বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

কলেজ জীবন
মাহমুদ হাসান খান

কুমিল্লায় নতুন পরিবেশে সব কিছুই অপরিচিত। মন বসছে না। ক্লাস চলছে দ্রুত গতিতে। কান্দিরপাড়ের কাছে ঝাউতলায় ফুফাত ভাইয়ের বাসায় থাকা। চৌধুরী ভিলা। চৌধুরী মার্কেটের মালিক। বাসায় একটা পুকুর ছিল বেশ বড়। পুকুরভর্তি মাছ ছিল। বাড়ির মালিক এমআই চৌধুরী সাহেবের বরশি দিয়ে মাছ ধরার খুব শখ ছিল। মাঝে মাঝে ওনার পাশে ঘাটলায় বসে মাছ ধরা দেখতাম। ভালই লাগত। কলেজের বাংলা ম্যাডামের ক্লাসটা ছিল অসাধারণ। ম্যাডাম ছিলেন ছোটখাট বেশ সুন্দর। আর পড়াতেন এত ভালো যে অন্যান্য সেকশনের ছেলেরাও এসে ভিড় জমাতো ম্যাডামের লেকচার শোনার জন্য। এদিকে ক্লাস শেষে কিছুটা সময় কমনরুমে টেবিল টেনিস খেলার জন্য সিরিয়াল ধরতে হতো। বছর শেষ হয়ে আসছে ১৯৭৭ সাল HSC ফাইনাল পরীক্ষার সময় এবং রুটিন ঘোষণা। এবার ফাইনাল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি। বছরের শেষে টের পেলাম সবাই প্রাইভেট পড়ছে বিভিন্ন স্যারের কাছে। আমার আর প্রাইভেট পড়া হয়নি। সেই একই কারণ আর্থিক অনটন। যাই হোক, দেড় বছরের মাথায় কলেজ জীবন শেষ। পরীক্ষা খুব একটা ভালো হয়নি। কিছুটা টেনশন। রেজাল্ট বের হলো ৭৭-এর আগস্টের দিকে। দ্বিতীয় বিভাগে পাস করলাম। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানে কোনো রকমে পাস করলাম মার্কশীট পাওয়ার পর দেখলাম। কী আর করা Bsc Engineering আর পড়া হলো না। কিন্তু Engineering পড়ব তাই চিটাগাং পলিটেকনিকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য একা একাই প্রথম চিটাগাং যাই। প্রচণ্ড বৃষ্টির মাঝে চিটাগাং গিয়ে পৌঁছি। রেল স্টেশন থেকে নেমে রিক্সা নিয়ে নাসিরাবাদ পলিটেকনিক গিয়ে স্কুল জীবনের সেই সাইকেলে করে নিয়ে যাওয়া বন্ধু মনজুর রুমে উঠি। বন্ধু আমার ঝঝঈ দিয়েই পলিটেকনিকে ভর্তি হয়। তারপর ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয়ে যাই। বন্ধু আমার তখন হলের সিনিয়র ভাই আবার ছাত্র-নেতাও বটে। ফলে হলে একটু তাড়াতাড়ি সীট পাই। তারপর আরেক নতুন জীবন প্রথম হলে থাকা আর সেই সাথে লেখাপড়া।

বন্ধু বলে কথা! চিটাগাং পলিটেকনিকে হল জীবনের প্রথম ১ মাস কাটে বন্ধু মনজুরের সাথে ডাবলিং করে। এখানে উল্লেখ্য না করলে আরেক বন্ধু মন খারাপ করবে, সে হল বন্ধু মনজুরের রুমমেট সবুর। দুজনই জাসদ ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতা। এই দুই বন্ধুর সহযোগিতায় এক মাসের মধ্যে আমি হলে আমার সীট পাই। আমার হলের নাম ছিল নজরুল ছাত্রাবাস। হলের সীট বরাদ্দের