প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
সুমন মজুমদার। চাঁদপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক। মতলব উত্তর উপজেলার কৃতী সন্তান। বাবা লুধুয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে দীর্ঘ ৩৪ বছর শিক্ষকতা করেন। বাবার স্বপ্ন ছিলো ছেলে শিক্ষক হোক। শিক্ষক পরিবারের সন্তান সুমন মজুমদার শৈশব থেকেই শিক্ষকতার উপলব্ধি অন্তরে লালন করেন।
সুমন মজুমদার সম্প্রতি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ‘শিক্ষাঙ্গন’ বিভাগের মুখোমুখি হন। সাক্ষাৎকারটি আজ ছাপা হলো।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?
সুমন মজুমদার : সকলের দোয়ায় ভালো আছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষকতা পেশায় কীভাবে এলেন?
সুমন মজুমদার : ২০১১ সালের নভেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে ২০১২ সালের ১৮ মার্চ চাঁদপুরে অগ্রণী ব্যাংকের স্টেশন রোড শাখায় অফিসার হিসেবে যোগদান করি। আমার বাবা মতলব উত্তর উপজেলার লুধুয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে দীর্ঘ ৩৪ বছর শিক্ষকতা করেছিলেন। আমি শৈশবকাল থেকেই শিক্ষকতাকে উপলব্ধি করেছিলাম এবং অন্তরে লালন করেছিলাম। আমার বাবারও একান্ত ইচ্ছে ছিলো যে আমি একজন শিক্ষক হই। আমার বড় বোনও শিক্ষক। সবকিছু মিলিয়ে ৩৩তম বিসিএসে ৭ আগস্ট ২০১৪ সালে সোনাগাজী সরকারি কলেজ, ফেনীতে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা শুরু করি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষক হিসেবে প্রথম দিন কেমন কেটেছে?
সুমন মজুমদার : শিক্ষক হিসেবে প্রথম দিন তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। যোগদান করেই আমি ইতিহাস বিষয়ে মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থী পেয়েছিলাম। ওইদিন মন খুব খারাপ ছিল।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার ছাত্রজীবন সম্পর্কে কিছু বলুন।
সুমন মজুমদার : আমি শিক্ষক পরিবারের সন্তান। মা প্রাইমারি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু পড়াশোনার বিষয়ে মায়ের কাছে থেকেই অনেক বেশি পিটুনি খেয়েছিলাম। বাবা ছিল প্রচণ্ড রাগী মানুষ। বাবার হাতে পিটুনি খেয়ে অনেকেই দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যারা প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি তারাও আফসোস করে কেন যে স্যারের কথা শুনলাম না। বাবার শাসন খুবই কঠোর ছিল। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে বাসায় পড়তে বসতে হত। সব সময় শব্দ করে পড়তে হত। আড্ডা দেওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। স্কুল ও কলেজে শতভাগ উপস্থিত থাকতে হয়েছিল। আমি লুধুয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি সম্পন্ন করেছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এক বছরের ইংরেজি ভাষা কোর্স ও ছয় মাসের কম্পিউটার কোর্স সম্পন্ন করেছিলাম। এছাড়াও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড থেকে ছয় মাসের কম্পিউটার কোর্স সম্পন্ন করেছিলাম। বাবা শিক্ষক হওয়ার কারণে আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না, ফলে পুরো ছাত্রজীবনই টিউশনির উপর নির্ভরশীল ছিলাম। বলা যায়, পুরো ছাত্রজীবনই অসাধারণ ছিল।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনাদের সময়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ও বর্তমান সময়ের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কী পার্থক্য লক্ষ্য করেন?
সুমন মজুমদার : আমাদের সময়ের শিক্ষা ব্যবস্থাই ভাল ছিল। যেমন : কোন একটা টপিকস নিয়ে শিক্ষক ক্লাসে পড়াতেন, যারা ভাল ছাত্র ছিল তারা সহজেই ক্লাসে বুঝে যেত। অন্যদিকে যারা ক্লাসে বুঝত না তারা মুখস্ত করত অথবা প্রাইভেটের আশ্রয় নিত। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থীকে পাস করার জন্য ঐ টপিকসটা পড়তেই হত। বলা যায়, টপিকস সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে হত। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর জ্ঞান অর্জন ছাড়া কেবলমাত্র উপলব্ধি থেকে উত্তর দিয়ে পাস করা সম্ভব হচ্ছে। আমাদের সময়ে না পড়ে পাস করা যেত না। যারাই পাস করেছে তারাই আজকের সমাজে প্রতিষ্ঠিত। অন্যদিকে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় পরীক্ষা দিলেই পাস।
চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
সুমন মজুমদার : ব্যক্তিগত জীবন থেকে বলি, আমি সকাল ৫.৩০-৬টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠতাম এবং ৩০-৪০ মিনিট দৌড়াতাম। তারপর পড়তে বসতাম। ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষার আগে দৈনিক ১৫-১৬ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছিলাম। এত দীর্ঘ সময় বসে থাকা সম্ভব হত শুধুমাত্র ব্যায়াম করার কারণেই। আমি মনে করি, খেলাধুলা ব্যতীত পড়াশোনায় মনোনিবেশ করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম দৈনিক এক ঘণ্টা খেলাধুলা করা উচিত। নিয়মিত খেলাধুলার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার বিদ্যানিকেতনটি সম্পর্কে কিছু বলুন।
সুমন মজুমদার : চাঁদপুর সরকারি কলেজ চাঁদপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমাদের বিদ্যানিকেতনটি এক কথায় অসাধারণ। সুন্দর পরিবেশ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবান্ধব, শিক্ষাবান্ধব, নান্দনিক ম্যুরাল সবকিছুই কলেজটিকে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। বিদ্যানিকেতনটিকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ স্যারের নেতৃত্বে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার প্রিয় শিক্ষার্থী কারা? কেন প্রিয়?
সুমন মজুমদার : আমি পড়িয়েছি এমন সকল শিক্ষার্থীই আমার কাছে প্রিয়। আমার শিক্ষার্থীরা দেশে ও বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠিত শিক্ষার্থীরাই আমার কাছে প্রিয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষকতা জীবনের একটি আনন্দের ঘটনা বলুন।
সুমন মজুমদার : আমি চাঁদপুর জেলার সন্তান। আমি যেখানে শিক্ষকতা করি সেখানে আমাদেরই ভবিষ্যৎ শিক্ষাগ্রহণ করছে। আমি প্রতিষ্ঠানটিকে অন্তরে ধারণ করি। প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করে আমি প্রতিনিয়তই আনন্দ পাই।