প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
নদী পাঠ
আসুন নদী পাঠ করি
শীর্ণ খরা প্লাবিত নদী
একদা পরাণ মাঝির ছলাৎ ছলাৎ বৈঠা
নদীর শিরদাঁড়া বেয়ে ঢেউ উঠতো
এখন ক্যানভাসে গুণ টানে হাশেম খান।
নদী বধে খণ্ড খণ্ড জলাশয়
আফ্রিকান মাছের রাক্ষুসী খামার
বালু উৎপাদনে সভ্যতার আহার
অতঃপর পরিত্যক্ত জেলেপল্লীতে
আবাসন প্রকল্পের নাম নদী।
অনেক দিন আগের কথা
একদা নদী ছিলো নারী
নৌকা ছিলো, ভিতরে নাইওরী
বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না ছিলো
ছিলো লগি, বাঁশ, টেঁটা, বড়শি
নদী ছিলো ঊর্বশী।
সেনানিবাস
আমার দেহে একদল সৈন্য আছে
রাতের অন্ধকারে ওরা বেরিয়ে পড়ে
খোঁজে জলসাঘর আনন্দ হৈ-হুল্লোড়
আমার দেহে আর একদল সৈন্য আছে
যুদ্ধ করে, পতাকা ধরে রাখে
আমার দেহে অন্য একদল সৈন্য আছে
ক্ষতস্থানে পট্টি লাগায়, কপালে হাত রাখে
অন্য আরেক দল সৈন্য আছে
মহড়ায় নামে, শীত তাড়ায়
আরেক দল সৈন্য আছে
তৈল মর্দন করে, কুস্তি লড়ে
সকাল-বিকাল স্বাস্থ্য বানায়
এছাড়া বড় একদল সৈন্য আছে, ঘুমিয়ে থাকে
ভালোবাসার ডাকে জেগে ওঠে।
আর কিছু সৈন্য আছে, করে চাষবাস
আমার দেহ একটি সংরক্ষিত সেনানিবাস।
জ্বর
যে বয়সে রাইতের জ্বর আসে
শরীর কাঁপে তির তির
জিহ্বায় কাঁপন লাগে, ঠোঁট অল্প অল্প ফাঁক হয়
দরজার কপাট খুইল্লা যায়
যদি তুমি চাও।
না চাইলেও শরীর কাঁপতে থাকবো
কাঁপতে কাঁপতে শইল্লে জ্বর আইবো
রাইতের জ্বর দিনে দেহা যায় না।
যারে দিনের বেলা চক্ষে চক্ষে রাহো
ইচ্ছা অইলে তারে ঘরে ঢুকতে দিতে পারো
আবার নাও দিতো পারো।
তোমার ইচ্ছায় শইল্লে জ্বর আসে না
আবার অনিচ্ছায়ও জ্বর আসে
অহন তুমি কী করবা
ঘর দরজা খিড়কি রাইত দিন সব এক কইরা দিবা?
কারে তুমি কবিতা শেখাও
তুমি কোন্ অতীতে বসে আছো একা
আমার শৈশবের ডালি হাতে
কোন্ সুদূরে বসে ভাবো
প্রেমময় জ্যোৎস্না রাতে
কোন্ নিকটে বসে দেখো
আমায় একা
কোন্ সমুদ্রে ভাসাও ভেলা
পারাপারে
কোন্ গৃহে করো বাস
আপন মনে
কোন্ সুরে করো গান
কার বিরহে
কার পরানে জ্বালো আলো
অন্ধকারে
কার মনে দাও ধরা
সঙ্গোপনে
কারে তুমি কবিতা শেখাও
কোন্ সকালে।
সবাই যুদ্ধে যায় না
জন্ম এক বিলাসী গল্প।
হাসপাতাল মিষ্টি আজান আনন্দ হৈচৈ
যখন দেখি ট্রেচারে ফিরছো তুমি ঘুমঘুম চোখে
জীবনের এক যুদ্ধ শেষে
বিজয়িনীর বেশে
পাশে ঘুমাচ্ছে তোমার সন্তান
তারপর প্রতিদিন প্রস্তুতি চলে
যুদ্ধক্ষেত্রের মহড়া চলে
যখন যুদ্ধের ডাক আসে
সবাই যুদ্ধে যায় না
যারা যায়
তারা ভালোবাসার ট্রেচারে ফিরে আসে।
খুঁজি যা কিছু আছে
আমার হাত খোঁজে মায়ের কদমবুচি
বাবার কলম
বোনের রঙিন পেন্সিল, খোকার ঘুড়ি লাটাই
বন্ধুর বিশ্বস্ত হাত
চাষার লাঙ্গল, মাঝির বৈঠা, প্রতীক্ষার ছিপ
মগডালে ডাসা ডাসা পেয়ারা, প্রজাপতি, ফড়িং
হারমোনিয়ামের রিড, শিল্পীর তুলি
শিক্ষকের চক, রোগীর নাড়ি
আমার হাত খোঁজে
যা কিছু আছে, এলএমজি রাইফেল, বন্দুক
আমি চোখ রাখি চোখে, সৈনিকের চোখে
কাজল দিঘির চোখে, আকাশ তারার চোখে, সবুজ মাঠের চোখে,
অনুবীক্ষণ আর দূরবীণের চোখে
আমি চোখ রাখি হাবলের টেলিস্কোপে
চোখ রাখি মমতায়
চোখ রাখি সমতায়
আমি চোখ রাখি পতাকায়
আমি চোখ রাখি কবিতায়।