প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:২৮
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা
কোক আপনার জীবন থেকে ১২ মিনিট কেড়ে নেয়, ফাস্ট ফুড আরও বেশি!
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোমল পানীয় কোক এবং অন্যান্য ফাস্টফুড খাওয়ার প্রভাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক লুইস আলবের্তো জামোরা সম্প্রতি একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন। গবেষণার চমকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বোতল বা ক্যানজাত কোক মাত্র ১২ মিনিট আয়ু কমিয়ে দেয়।
|আরো খবর
গবেষণার বিস্তৃত তথ্য
প্রায় ৫ হাজার ৮০০ খাদ্য ও পানীয় পণ্যের উপর এই গবেষণাটি করা হয়েছে। অধ্যাপক জামোরা ও তার সহকারী গবেষক ড. অলিভার জোলিয়েট বলেন, প্রক্রিয়াজাত ও অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন বার্গার, পিৎজা, হটডগ ও কোমল পানীয় মানুষের জীবন থেকে মূল্যবান সময় কেড়ে নেয়।
গবেষণার চাঞ্চল্যকর উদাহরণ
একটি হটডগ খেলে আয়ু ৩৬ মিনিট কমে যায়।
এর সঙ্গে কোক যুক্ত হলে আরও ১২ মিনিট কমে।
একটি চিজবার্গার খেলে আয়ু ৯ মিনিট কমে যায়।
একটি বেকনের ফালি খেলে আয়ু ৯ মিনিট কমে।
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফাস্টফুড চেইন যেমন ম্যাকডোনাল্ডস, কেএফসি, পিৎজা হাট ইত্যাদি যেসব সুস্বাদু খাবার প্রস্তুত করে, সেগুলোই এই সমস্যার প্রধান কারণ। এসব খাদ্যপণ্যে উচ্চ মাত্রার ক্যালরি, চিনি, লবণ এবং চর্বি থাকায় মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে এবং আয়ু কমাচ্ছে।
ফলমূল ও শাকসবজির গুরুত্ব
অন্যদিকে, অধ্যাপক জামোরা জানিয়েছেন যে সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন পেতে খাদ্যাভ্যাসে শাকসবজি এবং ফলমূলের পরিমাণ বাড়াতে হবে। গবেষণায় বলা হয়েছে:
প্রতিদিনের ক্যালরির ১০ শতাংশ যদি মাংসের বদলে শাকসবজি ও ফলমূল থেকে গ্রহণ করা হয়, তাহলে মানুষের আয়ুষ্কালের সঙ্গে অন্তত ৪৮ মিনিট যোগ করা সম্ভব।
পিনাট বাটার ও জ্যাম-জেলির স্যান্ডউইচ খেলে আয়ুষ্কাল বাড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ
গবেষণার সহ-লেখক ড. অলিভার জোলিয়েট জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন যে পরিমাণ মাংস খাওয়া হয়, তার প্রায় ৭৫ শতাংশই প্রক্রিয়াজাত। এ কারণে দেশটির মানুষের আয়ুষ্কাল হ্রাসের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। তিনি বলেন, “এই গবেষণা ছোট পরিসরে হলেও খাদ্যাভ্যাস নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়।”
বিশ্বের অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও দ্রুতগতিতে ফাস্টফুডের প্রতি নির্ভরতা বাড়ছে। শহরাঞ্চলে জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং ব্যস্ততার কারণে মানুষ ঘরে রান্না না করে অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে ঝুঁকছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।
সতর্ক বার্তা ও সুস্থ জীবনধারা
ড. জামোরা ও তার দলের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে এবং শাকসবজি ও ফলমূলের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতার জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার গুরুত্বকে তারা বারবার তুলে ধরেছেন।
নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে সুস্থ জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব—এমনটাই জানিয়েছেন গবেষকরা। ফাস্টফুড ও কোমল পানীয়ের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রাকৃতিক খাবারের দিকে ঝুঁকলে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।