একটা নিয়ম ছিল প্রতি রুমে দুজন। রুমটাও বেশ বড়। বর্তমানের হলের দিকে তাকালে যা দেখি তাতে ঐ রুমে নিম্নে ছয়জন থাকার মত। আরেকটি নিয়ম ছিল প্রথম বর্ষের জন্য প্রথম তলা (গ্রাউন্ড ফ্লোর), দ্বিতীয় বর্ষের জন্য ২য় তলা আর তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩য় তলা। আমার রুম নম্বর ছিল ১০৩। আর সামনে ছিল বিশাল খেলার মাঠ। আমার রুমটায় বেশ বাতাস বইত। রুমের মুখখানি ছিল উত্তরমুখী। আর হোস্টেলটা ছিল ট-ঝযধাব। তাই দক্ষিণ দিকটাও ছিল খোলা। যাই হোক এবার নিজের রুমটাকে কিছু ছবি দিয়ে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখার পালা। যেহেতু খেলাপাগল মানুষ ছিলাম তাই সেই সময়ের তারকা ফুটবলার সালাউদ্দিন আর আবাহনীর ভক্ত হওয়ায় আবাহনীর খেলোয়াড়দের বড় বড় ছবি ছিল আমার রুমের দেয়ালে। চলতে থাকল লেখাপড়া প্রথম বর্ষে। সাথে খেলাধুলা। আমার সেকশন ছিল উ আর সেই সেকশনে জামিল নামে একজনের সাথে বন্ধুত্ব হলো। সে ভালো টেবিলটেনিস খেলতে পারত। সে আবার চিটাগাংয়ের ছেলে ছিল। সেন্ট প্লাসিড স্কুলের ছাত্র ছিল। ক্লাস শেষে কমনরুমে যাওয়া। তারপর ভিড় কমলে দুই বন্ধু মিলে আর স্কুল জীবনের বন্ধু মনজু মিলে দীর্ঘ সময় টেবিলটেনিস খেলে রুমে ফিরতে ফিরতে ৩টা বেজে যেত। ক্লান্ত শরীর একটু বিশ্রাম নিয়ে স্নান শেষে ডাইনিং এ গিয়ে ঠাণ্ডা খাবার খাওয়াই ছিল কপালে। আর আমরা দুই বন্ধু খেয়ে আসলে পর ডাইনিংয়ের বাবুর্চি নিশ্চিত হতো সবার খাওয়া শেষ। তবে কিছু দিন যাওয়ার পর বাবুর্চি ভাইয়াটা আমাদের দুজনের জন্যই মাছের বা মাংসের ভাল টুকরাটা আলাদা করে যে কাপ করা হত তা তার নিজস্ব আলমিরাতে রেখে দিত। অনেক ভালোবাসা ছিল সেই বাবুর্চি বন্ধুটার। ধীরে ধীরে সবকিছু আপন হতে লাগল। আর একটু তাড়াতাড়িই সবার সাথে পরিচয় হয়ে গেল বন্ধু মনজুর কারণে। তাকে সবাই ভালবাসত। একদিকে নেতা মানুষ আরেক দিকে কলেজের সব কর্মকাণ্ডেই ছিল তার অংশগ্রহণ। সকাল আর বিকালের নাস্তাটা অবশ্য বাহিরে করতে হতো। সকালে নাস্তা করতে বেশ কিছুটা পথ হেঁটে পাহাড়ের পাশ দিয়ে উঁচু নিচু পথ হেঁটে যেতে হতো বিহারী কলোনী বলত ঐ জায়গায়টায়। আমি আমার রুমমেট জাহাঙ্গীর, জামিল, মনজু আর সবুর মিলে প্রতিদিন একসাথে নাস্তা করতে যেতাম। আবার বিকালেও নাস্তা করতে যাওয়া লাগত খুলশি পাহাড় ডিঙ্গিয়ে নাসিরাবাদ মহিলা কলেজের মোড়ে। আসা-যাওয়ার পথের অনেক মধুর স্মৃতি আজও বেশ মনে পড়ে।

