শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে বয়ান করায় ইমামকে চাকরি ছাড়ার নির্দেশ!
  •   এনআইডিতে ভোটার এলাকা হিসেবে থাকছে না বর্তমান ঠিকানা
  •   জাহাজে ৭ খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটনসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি
  •   নিখোঁজের একদিন পর বৃদ্ধের মরদেহ মিললো পুকুরে
  •   সৌদি আরবে বাংলাদেশের ১৬তম  রাষ্ট্রদূত মো. দেলোয়ার হোসেন

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৫৫

অশ্রুর ফোয়ারা

তানজিনা আক্তার তন্নি
অশ্রুর ফোয়ারা

মানুষ কে সামনে থেকে যতটুকু দেখা যায় সে মূলত সেরকম নয়। কথিত আছে ও দেখতে যেমন সে তার বিপরীত। তার মধ্যে আর একটা চেহারা লুকিয়ে সে জীবন চালায়।আর ও যে হাসতেছে সেটা ও হতে পারে লোক দেখানো। আমি বাস্তব বাদী মানুষ। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া দিনগুলো কে ঘিরেই আমার লেখা। এ লেখাটাও বাস্তব বাদী চোখের সামনে দেখে আজ গুছিয়ে লেখতে বসেছি।আমরা গল্পের সূচনাতে যাই। যেটুকু উপস্থাপন করতে পারি সেটা লিখে বর্ণনা করি।কারণ যেকোনো কিছুর শুরটা সুন্দর হলেও শেষটায় থাকে অসমাপ্ত। এ  অসমাপ্ত আত্মজীবনী  নিয়ে মানুষ চিরকাল মনের কারাগারে কয়েদি হয়ে কাটায়। সেখান জজ, ব্যারিস্টার, কোন উকিল নেই বলে চিরন্তন কৃতদাস হয়ে কাটাতে হয়। আমি কয়েকটা ভাগে বিভক্ত করে এ গল্প টা ফুটিয়ে তুলবো। এখানে থাকবে অহরহ আনন্দ ও সীমাহীন ব্যর্থতার খবর।

সুখী দম্পতি

সোমালিয়া সিনহা গ্রামের মানুষ খুবই সুখী। এবার আমি তাদের সুখী হওয়ার গল্প টা ফুটিয়ে তুলি। এ গ্রামের মানুষ আগে সেরকম সাহিত্য, সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ছিল নাহ।তাদের পাশের গ্রাম  উটকোপুর। সে সমাজের মানুষ সকলে উচ্চ শিক্ষিত। সকলের ঘরে সবাই শিক্ষিত এবং খুব সুন্দর জীবনযাপন করতেছে।

তাই তারাও উদ্যেগ নিলো সুখীভাব বিরাজ করবে তাদের মধ্যে। প্রতি ঘর থেকে একজন করে মিলিত হয়ে  একটা সংগঠন স্থাপন করে। সংগঠনের নাম রাখা হয় সুখীভাবের সঙ্গে যুক্ত হওয়া দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ পরিশ্রম  করে এখন তারা নিজেদের মধ্যে সুখের অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছে। কারন তাদের সমাজে সেরকম শিক্ষিত মানুষ  ছিলনা। তাই সকলে মিলিত হয়ে তাদের লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য একটু বেশি সময় লেগেছে। এখন মিলেমিশে সকলে বসবাস করে। সমস্যাগুলো সকলে একসাথে সমাধান করে। সমাজের অধিকাংশ লোক এখন শিক্ষিত। সমাজের জন্য এখন কয়েকটা ধাপ তারা নিজেদের মতো করে তৈরী করেছে। পড়াশোনার কার্যক্রম চালু করেছে। এখন উটকোপুর গ্রামের মানুষের মতো তারা ও সুখী। প্রত্যেকটা ঘরের দম্পতিও এখন সুখী। তারা চিরকাল এ সুখের সংসার সাজিয়ে গুছিয়ে কাটিয়ে নিতে চায়। দু'জন দু'জনের হাতটা শক্ত করে ধরে অঁাকড়ে বেঁচে থাকতে চায়। এ সুখের ঘোরের জন্য  তাদের গ্রামকেন্দ্রিক একটা উৎসব ও পালন করা হয়। সেখানে বলা হয় সৃষ্টিকর্তা এ দুনিয়ায় জোড়া মিলিয়ে পাঠান। শুধু কারো পরিপেক্ষে মিলিয়ে দেন। আর ভালোবাসাকে সম্মান জানিয়ে তোমরা সময়ের গতি ধরে এগিয়ে যাও। সুন্দর থেকে সুন্দর হোক সকলের জীবন। তখন থেকেই সোমালিয়া সিনহা গ্রামের মানুষরা সুখী ও প্রত্যাকটা দম্পতি সাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটায়।

