সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

শিক্ষায় স্বাভাবিকতা
অনলাইন ডেস্ক

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় ১৫ মার্চ থেকে পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরও আগে থেকেই সশরীরে ক্লাস ও পরীক্ষা চলছে। ক্যাম্পাস ফিরেছে পুরনো পরিবেশে। লেখাপড়া, পরীক্ষা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত বাংলাদেশের প্রায় সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি, এইচএসসি ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্যে সপ্তাহে প্রতিদিন ক্লাসের ব্যবস্থা রেখে অষ্টমণ্ডনবম শ্র্রেণীতে দুদিন এবং ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণীতে একদিন করে ক্লাস শুরু করেছিল। ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী করোনার ডাবল ডোজ এবং ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থীকে এক টিকা দেয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করতে আর কোন বাধা নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণও করোনাকালীন দুই বছরের শিখন ঘাটতি পুষিয়ে নিতে নিয়েছেন নানা পরিকল্পনা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ১৯ জুন এসএসসি ও সমমান এবং ২২ আগস্ট এইচএসসিও সমমান পরীক্ষা গ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেছে। পরীক্ষাগুলো সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে তিন ঘণ্টার পরিবর্তে দুই ঘণ্টায় নেয়া হবে। পূর্ণমান ১০০ নম্বরের পরিবর্তে বিজ্ঞানে ৪৫ এবং মানবিকে ৫৫ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা সশরীরে ক্লাসে থাকলেও অনলাইনের প্রতি তাদের আগ্রহ রয়ে গেছে। ব্যবহারিক পরীক্ষা ব্যতীত সাধারণ কোর্সগুলোতে অনলাইনে লেখাপড়ার সুযোগ-সুবিধা অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি ক্লাসের চেয়েও ইন্টারেক্টিভ ছিল। অনলাইন ক্লাসরুমে পাঠ্যসূচি আপলোড করা, মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন সেট করা এবং শিক্ষকের রেকর্ডকৃত অংশ বারেবারে ব্যবহার করার সুযোগটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। গুগোল-মিট, গুগোল-ক্লাসরুম, জুম, ক্যানভাস ইত্যাদি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মধুর অভিজ্ঞতা সহজে ভোলার নয়। সরকারও বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উচ্চশিক্ষায় ব্লেন্ডেড এডুকেশন নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে। শিক্ষামন্ত্রীর পরামর্শে ইউজিসি এবং বিডিরেন-এর সহায়তায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ব্লেন্ডেড লার্নিং সেন্টার নতুন এই প্ল্যাটফর্মের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। ২০২৩ সাল থেকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ অনলাইনে রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে শতভাগ বাস্তবায়ন জরুরি। এর জন্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ব্লেন্ডেড এডুকেশন নীতিমালা বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেলকে শক্তিশালী করাসহ উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা রেখে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। নীতিমালায় ¯œাতকদের নেতৃত্বের বিকাশ, উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা ও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে নজর দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের নীতিমালায় সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণের উদ্যোগ নেবে বলে আশা করছি।

করোনাকালীন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়মিত শিক্ষার্থী ভর্তি করলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারে। মাত্র কিছুদিন আগে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে ক্লাস শুরু হয়েছে। অতিমারীর কারণে এসব শিক্ষার্থীর জীবন থেকে মূল্যবান দুটি বছর নষ্ট হয়েছে। তাই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে দ্রুত শিক্ষাবর্ষ শেষ করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের অযথা মিটিং, মিছিল, হোন্ডা ও কন্ট্রাক্টরের পেছনে ঘোরাঘুরি না করে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করা উচিত। অর্জিত অনলাইনের অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ব্লেন্ডেড পদ্ধতি এখন থেকেই চলমান রাখা উচিত। দুই বছরের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে রমজান, ঈদ, গ্রীষ্ম, পূজা ছুটিগুলো কমিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করা যেতে পারে। প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র বছরে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা, ভর্তি ও ক্লাস শুরু করার ওপর জোর দিতে হবে। এতে গবেষণাসহ পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমে বেশি সময় দিতে পারবে শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় কর্মমুখী শিক্ষা তথা আউটকাম বেজড এডুকেশন (ঙইঊ) কারিকুলাম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দৈনন্দিন কাজের ওপর মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং সবার জন্য উচ্চশিক্ষা না রেখে ভোকেশনাল বা হাতে-কলমে শিক্ষাব্যবস্থার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা মূল বিষয়ের ওপর যথেষ্ট সময় না দিয়ে বিসিএস কিংবা সরকারি চাকরির গাইড বই নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ফলে ইন্টারভিউ বোর্ডে কাক্সিক্ষত পারফরম্যান্স দেখাতে পারে না। এর কারণ চাকরির সীমিত আসন তা কিন্তু নয়। কর্মবিমুখ মুখস্থবিদ্যাই এবং মূল কারণ। আরও দায়ী শিল্পবান্ধব ও যুগোপযোগী প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা কারিকুলামের অভাব।

