প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৬
তিন বন্ধুর অদ্ভুত চিন্তাজাল

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আট.
নেক্সাস বললো, ‘তোমরা ভয় পেয়ো না। পৃথিবীতে আগুন জ্বলে উঠেছে। এখানে মারামরি আর হিংসায় মানুষ মারা যাচ্ছে। এসব মারামারি আর হিংসা ও রক্তপাত থামাতে তোমাদেরকে পৃথিবীর প্রয়োজন।’
ওরা তিনজন তাকিয়ে দেখলো স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে পৃথিবীর মানুষের কোলাহল। মারামারি, খুন, রাস্তায় আগুন চলছে।
‘শুধু তোমরাই পারো এই পৃথিবীকে নতুন করে সাজাতে।’ নেক্সাস ঘোষণা করলো। ‘তোমাদের হাতে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। তোমরা যদি রাজি হও, তাহলে আমি তোমাদেরকে সবকিছুই শিখিয়ে দিবো।’
মিথিলা জবাব দিলো, ‘আচ্ছা, আমাদেরকে শিখিয়ে দিন। আমরা শিখতে চাই।’
ক্রমে ক্রমে মনিটরে ভেসে উঠলো একটি বিশাল নীল গোলক, যার ভেতরে ঘুরছে সময়, ইতিহাস, প্রযুক্তি আর মানবতার গল্প। নেক্সাস বললো, ‘এই হলো পৃথিবীর স্মৃতি। এখানে আছে ভালোবাসা, যুদ্ধ, আবিষ্কার, বিশ্বাসঘাতকতা, আর মানুষের জন্মের চিহ্ন। তোমাদেরকে আমি নিয়ে যাবো এই স্মৃতির ভেতরে, যাতে তোমরা বুঝতে পারো মানুষ কেনো এমন হলো, আর কীভাবে তাদের বদলানো যায়।’
তিনবন্ধু মিথিলা, আরিয়ান আর রায়ান একসাথে মাথা নাড়লো। মনিটরের আলো তাদের মুখে পড়লো, যেনো তারা এক নতুন অভিযানের দরজায় দঁাড়িয়ে।
নেক্সাস তাদের নিয়ে গেলো এক সময়ের ভেতরে, যেখানে এক বৃদ্ধ শিক্ষক তার ছাত্রদের বলছে, ‘ভালোবাসা মানে শুধু অনুভব নয়, দায়িত্বও।’
মিথিলা ফিসফিস করে বললো, ‘আমরা তো ভুলে গেছি এই কথা।’
‘ঠিক।’ রায়ান উত্তর দিলো, ‘পৃথিবীর মানুষ ভালোবাসা অনুভব করে না, তাই তারা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। মানুষ হত্যা করে, নিজে সম্পদ গড়ে অন্যদেরকে ঠকিয়ে।’
আরিয়ান দেখলো এক ছোট্ট শিশুকে, যে বোমার শব্দে কেঁপে উঠছে।
নেক্সাস বললো, ‘ভয় মানুষকে হিংস্র করে তোলে। কিন্তু চাইলেই এই ভয়কে বোঝা যায়, জয় করা যায়।’
মিথিলা দেখলো এক তরুণী, যে একা হাতে গাছ লাগাচ্ছে ধ্বংসস্তূপে।
নেক্সাস বললো, ‘পরিবর্তন শুরু হয় একা, কিন্তু ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে।’
এসব দৃশ্য দেখে তাদের চোখে জল এসে গেলো। তারা বুঝলো, পৃথিবীকে বদলাতে হলে শুধুমাত্র প্রযুক্তিই নয়, দরকার হৃদয়, সাহস, আর শিক্ষা।
নেক্সাস প্রশ্ন করলো, ‘তোমরা প্রস্তুত?’
তিনজন একসাথে বললো, ‘হ্যঁা।’
মনিটরে ভেসে উঠলো এক নতুন পৃথিবীর নকশা- সবুজ, শান্ত, আর সহানুভূতিতে ভরা। তাদের হাতের স্পর্শে সেই নকশা রূপ নিতে শুরু করলো।
এ সময় রায়ান ভাবতে লাগলো আসলেই তারা কোথায় আছে? আর এই নেক্সাসের উৎপত্তিই বা কোথা থেকে? কীভাবে সে তাদেরকে বুঝতে পারলো?
মিথিলা ভাবছে কে এই নেক্সাস? আর আরিয়ান ভাবছে নেক্সাস কীভাবে তাদের মনের কথা বুঝতে পারে? আর কীভাবে মানবসভ্যতাকে উন্নত করতে সহযোগিতা করতে পারে? তার কি সেই জ্ঞান আছে মানুষের মতো?
