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে হয় ১ম প্রদর্শনী। পরদিন শেরেবাংলা নগর গার্লস কলেজে এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি সরকারি বিজ্ঞান কলেজে প্রদর্শনী করা হয়। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমিতে হয় প্রদর্শনী। ৩ মার্চ নিউইয়র্কের জামাইকা মাল্টিপ্লেক্সে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
প্রদর্শনীর আয়োজক এনআরবি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক ওমর আলী বলেন, একাত্তরের যুবক নূরুন নবী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, অসীম সাহসিকতার সাথে পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ লড়াই করে কীভাবে শত্রুদের পরাস্ত করেছেন, কীভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের আস্থাভাজন হয়েছেন, ঐতিহাসিক বিভিন্ন অজানা ঘটনার বর্ণনা রয়েছে এই তথ্যচিত্রে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের অজানা ইতিহাস জানাতে এই প্রামাণ্যচিত্র সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের পর একাত্তরের কিংবদন্তী মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন নবী কীভাবে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতি নেন, ২৫শে মার্চ রাতে পাক বাহিনীকে আটকে দিতে শাহবাগে কীভাবে ব্যারিকেড দেন, শুরুতেই সেসব বর্ণনা দেন। ২৫শে মার্চের গণহত্যার পর কীভাবে যুদ্ধে যোগ দিলেন, কীভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে যোগযোগ স্থাপন করে টাঙ্গাইল থেকে যমুনা নদী পথে নৌকায় করে মাইনকার চরে গেলেন এবং নৌকা বোঝাই করে পরপর তিনবার অস্ত্র নিয়ে টাঙ্গাইল ফিরলেন, সেসব বর্ণনা করেন। ডিসেম্বরে যুদ্ধ জয়ের কৌশল হিসেবে ভারতীয় ছত্রীসেনাদের আকাশ পথে টাঙ্গাইলে অবতরণ, টাঙ্গাইল মুক্ত করে সড়ক পথে ঢাকা দখলের দুঃসাহসী অভিযানের অজানা সব তথ্য রয়েছে এই প্রামাণ্যচিত্রে।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের গণহত্যা থেকে ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে নিজের ভূমিকার কথা একের পর এক বর্ণনা করেছেন ড. নূরুন নবী। যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করতে বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। ডকুমেন্টারিতে সেই দুঃস্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ড. নবী। হলভর্তি দর্শকও সাথে কেঁদে উঠেন। তারপর অন্য এক লড়াইয়ে নামেন নূরুন নবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা জীবন থেকে ছুটি নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্যে প্রথমে জাপানে, তারপর যুক্তরাষ্ট্রে যান। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হন এবং সেখান থেকেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে লড়াই শুরু করেন। প্রামাণ্যচিত্রে এসব ঘটনা চমৎকারভাবে দেড় ঘন্টায় তুলে ধরেন পরিচালক নাদিম ইকবাল।
প্রামাণ্যচিত্রের ৪টি প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল, ঢাবির সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাবির সাবেক ভিসি ড. আনোয়ার হোসেন, সাংবাদিক আবেদ খান, মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন নবী, ড. জিনাত নবী, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল, লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক নাহাস পাশা, সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ এবিএম রেজাউল করিম, শেরেবাংলা নগর গার্লস কলেজের উপাধ্যক্ষ আহসান খান চৌধুরী, সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এম ই চৌধুরী শামীম,তথ্যচিত্র নির্মাতা নাদিম ইকবাল, এনআরবি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক ওমর আলী, এনআরবি ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ফোরামের দফতর সম্পাদক সাহানারা খাতুন প্রমুখ। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে ও বাংলা একাডেমিতে প্রদর্শনীর আয়োজন করে সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশন। সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও শেরেবাংলানগর গার্লস কলেজে প্রদর্শনীর আয়োজন করে এনআরবি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।