প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। কাজেই শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ অপরিহার্য। কারণ সঠিক পরিচর্যা না হলে তারা হবে অপরিপূর্ণ, অপিরপক্ব। খেলাধুলা ও শরীরচর্চা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুর চিন্তার সৃজনশীল বিকাশ ঘটে, নেতৃত্বের দক্ষতা অর্জিত হয়, জয়-পরাজয় মেনে নেওয়ার সাহস বাড়ে, দেশপ্রেম জাগ্রত হয় এবং নৈতিক চরিত্রের বিকাশ ঘটে। শুধু তাই নয়, তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কমে যায়। আমরা বিভিন্ন গবেষণায় দেখতে পাই, শারীরিক ও মানসিকভাবে পরিপূর্ণ খুব কম মানুষ আছেন যারা অপরাধ, অনৈতিক কাজ ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত।
আজ দেশে যে কিশোর গ্যাং কালচার শুরু হয়েছে, তা রোধ করতে পর্যাপ্ত খেলাধুলার বিকল্প নেই। খেলাধুলা যে শুধু শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে তাই নয়, একজন খেলোয়াড় শুধু নিজের জন্য নয়, বরং নিজের দেশ ও জাতির জন্যও সম্মান ও পরিচিতি বয়ে আনতে পারে।
শারীরিক শিক্ষা মূলত জীবনের শিক্ষা। খেলাধুলা নিজেকে রক্ষা করতে শেখায়। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ-সবল যুবসমাজ প্রয়োজন। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা উচিত। এতে তারা যেমন সম্মানিত হবেন, তেমনি জাতিও বেড়ে উঠবে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে।
আধুনিক শারীরিক শিক্ষা হল শিশুর ব্যক্তিসত্তার পূর্ণ বিকাশের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক ও শিক্ষাশ্রয়ী একটি প্রচেষ্টা। শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক দিকের বৈশিষ্ট্য এবং প্রয়োজন অনুযায়ী খেলাধুলার শিক্ষাসূচি প্রণীত হয়।
তাই খেলাধুলার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি গড়ে উঠছে এই শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জীববিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞানের সমন্বয়ে। খেলাধুলা এমন একটি বিষয়, যার সঙ্গে সমাজবিজ্ঞান, পুষ্টিবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞান সম্পৃক্ত। আমাদের দেশে যে হারে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ জটিল ও কঠিন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে, তাতে এসব রোগ থেকে মুক্তি পেতে দেশে ব্যাপকভাবে শারীরিক শিক্ষার প্রচলন করা প্রয়োজন।
কালের বিবর্তনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ডিসিপ্লিন হিসাবে সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও তা হয়নি। এর অন্যতম কারণ হলো আমাদের দেশে শারীরিক শিক্ষা সম্পর্কে নানা ভুল ধারণা। পৃথিবীর যে দেশ শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে যত উন্নত, সে দেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খেলাধুলায় তত উন্নত। আমরাও খেলাধুলায় উন্নত হতে চাই। আগামীর জন্য একটি সুস্থ জাতি চাই। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং অভিভাবকদের সচেতনতার মাধ্যমে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব।
সুধীর বরণ মাঝি : শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, হাইমচর, চাঁদপুর।