প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
আজ ঘুম থেকে উঠেই মায়ের মুখ মনে পড়লো। এরকম রোজ হয় না, শিক্ষক দিবসে মায়ের কথা প্রথম মনে এলো। মানে, মন যা মানে স্মরণে তাই আসে। হ্যাঁ, মা-ই আমার প্রথম শিক্ষক। আমার কেনো সব মানুষেরই মা প্রথম শিক্ষক। শুধু মানুষ কেনো সমস্ত প্রাণী জগতে মা-ই প্রথম শিক্ষক।
মায়ের কাছে ছিলো সব আবদার, সব প্রশ্ন, সব চাওয়া-পাওয়া, রূপকথার গল্পের কল্পনার জগতে বিচরণ মায়ের হাত ধরে আর বাস্তবে আনন্দ, উৎসাহ, ভরসা সব পেতাম মায়ের কাছে। আমার জগৎজুড়ে মা।
আমার স্কুলের নাম মাতৃপীঠ গভর্নমেন্ট গার্লস্ হাইস্কুল, চাঁদপুর। মা আমাদের স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। সেই সূত্রে আক্ষরিক অর্থে মা আমার শিক্ষিকা বা শিক্ষক। জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত মা আমার শিক্ষক। আজ মা পৃথিবীতে নেই, তবে মায়ের শেখানো সব কথা, কাজ, মনে রাখার চেষ্টা করি। সবটা পারি না। কারণ মা ছিলেন অসাধারণ। মায়ের অমায়িক ব্যবহার, ধৈর্য্য, সহ্যশক্তি ছিলো। এ সমস্ত গুণাবলি একজন শিক্ষককে তাঁর ছাত্র-ছাত্রীর কাছে এবং পরিবারেও বিশেষ সম্মান, পরিচিতি দেয় আর চিরদিন স্মরণীয় করে রাখে।
আমার স্কুলের সব শিক্ষিকার নাম আজ আর মনে নেই। তবু যাঁদের নাম মনে আছে তাঁরা হলেন, প্রথমেই আমার মা প্রভাবতী তালুকদার ও খুব ছোটবেলার শিক্ষিকা লক্ষ্মী রায়, ইভা সরকার, পূর্ণিমা রক্ষিত, রহিমা বেগম, মহেন্দ্র ঘোষ, অম্বরিস তালুকদার ও বিষ্ণু চরণ পাল। একজন স্যারের কথা বিশেষভাবে মনে পড়ছে, তিনি মানিক লাল রায়। আমাদের ফিজিক্স পড়াতেন। তাঁর মতো শিক্ষক বিরল। যে কোনো চ্যাপ্টার ধরে এমন সুন্দর করে বোঝাতেন যে সহজেই বুঝে যেতাম, বোঝানো হয়ে গেলে বলতেন ‘কে কী বুঝলি বল’ কেউ কিছুই বলতো না। তখন উনি নাম ধরে জিজ্ঞেস করতেন ‘তুই বুঝেছিস্, তুই বুঝেছিস্?’ বলতাম ‘হ্যাঁ স্যার বুঝেছি’। ‘বল কি বুঝেছিস্’ আমিও গর গর করে বলে যেতাম। আসলে তাঁর বোঝানোর স্টাইল এমন চমৎকার ছিলো যে কেউ না বুঝে থাকতেই পারে না। ব্যাস আমার পড়া দেয়া সেদিনই হয়ে যেতো। ওই পড়াটা পরেরদিন তৈরি করে আনার জন্যে স্যার বোঝাতেন। পরের দিন আমাকে আর ধরতেন না। এমন চমৎকার বোঝানো স্যার আর পাইনি। উনি যেখানেই থাকুন তাঁকে প্রণাম জানাই।
আরো পেয়েছি সখিনা বেগম, উনি হলেন রহিমা বেগম দিদিমণির ছোট বোন। লীলা মজুমদার, মামুন স্যার, অনিল স্যার, ননী গোপাল স্যার, মেজবাহ উদ্দিন স্যার। আরো অনেকের নাম মনে করতে পারছি না। সেজন্যে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে ক্ষমা চাইছি।
সখিনা বেগাম দিদিমণি ভূগোল পড়াতেন। পরে উনি হেডমিস্ট্রেস হয়েছিলেন। আমি জানি উনি এখন ঢাকায় থাকেন। আমার সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা যে যেখানে থাকুন প্রত্যেককে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই।
কলকাতায় বিবেকানন্দ কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে একজন ছিলেন দেবেশ মুখার্জী। কেমিস্ট্রি পড়াতেন। ওনার বাড়ি গিয়েও কতবার স্যারের ক্লাস করেছি। আর একজন কমল পানি চৌধুরী। অনিতা চক্রবর্তী। আরও কত জন। সবাইকে প্রণাম।
এবার আসি ঘরের শিক্ষিকার কথায়। মা ঘরে বাইরে সব সময় শিখিয়েছেন। আর ঘরে আমার দিদি। এলজব্রা, জ্যামিতি জলের মতো সোজা করে বুঝিয়ে দিতেন। দিদির কাছে জানতে চাইতাম বাজ পড়লে শব্দ হয় কেনো, আলো হয় কেনো, দিদি সব গল্পের মতো বুঝিয়ে দিতেন। তাছাড়া বই বা পাঠের বাইরে জাগতিক ও সাংসারিক শিক্ষা সব মা আর দিদির কাছে শেখা।
এছাড়া চাকরি জীবনেও অনেকের কাছে অনেক কিছু শিখেছি। কাজের জায়গায় যখন কম্পিউটার এলো প্রত্যেককে ট্রেনিং দেয়া সম্ভব ছিলো না। তাই সবসময় কারো না কারো কাছে শিখে এগিয়ে গেছি। করতে করতে শিখেছি। আমার সহকর্মী সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
তাছাড়া জীবনের চলার পথে রোজ কিছু না কিছু শিখছি। সেগুলোও আমাদের অনেক সাহায্য করে সদা-সর্বদা। তাই আমার প্রণাম সমস্ত জানা-অজানা শিক্ষকদের। যাঁরা অনবরত শিক্ষা দিয়ে চলেছেন এবং আগামী প্রজন্মকেও দেবেন।
স্বাতী : প্রাক্তন শিক্ষার্থী, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদপুর।