প্রকাশ : ৩১ মে ২০২২, ০০:০০
প্রথমেই মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট শোকরিয়া আদায় করছি এজন্যে যে, জীবনে যতোগুলো সফলতা এসেছে, যতোগুলো অর্জন এসেছে; তা শুধু সম্ভব হয়েছিলো ঐতিহ্যবাহী প্রাণের বিদ্যাপীঠ চাঁদপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হওয়ায়। এ ক্যাম্পাস আমাকে অনেক দিয়েছে, প্রতিভা বিকাশের মূল ভিত্তিস্তম্ভ এ ক্যাম্পাস। এখানেই শেষ নয়, এ সফলতার পেছনে যাঁদের অনুপ্রেরণা আছে আমি আজ তাঁদের কথাই বলছি। ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী আমি উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয় পেয়ে খুশি হইনি তেমন! পরিবর্তন করার জন্যে মাইগ্রেশানেও আবেদন করেছিলাম। নানারকম হতাশায় কয়েকমাস অতিবাহিত হলো। কিন্তু যখন বিভাগে নিয়মিত ক্লাস ও শিক্ষকদের সান্নিধ্যে থাকার পর আমার অনুসন্ধিৎসু মনটা ঠিক করে নিলো যে আমাকে বৃক্ষের মতোই মহৎ গুণের অধিকারী হতে হবে। আমাকে এ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা নেবার জন্যে আরও কৌতূহলী করে তুললেন তখন বিভাগীয় প্রধান ড. সুশীল কুমার নাহা স্যার। তিনি আমার প্রিয় শিক্ষকদের একজন। স্যার সবসময় গবেষণাধর্মী, উদ্ভাবনী ধারণা দিতেন। কিভাবে একজন মানুষ পরিপূর্ণ জ্ঞানী মানুষ হয়ে উঠতে পারেন, নিত্যকার প্রতিকূলতায় কিভাবে মোকাবিলা করতে হয় তার বার্তা দিতেন। উদ্ভিদকূলের সাথে মনুষ্যকূলের যে মিথস্ক্রিয়া রয়েছে এই জটিল ধারণা সহজেই তিনি আমাকে দিয়েছিলেন, যা আমার চাকরিজীবনের একটি ভাইবাবোর্ডে ফলপ্রসূ হয়েছিলো। গতানুগতিক ক্লাস আর পড়াশোনার মধ্যে হঠাৎ কলেজে একদিন বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বাছাই পর্ব, স্যার আমাকে অংশগ্রহণ করার জন্যে জনাব মোঃ মাহফুজুর রহমান স্যারকে মাঠে নিয়ে যেতে বললেন। আমি গিয়ে অংশগ্রহণ করে সবগুলো পর্বেই প্রথম স্থান অর্জন করি।
বিভাগের সব শিক্ষকগণ এতো খুশি হয়েছিলেন যে আর তখনই এ আনন্দের বার্তাটি পৌঁছাতে সে সময়ের অধ্যক্ষ প্রফেসর মিহির লাল সাহা স্যারের সাথে দেখা করলেন। এরপর থেকে কলেজের এবং কলেজের বাহিরে যতো প্রতিযোগিতা হতো সব কিছুতেই যেনো আমার অংশগ্রহণ হয় তিনি খোঁজখবর রাখতেন। স্যার আমাকে কলেজের গ্রন্থাগারে নিয়মিত পত্রিকা পড়ার জন্যে বলতেন। সেখানে যেতে যেতেই সম্পর্কটা আত্মিক হয়ে যায় সে সময়ের গ্রন্থাগারিক তৃপ্তি সাহা নিভা ম্যামের সাথে। তিনি আমাকে একেবারে বইয়ের সাথে সম্পর্ক বাঁধালেন। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে অনুপ্রেরণার দাবিদার তিনি। তিনি আমার প্রতি এতটাই আশাবাদী ছিলেন যে, আমার বড় হবার স্বপ্ন নিয়ে পত্রিকায় তিনি কলাম লিখেছিলেন। তিনি এবং সুশীল কুমার নাহা স্যার যখনই অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষ স্যারের সামনে যেতেন আমার সফলতা এবং সার্বিক অবস্থার কথা তুলে ধরতেন। অত্র কলেজের সকল বিভাগের শিক্ষকগণ আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। এটা আমার জীবনের পরম প্রাপ্তি। এমনকি পহেলা বৈশাখ কিংবা অন্য কোনো কালচারাল প্রোগ্রামে কিছু সময়ের জন্যে বাংলা ও সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্রী হয়ে যেতাম।