অসুস্থতা

তাহরুবা ও মাহরিফের সংসার জীবনের আজ আট বছর তিন মাস ছাব্বিশ দিন। তাদের দুজন সন্তান। দু'জনই ছেলে। তাদের নাম রুহনাব ও রুহসান। দুজনে এখন পড়াশোনা করে। একজন দ্বিতীয় শ্রেণিতে আরেকজন শিশুতে। মাহরিফ একটা এনজিওতে চাকরি করেন। এই তো গত পঁচিশ দিন আগে অফিস থেকে আসার সময় মোটরসাইকেলের সাথে ট্রাকের সংঘর্ষে তার ডান পায়ের দু'টো আঙ্গুল সাথে সাথে কেটে যায়! এবং শরীরে অনেক জায়গা ব্যাথা পায়। তখন তাড়াতাড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের নার্সরা ঠিকানা জেনে তাহরুবাকে জরুরী বিভাগে আসতে বলে। তাহরুবা রুহনাব ও রুহসানকে নিয়ে তড়িঘড়ি করে চলে আসলো। এসে দেখে মাহরিফকে ভর্তি করা হয়েছে। পায়ে বেন্ডেজ করানো। শুয়ে শুয়ে ব্যাথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে!

ডাক্তার জানিয়েছেন সমস্যা বেশি হওয়ার কারণে এক সপ্তাহের মতো হাসপাতালে থাকতে হবে। এতে করে অনেকটা তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারবে। আর সঠিক মতো ইনজেকশন, ঔষধ খেতে পারবে। তখন তাহরুবা ওখানেই থাকার ব্যবস্থা করলো। বাচ্চাদের কোনো রকম করে বিছানায় শুয়ে রাত পার করে। তাহরুবা সারারাত বসে থাকে চেয়ারে। হাসপাতালে ঘুমাবে কী করে।  রোগীর বিছানায় এদিক-ওদিক করে ওদের তিনজনকে জায়গা দেয়। আজ ষষ্ঠ দিন হাসপাতালে। তাহরুবা এ কয়দিনে অনেক কিছু শিখেছে হাসপাতাল থেকে। কারণ সুস্থতা যে আল্লাহর কতটা নেয়ামত সেটা হাসপাতাল থাকলে বুঝা যায়। এখানে রোগের যন্ত্রণায় কতো মানুষ ছটফট করতেছে। কারো হার্টে সমস্যা, কারো মাথা ফেটে গেছে, কারো হাত ভাঙ্গা, কেউ ব্লাড নিচ্ছে, কারো স্যালাইন গাথা সর্বক্ষণ, কারো যন্ত্রণা এত তীব্র থাকে যে ব্যাথা উঠলেই ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়, কারো আছে রিপোর্টে, কিছু নেই কোন রোগব্যাধী ধরা পড়েনা তবুও অসহ্য যন্ত্রণা। একের পর এক অসুস্থ রোগী আসতেছে তখন তাহরুবা আলহামদুলিল্লাহ বলে মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট শুকরিয়া জানান। যেন সব সময় সুস্থ রাখেন সে প্রার্থনা করেন। মাহরিফ  দেখে তাহরুবা বসে বসে কী যেন ভাবতেছে। জিজ্ঞেস করে তুমি আনমনে কী ভাব? আমি তোমাকে অনেক ক্ষন থেকে খেয়াল করতেছি তখন সে সবটা বুজিয়ে বল্লো। তখন মাহরিফ বলে, তোমার মতো সবার জীবনে এমন কেউ থাকুক যে সব সময় খেয়াল রাখবে আর বলবে চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে, আমি তোমার পাশে আছি তাহরুবা বলে হ্যঁা তোমার সাথে যেন এভাবেই কাটাতে পারি বাকিটা পথ।শক্ত করে হাতটা ধরে রেখো। এরইমধ্যে স্টাফ কোয়ার্টার থেকে ফাইল আসল।ফাইলে লেখা ছিল আজ সিট কেটে দিবে। সাতদিন হয়েগেছে। দুপুরে সাড়ে তিনটায় ডাক্তার আসবে।  দেখিয়ে যে প্রেসক্রিপশন লিখে দিবেন সে অনুযায়ী চল্লে ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে। কারণ মাহরিফ সাহেব এখন আল্লাহর রহমতে অনেকটা সুস্থ।

 