এভাবেই চলতে থাকল পাহাড় আর সমুদ্রের শহর চিটাগাংয়ের ছাত্রজীবন। দেখতে দেখতে 1st year 1st semister শেষে পরীক্ষা। অবশেষে রেজাল্ট। ফলাফল খুবই ভাল। কিছুদিন পর সুখবর মাসে ১৬৫ সরকারি বৃত্তিপ্রাপ্তি সাথে বেতন মওকুফ। 2nd Semister শুরু। সময়টা ১৯৮০। এখানে বলতে ভুলে গেছি আমার হল জীবনের রুমমেট জাহাঙ্গীর সে আবার ছিল ভালো ফুটবল খেলোয়াড়। চিটাগাং প্রথম বিভাগে আগ্রাবাদ নওজোয়ান স্পোর্টিং ক্লাবে নিয়মিত খেলোয়াড়। বাসা ছিল আগ্রাবাদে। তাই খুব একটা হলে থাকত না। তার মানি আমার রুমে আমি একাই। আর হল জীবনের সব বন্ধু আর নেতাদের আড্ডাটা আমার রুমেই ছিল। মূলত ছাত্রলীগের সভাপতি থাকত আমার পাশের রুমে ১০২-এ। শিবিরের দোর্দণ্ড প্রতাপ। ছাত্রদলেরও কলেজ রাজনীতিতে দাঁড়ানোর কোন সুযোগ ছিল না। ছাত্রশিবির ছাড়া কোনো কথা নেই। হলগুলো সব তাদের দখলে। এমনি করে 2nd Semister ও শেষ হলো। কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। খেলাধুলায় অংশগ্রহণ আর ইনডোর গেমসে টেবিল টেনিস এ রানার্সআপ হলাম একক এবং দ্বৈততে। ক্রিকেট খেলায়ও রানার্সআপ হলাম দলের নেতৃত্বে ছিল শাহিন নামের এক বন্ধু। আর আমার রুমমেটের দল ফুটবল খেলায় বিজয়ী হলো বেশ আনন্দ। এবার 2nd year এ Department choise করার পালা। আমি Mechanical Engineering নিলাম। Department -এর ক্লাস শুরুর প্রথম থেকেই লক্ষ ছিল ভাল রেজাল্ট করার কারণ ৫০% practical marks. যদি প্রথম তিনজনের মধ্যে থাকতে পারি তাহলে practical mark -এর একটা বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে। বুদ্ধিটা শিখিয়ে দিয়েছিল আমার সেই স্কুল জীবনের বন্ধু মনজু। তাই 2nd year 1st semister পরীক্ষায় 2nd হলাম। ভীষণ আনন্দ লাগছিল। স্যারদের সুনজরে এসে গেলাম। আরেক মজার স্মৃতি আজও মনে পড়ে ১৯৮০ সাল প্রতি শুক্রবার সিনেমা দেখা। চিটাগাং রেল স্টেশনের কাছে নুপুর আর দামপাড়া আলমাস সিনেমা হলে ছবি দেখা ছিল একটা রুটিন কাজ। আমি মনজু, সবুর আর মাঝে মাঝে কুতুব নামে আরেক বন্ধু মিলে ১৯৮০ সালে মোট ৪৩টি ছবি দেখি। বেশির ভাগ ছবিই ছিল সোফিয়া লরেনের আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইংরেজি ছবি। এছাড়া মাঝে মাঝে বাংলা ছবিও দেখা হতো। সেই সময় ভারতীয় হিন্দি ছবি সিনেমা হলে নিষিদ্ধ থাকলেও ভিসিআরে লুকিয়ে ১০ টাকা টিকেটের বিনিময়ে দেখত অনেকেই। কৌতুহলবসত একদিন আমি আর মনজু গেলাম হিন্দি ছবি দেখতে। কোথায় গিয়ে দেখেছি সেই জয়গাটার নাম মনে নেই তবে সরু পথ ধরে একটা বিল্ডিংয়ের গোডাউনের ভিতর যাই শর্ত একটা কথা বলা যাবে না। নিরবে যেতে হবে। ছবির নাম ছিল ‘বর্ষাত কা এক রাত’ নায়ক ছিলেন অমিতাভ বচ্চন আর নায়িকা ছিলেন রাখি। এইত জীবন চলছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়