এগুলো নিয়ে অনেক রোমাঞ্চকর মজার ঘটনাও আছে। বিভাগের জনাব মোহাম্মদ কামরুল হাছান স্যার তিনিও আমার সফলতা ও অনুপ্রেরণায় অবিচ্ছেদ্য অংশ। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানানোর জন্যে কোনো কারণে যদি মোবাইল বন্ধ থাকতো কেশব দাকে অথবা অনেক সময় নিজেই গিয়ে শেখ হাসিনা ছাত্রী নিবাসের গেটে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা গল্পের মাধ্যমে আমাদের সামনে উপস্থাপন করতেন, যা সফলতার একটা বড় অনুপ্রেরণা। তাঁদের অনুপ্রেরণায়, সহযোগিতায় জীবনে অনেক উচ্চপদস্থ ব্যক্তির সান্নিধ্যে ও স্থানে যাবার সুযোগ হয়েছে; জাতীয় পর্যায়ে ঢাকা মেডিকেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজের মতো স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পেছনে ফেলে চাঁদপুর সরকারি কলেজের অবস্থানকে সেরা হিসেবে তুলে ধরার সুযোগ হয়েছে। ২০১৮-তে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে ১ম স্থান অর্জন, ২০১৭-তে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাট ও কাস্টমস্-এ সেরা দশে চতুর্থ স্থান অর্জন করে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর নিকট সম্মাননা স্মারক ও পুরস্কার গ্রহণ, ২০১৪ জাতীয় পর্যায়ে মাদকবিরোধী রচনা প্রতিযোগিতায় সেরা ৩০ জনের মধ্যে ১৩তম, জাতীয় শিক্ষা ২০১৬-তে কলেজ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীর সনদ অর্জন, ২০১৬-তে জেলা পর্যায়ে মাদকবিরোধী রচনা প্রতিযোগিতায় ১ম পুরস্কার অর্জন, এছাড়াও জেলা সরকারি গ্রন্থাগারসহ জেলার অন্যান্য প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অর্জনের পেছনের মূলমন্ত্র ছিলেন তাঁদের অনুপ্রেরণা।
আমার লেখাপড়া, বিএনসিসি, বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিষয়ে অনেক উৎসাহিত করেছেন এ বিভাগের জনাব মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান স্যার। তাঁদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ ও চির ঋণী। লেখাপড়ায় বিভাগে সর্বোচ্চ ফলাফল ও সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমে সর্বোচ্চ সফলতায় ড. এ.এস.এম. দেলোয়ার হোসাইন অধ্যক্ষ মহোদয় আমাকে সবসময় ‘আমাদের কলেজের বেগম রোকেয়া’ বলে ডাকতেন। এই স্বীকৃতি আমার আমৃত্যু অনুপ্রেরণা। সফলতার স্বপ্ন দেখাতে সবাই পারে না, কিন্তু তাঁরা আমাকে যে আলোর পথ দেখিয়েছেন তা আমার জীবনের সফলতার সোপান হিসেবে বলীয়ান হয়ে থাকবে। সংকটে কিংবা সমস্যা সমাধানে, মমতাময়ী মা, পিতৃসুলভ অথবা বড় ভাইয়ের মতো পাশে পেয়েছি। প্রত্যাশা হলো তাঁদের এই অনুপ্রেরণা, দোয়া/আশীর্বাদ নিয়ে জীবনে আরও বহুদূর এগিয়ে যাবো।
ফাতেমাতুজ-জোহরা : সাবেক শিক্ষার্থী,
অনার্স শিক্ষাবর্ষ ২০১০-১১।