বিশ্বে এখন চলছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগ। যেখানে মানুষের বুদ্ধি, তথ্যপ্রযুক্তি, মেশিন লার্নিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে দৈনন্দিন কাজকর্ম ও বিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামে প্রযুক্তিনির্ভর এসব বিভাগ ও বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে আধুনিক আইটি ফ্যাসিলিটিজ, ডিজিটাল কনটেন্ট, ডিজিটাল লাইব্রেরী, অনলাইন জার্নালের অবাধ এক্সেস, দ্রুতগতির ইন্টারনেট, গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবরেশন, আন্তর্জাতিক সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে নিয়মিত অংশগ্রহণকরত বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানকে সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া খুবই জরুরি। শিক্ষা ও গবেষণায় মাতৃভাষার কোন বিকল্প নেই। তবু আন্তর্জাতিক চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চশিক্ষা, ফ্রিলান্সিং এবং আউটসোর্সিংয়ের জন্য ইংরেজির ওপর জোর দিতে হবে। সে কারণে টোফেল, আইইএলটিএস, জিআরই, জিম্যাট ইত্যাদি প্রচলিত শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ক্লাস, পরীক্ষা ও ফল প্রকাশের কার্যকর ব্যবস্থা এবং পরীক্ষা শেষে আবাসিক হল ছেড়ে দিয়ে নবীনদের পথ সুগম করতে হবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি কো-কারিকুলাম এক্টিভিটিস, যেমন-আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং নিয়মিতভাবে ছাত্রসংসদ নির্বাচন দেয়া উচিত। আধুনিক জিমনেসিয়াম, সুসজ্জিত ব্যায়ামাগার এবং ডে-কেয়ার সেন্টার এখন সময়ের দাবি। অন্ধ ও ডিজএবল শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক শ্রেণীকক্ষ থাকা বাঞ্ছনীয়। বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম প্রবর্তন এবং ইন্ডাস্ট্রি মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে জব ফেয়ার আয়োজন করা উচিত।

সম্প্রতি চীনে পুনরায় করোনা সংক্রমণ তীব্র রূপ ধারণ করেছে। দেশটিতে বিভিন্ন শহরে লকডাউন জারিসহ অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ করা হয়েছে। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায়ও করোনা সংক্রমণ নতুন করে শুরু হয়েছে। একদিনে (৯ মার্চ) সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৬ জনের আক্রমণ ও ১৫৮ জনের মৃত্যুর খবর বিশ্ববাসীকে ভাবিয়ে তুলছে। আমাদের দেশ এখন অনেকটা করোনা শঙ্কামুক্ত হলেও মানুষের চলাচল ও সমাগম দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে কখনও করোনা ছিল না এবং ভবিষ্যতেও আসবে না। বিষয়টিকে এত হালকাভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই। আমরা জানি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন খুব মজবুত। অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। বাঙালি পরিশ্রমী ও বীরের জাতি হিসেবেও পরিচিত। সভ্য, ভদ্র, সুশৃঙ্খল এবং সহনশীলতায় বাঙালির জুড়ি নেই। তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুসম্পর্ক বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধির সকল নিয়মণ্ডকানুন মেনে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার কোনো বিকল্প নেই।

লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়