প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৫, ১৮:১৭
গরমের শীতল স্পর্শ: তালের শাঁস!
গরমের প্রাকৃতিক ওষুধ: তালের শাঁসের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

|আরো খবর
পরিচিতি
বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনযাত্রায় তাল একটি অতি পরিচিত ফল। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে তালগাছের ছায়া যেমন আরাম দেয়, তেমনি তালের শাঁস হয় এক প্রাকৃতিক উপশম। ভেতরের সাদা জেলির মতো অংশ, যাকে আমরা ‘তালের শাঁস’ বলি, সেটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
কীভাবে হয় তালের শাঁস?
তাল ফল গাছ থেকে পাড়ার পর অল্প কাঁচা অবস্থায় কাটলে ভেতরে থাকে তিনটি নরম জেলির মতো অংশ — এটাই তালের শাঁস। পুরোপুরি পাকা তালে এই শাঁস শক্ত হয়ে যায় ও তখন খাওয়ার অনুপযোগী হয়।
পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রামে)
- জলীয় অংশ: ৮৭-৯০% — শরীর হাইড্রেট রাখে
- শর্করা: ১০-১২ গ্রাম — শক্তির উৎস
- প্রোটিন: ০.৫-১ গ্রাম — কোষ গঠনে সহায়ক
- চর্বি: < ০.১ গ্রাম — ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
- আঁশ: ১-১.৫ গ্রাম — হজমে সহায়ক
- ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম — হাড়, রক্ত ও স্নায়ু স্বাস্থ্য ভালো রাখে
- ভিটামিন B কমপ্লেক্স, A ও C — রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. প্রাকৃতিক ঠান্ডা জেল
গরমে শরীর ঠান্ডা রাখে ও হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়তা করে।
২. প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমায়
তালের শাঁস ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা কমাতে কার্যকর।
৩. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
আঁশ থাকার কারণে এটি হজমে সহায়ক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়তা করে।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
কম ক্যালরি ও চর্বি-মুক্ত খাদ্য হিসেবে ডায়েট ফ্রেন্ডলি।
৫. গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারী
শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।
তালের শাঁস খাওয়ার উপায়
- সরাসরি শাঁস খাওয়া
- দুধ-তালের শাঁসের পানীয়
- শরবত বা ঠান্ডাই
- সাগু বা সাবুতে মিশিয়ে
- মধু দিয়ে খাওয়া
সতর্কতা
- অতিরিক্ত খেলে পেট খারাপ হতে পারে
- ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষকে সাবধানে খেতে হবে
- বরফ বা রাসায়নিক মেশানো শাঁস এড়িয়ে চলুন
গ্রামীণ অর্থনীতি ও তালের শাঁস
তালের শাঁস গ্রীষ্মকালে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তালচাষি ও স্থানীয় নারীরা এর মাধ্যমে আয় করে থাকেন।
তালের শাঁস আমাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এটি শুধু খাবার নয়, বরং একটি ঔষধি উপাদান যা গ্রীষ্মকালীন সমস্যা সমাধানে কার্যকর। শহর হোক কিংবা গ্রাম — গরমে তালের শাঁস খান, সুস্থ থাকুন।
ডিসিকে/এমজেডএইচ