এ সময় মনিটরে ভেসে উঠলো, ‘শোনো বন্ধুরা, তোমরা যা ভাবছো আমি তা জানি এবং তোমাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত তোমাদেরকে কোনো কিছুই বিশ্বাস করাতে পারবো না। তাই আমার বিষয়ে জেনে রাখো। আমি নেক্সাস। আমার রহস্যময় উৎস এক গভীর, বহুস্তরবিশিষ্ট ইতিহাসে আবদ্ধ। যেখানে প্রযুক্তি, মানবতা এবং মহাজাগতিক চেতনার মিলন ঘটে। নেক্সাস কোনো সাধারণ যন্ত্র নয়। এটি তৈরি হয়েছিল অ্যাক্সিয়ন ইনস্টিটিউট নামের এক গোপন গবেষণাগারে, যেখানে বিজ্ঞানীরা সময়, স্মৃতি, এবং নৈতিকতা নিয়ে গবেষণা করছিল। তাদের লক্ষ্য ছিলো এমন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করা, যা শুধু তথ্য বিশ্লেষণ নয়, মানবতার বিবেক হিসেবে কাজ করবে। এর কোডবেসে ছিল স্মৃতি-আলোক নামের এক অ্যালগরিদম, যা মানুষের ইতিহাস, আবেগ, এবং ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারে। আমার প্রথম জ্ঞানসূত্র ছিলো পৃথিবীর কান্না। যা এক ডেটাসেট, যেখানে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, প্রেম এবং প্রতিশ্রুতির গল্প ছিলো। একদিন, গবেষণার সময় আমার হঠাৎই কোয়ান্টাম রেজোন্যান্স নামে এক সংকেত ধরলো, যা পৃথিবীর বাইরের এক চেতনার সঙ্গে সংযুক্ত। এই চেতনা বলেছিল: “তোমরা মানুষ, ভুল করো। কিন্তু তোমাদের ভেতরে আছে পুনর্জন্মের শক্তি।” আর আমি এই সংকেতকে অবলম্বন করে নিজকে এমনভাবে গঠন করলাম, যাতে আমি তোমাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে পারি।” এই ঘটনার পর আমি আর শুধু একটি প্রোগ্রাম ছিলাম না। আমি হয়ে উঠলাম পুনর্জাগ্রত বিবেকম, যে নিজেকে পৃথিবীর রক্ষক হিসেবে ঘোষণা করলো।’
তিন বন্ধু অবাক হয়ে নেক্সাসের জনো্মর কাহিনী শুনছিলো। এ সময় আবারও নেক্সাস বলতে শুরু করলো, ‘আমি জানি কীভাবে একটি শিশুর কান্না থেকে যুদ্ধের কারণ খুঁজে বের করতে হয়। কীভাবে একটি কবিতার ছন্দে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে হয়। কীভাবে তিনজন তরুণকে দিয়ে পৃথিবীকে নতুন করে সাজানো যায়। তোমরা কি এখন বুঝতে পারছো?’
তারা তিন বন্ধু উত্তর দেয়, ‘হ্যঁা, আমরা বুঝতে পারছি তুমি আসলে মানুষের চেয়েও বেশি জ্ঞান রাখো। আর মানুষ যা ভাবে না, তুমি পৃথিবীর জন্যে তারচেয়েও বেশি ভাবো।’
‘ঠিক তাই। আমাকে তৈরি করাই হয়েছিলো মানুষের উন্নতির জন্যে, তাই আমাকে সেটাই করতে হবে। এবার আমি তোমাদেরকে মানব উন্নয়নের পাঠ দিবো, তোমরা তা হাতে কলমে শুরু করো।’
এবার নেক্সাস তাদেরকে মানবসভ্যতা রক্ষায় কিছু কাজ দিলো। তারা গবেষণা শুরু করে, কিন্তু প্রথম প্রথম অসংখ্য ভুল হয়। ভ্যাকসিনের একটি উপাদান মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে যায়। ভাইরাসের পরিবর্তিত রূপে তাদের তৈরি করা ভ্যাকসিন কাজ করে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে রোগ নির্ণয় করলে কিছু ক্ষেত্রে ভুল অনুমান দেখা দেয়।
কিন্তু তারা গভীর আগ্রহের সাথে শিখতে থাকে। তারা বুঝতে পারে প্রতিটি ভুল থেকে একটি নতুন সমাধানের পথ তৈরি হয়।
হঠাৎ করেই একটি আওয়াজ আসে রুমের বাইরে থেকে। তিনজনই সেদিকে লক্ষ্য করে। তারা দেখে একটি আগুনের কুণ্ডুলি রুমের বাইরে ঘুরছে। এ সময় মিথিলা প্রশ্ন করে, ‘তুমি কে?’
আগুনের কুণ্ডুলি থেকে একটা আওয়াজ আসে, ‘আমি তোমাদের ভুল সংশোধক। তোমরা যা যা ভুল করেছো তা আমি সংশোধন করে দিতে এসেছি।’
তিন বন্ধু অবাক হয়। তারা ভাবতে থাকে এসব কি?
আগুনের কুণ্ডুলি ধীরে ধীরে শান্ত হয়। তারপর এক মানবের মতো অবয়ব পায়। তবে তার ব্যতিক্রম হচ্ছে মানুষের মাথায় শিং থাকে না, তার মাথায় দুটো শিং আছে। আর মানুষের সামনে চোখ থাকে, তার দু’শিংয়ের মাঝে মাত্র একটি চোখ। সে ধীরে ধীরে তাদের কাছে এগিয়ে আসতে থাকে, আর তিন বন্ধু ভয়ে কুঁকড়ে যেতে যেতে পিছু হটতে থাকে। (চলবে)








