প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অসহায় ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সহায়তায় মিশরে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
লাল সবুজের পতাকা খচিত ব্যানারে অসহায় গাজাবাসীর জন্যে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে মিশরে অধ্যয়নরত একদল বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। বাংলাদেশভিত্তিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের 'বাঙালি চ্যারিটিজ' ফাউন্ডেশনের সাথে তাদের লোগো সম্বলিত ব্যানার লাগিয়ে গাজার জনগণের কাছে বাঙালি মুসলিমদের প্রেরিত সহায়তা পৌঁছে দিতে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে নিরলসভাবে কাজ করছে বিশ্ব বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত একদল বাংলাদেশী শিক্ষার্থী।
ইতিমধ্যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে বাংলার লাল-সবুজ পতাকা খচিত ব্যানারে তিন মিলিয়ন ইজিপ্টশিয়ান পাউন্ডের সমমূল্যের খাদ্যদ্রব্য, পানীয়, শীতবস্ত্র, জরুরি ঔষধ সামগ্রী ও কাফনের কাপড় সহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাবপত্র গাজায় পাঠাতে সক্ষম হয়েছে তারা।
মিশরের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা ও গ্র্যান্ড ইমাম শাইখুল আজহার ড.আহমদ আততয়্যিব ( হাফি)-এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আল-আজহারের গাজা বিষয়ক সর্বাধিক বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য চ্যারিটিজ ফান্ড 'বাইতুয যাকাত এন্ড চারিটিজ ফাউন্ডেশন'-এর মাধ্যমে এই সহায়তা পাঠাতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা।
কায়রোস্থ আজহারভিত্তিক চ্যারিটিজ ফাউন্ডেশনের সাথে বিশ্বের ১২০টি দেশের কয়েক শ' চ্যারিটিজ সংস্থা সমঝোতা স্বাক্ষর সম্পাদিত করে তাদের দেশভিত্তিক লোগো সম্বলিত ব্যানারে গাজায় পৌঁছে দিচ্ছে এসব ত্রাণ সামগ্রী।
আজহার চ্যারিটিজ ফাউন্ডেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হুজাইফা খান বিভিন্ন চ্যারিটিজ সংস্থার পক্ষ থেকে সমঝোতা স্বাক্ষর সম্পাদিত করে বাংলাদেশভিত্তিক বিভিন্ন চ্যারিটিজ ফাউন্ডেশনের অনুদান সহ আজহারের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছে।
সেই সাথে অনুদান দাতাদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন আজহারের পক্ষ থেকে রিসিট, প্রশংসাপত্র ও সনদ সহ উৎসাহব্যঞ্জক নানা উপহার ও পুরস্কার।
হুজাইফা খান এই প্রতিনিধিকে জানান, গাজার মানুষ আজ ভয়াবহ খাদ্য সংকটে ভুগছে। ক্ষুধার জ্বালায় গাজার মানুষ পশু-পাখির খাবার খাচ্ছে। সোনার টুকরো সন্তান হারিয়ে পাগলপারা মায়ের মাতম কাঁপিয়ে তুলছে আল্লাহর আরশ। শিশুদের আর্তচিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। অনাহারে মারা যাচ্ছে শত শত শিশু। অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে ধুঁকে ধুঁকে মরছে হাজারো নারী-শিশু। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমরা ২০০ কোটি মুসলমান আজ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছি। এসব দেখে অব্যক্ত যন্ত্রণায় হৃদয়টা চৌচির হয়ে যায়।
হুজাইফা খান আরও বলেন, গাজার সঙ্গে একমাত্র সীমান্ত রাফা ক্রোসিং-এর মাধ্যমেই সহযোগিতা পাঠানো যায়। তাই নিপীড়িত ও নির্যাতিত মজলুম ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে বাংলাদেশভিত্তিক বিভিন্ন দেশের চ্যারিটিজ ফাউন্ডেশনের অনুদান আজহারের নিজস্ব ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গাজায় পৌঁছে দিতে আজহারের বাঙালি প্রতিনিধি হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি আমি সহ বেশ ক'জন শিক্ষার্থী।
বাংলাদেশ ছাড়াও আমরা সহায়তা করছি আজহারের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত আন্তর্জাতিক এনজিও সহ ভারত ও বৃটেনভিত্তিক বেশ ক'টি চ্যারিটিজ ফাউন্ডেশনের সাথে।
বিভিন্ন দেশের লোগো সম্বলিত ব্যানারে সহযোগিতা পাঠাতে আল-আজহারের যাকাত এন্ড চ্যারিটিজ ফাউন্ডেশন প্রতিটি দেশের লোগোর সাথে নিজেদের লোগো সম্বলিত স্টিকার যুক্ত করার পর ট্রাকগুলো গাজার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেই আমরা।
ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর আগে প্রথমত কায়রোতে ইন্সপেকশন করে সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়। এরপর রাফা ক্রসিং-এ রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে গাজায় ইউ এনআরডব্লিউ-এর বিতরণ পয়েন্টগুলোতে পৌঁছে। অতঃপর সীমান্তে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ত্রাণগুলো পর্যবেক্ষণ করে অনুমতি দিলেই সহায়তাগুলো গাজায় প্রবেশ করানো সম্ভবপর হয়।
তরুণ এই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আরো বলেন, বরাবরের মতো এবারও আমরা লাল সবুজের পতাকা খচিত ব্যানারে বাংলাদেশের সহায়তা গাজায় পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আছি প্রথম কেবলার স্বাধীনতাকামী নিপীড়িত গাজাবাসীর পাশে। আপনিও আপনার অনুদান দিয়ে মানবতার কল্যাণে রাখতে পারেন অসামান্য অবদান।