প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর অনিন্দ্যসুন্দর সালাহউদ্দিন আইয়ুবী দুর্গ
ইসলামের ইতিহাসে যেসব মহাবীরের নাম সোনার হরফে লেখা আছে, তাঁদের একজন সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত রণকৌশলেই মুসলমানরা দ্বিতীয়বার পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিন ও আল-কুদ্স জয় করতে সক্ষম হয়েছিল।
১১৭১ সালে সালাহ উদ্দিন ‘ফাতেমিদ রাজবংশের’ শাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করে তৎকালীন মিশরে রাজধানী ফুঁসতাত নগরের মোকাক্তাম পাহাড়ের চূড়ায় একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। দুর্গটির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থান নিয়ে লিখেছেন মিশরে অবস্থানরত বিশিষ্ট লিখক আফছার হোসাইন।
মিশরের রাজধানী কায়রোর মোকাক্তাম পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত দুর্গটির নাম সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী দুর্গ বা সিটাডেল অফ সালাদিন। ১১৭৬ সালে মিশর ও সিরিয়ার আয়ুবিদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সুলতান, সালাহ উদ্দিন আইয়ূবী এর নির্মাণ শুরু করেন।
বর্তমান আধুনিক কায়রোর মোকাক্তাম পাহাড়ের উপর নির্মিত দুর্গটির অবস্থান ছিল কৌশলগত কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যযুগে খ্রিস্টান ক্রুসেডারের হাত থেকে মিশরকে রক্ষার জন্যে এই দুর্গটি নির্মিত হয়েছিল। সুলতান সালাহউদ্দিনের হাত ধরে এর নির্মাণ শুরু হলেও মামলুক সুলতান নাসির এবং সর্বশেষ অটোমান তুর্কী শাসক মোহাম্মদ আলী পাশা (যিনি পরবর্তীকালে মিশর আর সিরিয়ার শাসক হয়েছিলেন)-এর হাতে সমাপ্তি ঘটেছিল এই দুর্গটির।
দুর্গটিতে রয়েছে তিনটি মসজিদ ছাড়াও বেশ ক'টি ওয়াচ টাওয়ার। তার মধ্যে বর্গ আল ঈমাম, বর্গ আল রামলাল, বর্গ আল হাদিদ, বর্গ আল তুরফা ও বর্গ আল কারকিলান উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও আছে বে'রে ইউসুফ নামে একটি পানির কুয়া। অনেকেই মনে করেন, হযরত ইউসুফ (আঃ) কে তাঁর ভাইয়েরা যে কুয়ায় নিক্ষেপ করেছিলেন, এটাই সেই কুয়া।
বিগত ৭০০ বছর ধরে সালাহ উদ্দিন আইয়ুবীর দুর্গটি মিশরীয় শাসকদের সরকারি অফিস ও বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে দুর্গটি বিশ্ব পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমানে দুর্গটিতে রয়েছে জাতীয় পুলিশ যাদুঘর, জাতীয় সশস্ত্র বাহিনী যাদুঘর ও দুর্গ কারাগার যাদুঘর। এসব যাদুঘরের ভিতর ও বাইরে রক্ষিত আছে হাজারো বছর আগে ফেরাউন যুগ থেকে মোহাম্মদ আলী পাশা যুগের বিভিন্ন শাসকদের ব্যবহত সমরাস্ত্র, শিল্প কর্ম, ফেরাউন (২য় রামসিস) সহ সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী, ইব্রাহিম পাশা, মোহাম্মদ আলী পাশা ও রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাত সহ মিশরের সকল শাসকের ভাস্কর্য।
দুর্গটির প্রধান আকর্ষণ মোহাম্মদ আলী মসজিদ। আধুনিক মিশরের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মাদ আলী পাশা ইস্তাম্বুলের আয়া সোফিয়ার আদলে সালাহ উদ্দিনের দুর্গের ভেতরেই মোকাক্তাম পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় নিজ নামে অপূর্ব নকশায় নির্মাণ করেন এই মসজিদটি।
স্থপতি ইউসুফ বুশনাকের নকশায় স্থাপিত মসজিদটিতে রয়েছে ৫টি গম্বুজ ও ২টি মিনার। এর অভ্যন্তরে ব্যবহার করা হয়েছে মার্বেল পাথর। এতে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে ১০ হাজার মুসল্লি।