প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সিআইপি হলেন তিন মালেয়শিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হয়েছেন মালয়েশিয়া প্রবাসী তিন বাংলাদেশি। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক 'অনাবাসী বাংলাদেশি' ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়েছেন অহিদুর রহমান ও রুহুল আমিন সরকার এবং বৈধ চ্যানেলে সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী অনিবাসী ক্যাটাগরিতে সিআইপি হয়েছেন মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন।
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) বিশ্ব প্রবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তাদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২০২২ ও ২০২৩ সালের জন্যে দেশে সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী অনিবাসী বাংলাদেশিদের সিআইপি-এনআরবি ক্যাটাগরিতে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে তাদের স্বীকৃতি দেয়া হয়। গত দুই বছরে ১৫০ জন অনাবাসী বাংলাদেশি এই সিআইপি মর্যাদা লাভ করেছেন।
মালয়েশিয়া প্রবাসী অহিদুর রহমান অহিদ : টানা দুইবার কমার্শিয়ালি ইম্পরট্যান্ট পারসন (সিআইপি) নির্বাচিত হয়েছেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘সি মিলেনিয়াম ট্রেড (এম) এসডিএন বিএচডির স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মালয়েশিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ অহিদুর রহমান অহিদ। তিনি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক হিসেবে অনাবাসী বাংলাদেশি ক্যাটাগরিতে ২০২১-এর জন্যে নির্বাচিত হয়েছেন।
সিআইপি অহিদুর জানান, মানুষের সেবাই তাঁর জীবনের ব্রত। কোনো প্রতিদান ছাড়াই তিনি দেশের এবং মানুষের সেবা করে যেতে চান।
অহিদুর রহমানের বাড়ি কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট থানার রায়কোট মাহিনি বাজারের কুকুরখীল গ্রামে। করোনাকালে সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশে থেকে বেশ প্রশংসাও কুড়িয়েছিলেন তিনি।
রুহুল আমিন সরকার : প্রথমবারের মতো কমার্শিয়ালি ইম্পরট্যান্ট পারসন (সিআইপি) নির্বাচিত হয়েছেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জাহান ভারটেক্স (এম) এসডিএন বিএচডির স্বত্বাধিকারী, বাংলাদেশ ফোরাম অ্যাসোসিয়েশন ও বিডি এক্সপ্যাট ইন মালয়েশিয়ার কার্যনির্বাহী সদস্য রুহুল আমিন সরকার। তিনি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক হিসেবে অনাবাসী বাংলাদেশি ক্যাটাগরিতে প্রথমবারের মতো ২০২২-এর জন্যে নির্বাচিত হয়েছেন।
সিআইপি রুহুল আমিন জানান, আমরা সকলেই অবগত, বিগত কয়েক বছর যাবৎ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে প্রচুর পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে। এতে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকার ইতোমধ্যে প্রণোদনা চালু করেছে। এ প্রণোদনা চালু করার ফলে আমরা দেখতে পারছি, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের রিজার্ভ অনেক কমে গেছে। দেশের অর্থনীতিকে পূর্বের ন্যায় ফিরিয়ে নিতে আমরা যারা প্রবাসী আছি তাদেরকেই বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণের মাধ্যমে আমরা দেশের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করতে পারি। সেক্ষেত্রে সরকার ও দূতাবাসগুলোকে প্রবাসীদের কল্যাণে আরো যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ঢাকা ডেমরার সারোলিয়া সানারপাড়ার রুহুল আমিন ২০১৫ সালে মালয়া ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন ।
মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন : বৈধ চ্যানেলে দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিতে মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মুহাম্মদ সাহাব উদ্দিন প্রথমবারের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মর্যাদাপূর্ণ এনআরবি সিআইপি (বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) নির্বাচিত হয়েছেন। চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার উত্তর পদুয়া, বদলা পাড়ার নুরুল ইসলাম ও শাহানুর বেগমের ছেলে সাহাব উদ্দিন ২০১৪ সালে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। ২০১৮ সালে মালয়েশিয়া থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ওপর উচ্চতর স্নাতক ডিগ্রি নেন।
২০১৮ সাল থেকেই রাজধানী কুয়ালালামপুরে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে এমএস সার্ভিসেস কনস্ট্রাকশন, এমবি ত্রি স্টার ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস, সারা সেভেন সুপার মার্টসহ ৩ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। চরম ডলার সঙ্কটের মুহূর্তে তিনি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রেখেছেন।
অনুভূতি জানাতে গিয়ে সাহাব উদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্মান তথা সিআইপি নির্বাচন করায় দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে। “প্রবাসী ভাইদের কল্যাণে আমি সবসময় নিবেদিত। আজীবন দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করতে চাই। অতীতের মতো ভবিষ্যতেও এলাকার গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে থাকবো''- অঙ্গীকার করেন তিনি।
নির্বাচিত এনআরবি সিআইপি হিসেবে অহিদুর রহমান অহিদ, রুহুল আমিন সরকার ও মুহাম্মদ সাহাব উদ্দিন যে সব সুবিধা পাবেন তার মধ্যে রয়েছে : সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারি বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী কমিটিতে সদস্য হওয়ার যোগ্যতা, দেশে-বিদেশে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অগ্রাধিকার, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোতে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের অনুষ্ঠানে অতিথি এবং বাংলাদেশে উপস্থিত থাকলে বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান এবং সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ পাবেন।
এ ছাড়া এনআরবি সিআইপিরা বিমান, রেল, সড়ক ও জলযানে আসন সংরক্ষণে অগ্রাধিকার পাবেন। বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ও স্পেশাল হ্যান্ডলিংয়ের সুবিধা পাবেন। সিআইপিদের স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও নিজের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে কেবিন সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মতোই সুযোগ-সুবিধাও পাবেন প্রবাসী সিআইপিরা।