সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক আমার ‘মা’
অনলাইন ডেস্ক

আমার মা আমার প্রথম শিক্ষক। আর পরিবার আমার প্রথম পাঠশালা। জীবনে মানুষ হয়ে উঠার ও আমার চারিত্রিক গুণাবলী সবকিছুই আমার পরিবার থেকে, বিশেষ করে আমার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। বিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হওয়ার পূর্বে আমার লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয় আমার মায়ের কাছ থেকে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম প্রথম বিদ্যালয়ে যেতে ভালোই লাগতো। কিন্তু লেখাপড়ার পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বইয়ের সাথে আমার দূরত্বও বেড়ে যেতে লাগলো পাল্লা দিয়ে। বাড়ির আঙিনায় দৌড়ঝাঁপ, হইচৈই আর খেলাধুলায় কাটতো আমার সারাবেলা। তখন মা আমাকে পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে ধরে বুঝাতেন যে, জীবনে বড় হতে হলে পড়াশোনার বিকল্প কিছুই নেই। কিন্তু শিশুমন কি আর ‘জীবনে বড় হওয়ার’ কথার মানে বুঝে! গ্রামের কাঁদামাটি ও ধুলাবালি গায়ে মেখে চারপাশ একাকার করে ফেলতাম। ফলে, তৃতীয় শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলে ভরাডুবি। বার্ষিক পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ হওয়ায় মা আমাকে অনেক কড়া শাসন করেন। তারপর মায়ের বকুনি খেয়ে পাঠে মনোযোগী হই। ফলশ্রুতিতে, ৫ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় ২য় স্থান অর্জন করি। আর তখন যারপরনাই উপলব্ধি করি মায়ের মুখ নিঃসৃত প্রতিটি কথাই অমীয় ও মূল্যবান।

বাবা প্রবাসী হওয়ায় আমরা দুই ভাই-বোন ও মা মিলে মামার বাড়িতে থাকতাম। সেখানেই আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম পাঠ শুরু। বাবা প্রবাস থেকে চলে আসার পর আমরা আমাদের গ্রামের বাড়িতে স্থায়ীভাবে ফিরে আসি। এখানে এসে পারিপার্শ্বিক অবস্থা পরখ করে যেটা বুঝলাম সেটা হলো, এখানকার অধিকাংশ মায়েরাই তাঁদের সন্তানদের পড়াশুনার ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। অনেক মা মনে করেন যে, মেয়েদের অত পড়াশুনা করার দরকার নেই। অথচ আমার মা স্রোতের বিপরীতে হাঁটা একজন নারী যিনি আমার পড়াশুনার ব্যাপারে সবসময় সচেতন ও উদ্বিগ্ন থাকেন। আমি পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেলাম কি না, আমি ক্লাসে ঠিকমত পড়া দিতে পেরেছি কি না, কিংবা আমার ‘বাড়ির কাজ’ ঠিকমতো শেষ করতে পেরেছি কি না- তিনি এই ভাবনায় যেন সারাক্ষণ আচ্ছন্ন থাকেন। আমাদের বিদ্যমান সমাজব্যবস্থায় এখনও অনেক মানুষ রয়েছেন যারা নারী শিক্ষা বিরোধী ও মেয়েদের শিক্ষা অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আমাকেও ঠিক এমন কিছু প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু আমার মা তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত ও সংগ্রামী মনোভাবের মাধ্যমে এ সকল বাঁধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে আমার পড়াশুনার পিছনে তাঁর সর্বোচ্চটা উজার করে দিচ্ছেন এখনও। তিনি প্রায়ই বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের পিছিয়ে পড়া একটি দেশ ও সমাজের উন্নতির পথে অন্তরায়। তিনি আমাকে যে কোনো প্রকারের অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিয়েছেন।

আমার মা শিক্ষা অর্জনে ছেলে মেয়ের মধ্যে পার্থক্য করাকে তীব্র ঘৃণার চোখে দেখেন। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের ভাই-বোনের লেখাপড়ার পেছনে আমার মায়ের সংগ্রামী ভূমিকা সম্পর্কে জানলে অন্য সকল মহীয়সী নারীর মতো আমার মাকেও সবাই সমাজের একজন আদর্শ নারী হিসেবে মূল্যায়ন করবে। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট যথার্থই বলেছেন, “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিবো। ” প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে কেউ যদি আমার কাছে জানতে চাইতো তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও, আমি তখন শিশুমনের সরলতায় উত্তর দিতাম, “আমি বড় হয়ে একজন ডাক্তার হতে চাই। ” বর্তমানে আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গ-ি পেরিয়ে মাধ্যমিক শ্রেণিতে পড়ছি। এখন যদি আপনি আমাকে ঠিক একই প্রশ্ন করেন, তবে আমি খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জবাব দিবো, “আমি আমার মায়ের মতো একজন আদর্শ নারী হতে চাই। ” ম।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়