সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

বাসস্থান কি ওদের অধিকার নয়?
অনলাইন ডেস্ক

এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান

জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ পিঠে

চলে যেতে হবে আমাদের।

চলে যাব-তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ,

প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল

এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি।

নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

কবি সুকান্ত এই পৃথিবীকে শিশুদের বাসযোগ্য করে যাওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার করে নিজের স্থান ছেড়ে দিতে রাজি ছিলেন। তাহলে আমরা কী পারবো না এই পৃথিবীকে শিশুবান্ধব করে গড়ে তুলতে? আমাদের শিশুদের মাঝেই সুপ্ত থাকে ভবিষ্যতের কবি, লেখক, শিল্পী, বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক সহ নানা ধরনের প্রতিভা।

আমাদের সমাজের রয়েছে নানান ধরনের শিশু। উদাহরণস্বরূপ পথশিশু হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে জানা গিয়েছে পিতাণ্ডমাতার বহু বিবাহ, সৎ বাবা-মা দ্বারা নির্যাতিত, ভূমিহীন হওয়া, কোনো প্রকার আশ্রয় না পাওয়া, পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়া, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, রাগ করে ঘর থেকে পালানো ইত্যাদি কারণে শিশুরা ঘর থেকে বের হয়ে পথে প্রান্তরে আশ্রয় নেয় পথশিশুদের মধ্যে মেয়ে শিশুরা সাধারণত বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীর কাছ থেকে প্ররোচিত হয়ে গ্রামগঞ্জ থেকে শহরে আসে। ছেলে শিশুরা নিজেরাই চলে আসে শহরে। গ্রাম ছেড়ে তারা শহরের খোলা আকাশের নীচে, ব্রিজের নীচে, প্লাটফর্মে, পার্কে, বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে রাত্রিযাপনে আশ্রয় নেয়। বাজার ও নৌ বা বাস টার্মিনাল-কেন্দ্রিক তাদের বসবাস। তারা ময়লা, আবর্জনা সংগ্রহ, বাদাম বিক্রি, কুলি, সিগারেট বিক্রি, হোটেলে পানি দেয়া, হোটেল বয়, গাড়ি ধোঁয়া-মোচা, ফুল বিক্রি, গৃহস্থালীর কাজ, মাদক বিক্রি, চুরি সহ নানা কাজের সঙ্গে জড়িত।পথশিশুদের জীবন ও জীবিকা অনেক কষ্টের। তারা রাত -দিন কাজ করে অল্প টাকা আয় করে। এ টাকা দিয়েরাস্তার ধারে খাবারের দোকান, ভ্রাম্যমান খাবারের দোকান থেকে খাবার কিনে খায়। আয় না হলে না খেয়েই দিন যাপন করে। এজন্য অধিকাংশ পথশিশু অপুষ্টিতে ভোগে। চর্মরোগ, ডায়রিয়া, ঠাণ্ডা, জ্বর, জন্ডিসসহ নানা রোগে তারা আক্রান্ত হয়। অসুস্থ হলে চিকিৎসার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত। একটি শার্ট, প্যান্ট পরেই তাদের দিন-রাত কাটাতে হয়।অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভেজা কাপড় ধোঁয়ার জন্য সাবান ও পানির অভাব। অন্যদিকে চুরি বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হাতে পথশিশুরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হয়।

পথশিশুদের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে সারাদেশে ৬টি ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে মোট আসন সংখ্যা ১হাজার ৯শ। প্রতিবন্ধী ও ভবঘুরে পথশিশুদের সেবা-যত্নের কোনো ব্যবস্তা আশ্রয় কেন্দ্রে নেই।উপরন্তু এসব আশ্রয় কেন্দ্রে জনবলেরও অভাব রয়েছে। অথচ শিশু আইন ১৯৭৪-এর পঞ্চম ভাগে দুস্থ ও অবহেলিত শিশুদের তত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় শিশুনীতি ২০১০ (খসরা) শিশুর অধিকার অংশের ৬,৪,৩নং ধারায় 'শিশুর পরিত্যক্ত ও আশ্রয়হীন হওয়ার মৌলিক কারণ অনুসন্ধানসহ পরিত্যক্ত ও নিরাশ্রয় শিশুর আশ্রয় ও খাদ্যসহ সুরক্ষার ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সেকানে শিশুর সামাজিক অধিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।

ঠিক তেমনি আমাদের সমাজে রয়েছে বেদে শিশু যারা বছরের বেশিরভাগ সময়ই নৌকায় খুব ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে। তাদের নেই নিজস্ব কোন বাড়ি-ঘর বা মাথা গুজার জায়গা। ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্ক ফোর্স, এনসিটিএফ এর একটি জরিপে দেখা গিয়েছে শিশুদের পড়ালেকা না করার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে একটি স্থায়ী বাসস্থান, যেখানের একটি শিশুর বাসস্থানের অধিকার তার মৌলিক অধিকার। বন্যার সময় ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়,বেদে শিশুদের নৌকা ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।পথশিশুদের জন্য সরকারি -বেসরকারি পর্যায়ে যেসব কার্যাবলী পরিচালিত হচ্ছে সেগুলো শিশুদের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন, প্রশিক্ষণ,কাউন্সিলিং প্রভৃতি নিশ্চিত করা আবশ্যক। গত অর্থ বচরে পথশিশুদের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তা পথশিশুদের জন্য আশাব্যঞ্জক নয়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ বাংলাদেশের সকল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের স্থান করে দেওয়ার জন্য। আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যত। এদের ঠিকমতো চাষ করা না হলে ফলন ভালো হবে না। তাই কবির ভাষায় বলতে চাই...

এইসব অসহায় শিশুরও আছে হৃদয়,

পথে পথে ঘুরে বেড়ায় তারা বড়ই অসহায়।

হায়রে পৃথিবীর নিয়তি,

দেশে সমৃদ্ধশীল মানুষের অভাব নেই,

অভাব শুধুই একটু সহানুভূতি!

কেন এমন হবে এই পথশিশুদের জীবন?

আমরাও করতে পারি ওদের একটু আপন।

আনাস ইবনে আলমগীর : সাধারণ সম্পাদক, ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্কফোর্স, এনসিটিএফ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়