বৃদ্ধ বয়সের চিএরুপ

ছেলে সন্তানদের খুব সুন্দর করে ভালো শিক্ষা দিয়ে কীভাবে চলতে হয় বলেছিলাম। নিজের প্রতি  আত্ম বিশ্বাস রেখে প্রতিটা পদক্ষেপ নিতে শিখিয়েছিলাম। উচ্চ শিক্ষিত ও করিয়েছিলাম।বাসায় আলমারি জুড়ে ডয়ের ভর্তি অনেক সার্টিফিকেট ও আছে।এতো সুশিক্ষিত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে আজ আমি কি পেলাম।তাদের জন্য অনেক সম্পত্তির জমা করেছি।ব্যাংককে ও  রয়েছে অনেক অর্থ জমা। আর আমায় এখন বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর চিন্তা সারাক্ষণ তাদের মাথায় ঘুরপাক খায়।এই তো গত বছরের বৈশাখ মাসে ঋতু পরিবর্তন এসে আমার জ্বর হয়েছিলো। আমার ছেলে সন্তানরা কী যে অবহেলিত করেছিল বলে বুঝাতে পারবোনা। আমাকে হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হয়েছিল। সেখানে দুইদিন থেকেছিলাম। আমি শুধু হাসপাতালের নার্সদের ছাড়া আমার আত্মীয় দের দেখিনি।যায়নি আমার নিজের সন্তানরাও। ওখানে আমার মত বহু মানুষ দেখেছি। তাদের ও কেউ আসেনি দেখতে। প্রথম দিন রাতে একজন মানুষ মারা গিয়েছিল! হাসপাতাল কমিটিরা বাসায় ফোন করে জানায়। তবুও  তাকে কেউ নিতে আসেনি। আর বলা হয়েছে মরে যখন গিয়েছে বাড়ি এনে আর কি লাভ।তখন তাকে মর্গে পাঠানো হয়। এসব নিজ কানে শুনে ও চোখে দেখে আমি পুরো রাতটা অঝোরে কেঁদে কাটিয়েছি। কারণ কতো আল্লাদ করে আদর স্নেহ করে  সন্তানদের  লালন-পালন করি আর তারা যদি এমন কথা বলে তাহলে আর এ জীবন থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। এ আত্মচিৎকার কাকে দেখাবো কীভাবে বুঝাবো বেকুল মনের আকুলতার সূর। এ দীর্ঘশ্বাসের ভার কার কাছে পৌছব কে শুনবে ব্যাথিত মনের দুটো কথা।

এখন মনে হয় কোন রাস্তা নেই দোয়া ছাড়া, কেউ  শোনার মতো নেই একমাএ আল্লাহ ছাড়া স্বস্তি থেকে অস্বস্তির জীবন আমার নিজ কাব্যিক দৃষ্টিকোণ থেকেই বলতেছি,

কেন ভালোবাসি কেন কষ্ট পাই। তুমি ও যেমন জানো আমিও তাই। তবুও  ভালোবাসি তবুও ভিজে এ অঁাখি। এভাবেই বেঁচে আছি এভাবেই আমার মধ্যে বিরাজ করে বহুমাত্রিক শোকের প্রতীক।  আমি এ জীবন নিয়ে এখন নতুন করে কী সাজিয়ে গুছিয়ে লিখবো। আমি তো সূচনার সৌন্দর্যটা নিয়ে উপসংহার সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তুমি সেটা এলোমেলো করে দিলে। ভালোবাসে তো বিয়ে করেছিলে কতোটা ভালোবেসেছিলে তুমি জানতেনা। অথচ আজ আমার আমির খেঁাজ নিতেও তোমার মনে পড়েনা নাহ। আমি যে লিখতে বসছি এ লেখাগুলো লিখতেছি আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।

একটা সময় ছিলো তখন বলতে তোমাকে ছাড়া আমি অপূর্ণ ছিড়েফেলা ডাইরির কাগজ যার কোন মূল্য নেই। তুমি বলেছিলে আমি

দিব্যি করে বলি, প্রহর শান্ত, সকাল শান্ত, শান্ত তোমার খেঁাপায় বঁাধানো বেলিফুলের মালা, আরো শান্ত তোমার হৃদয় যাহা কোমলতায় ভরা আমাকে একটা নজর দেখার জন্য বেকুল হয়ে থাকতে। আমার কণ্ঠ শুনার জন্য বড্ড পাগলামো করতে আমাকে সব সময় সারপ্রইজিং করতে এক কথায় তোমার প্রতি আমাকে আসক্ত করে নেওয়ার জন্য সকল পদক্ষেপ নিয়ে আমাকে আবেগ প্রবন করে তুলতে। তুমি খুব মায়াবী মুখের ভঙ্গি নিয়ে বলতে তোমাকে না দেখিলে আমার  দুঃখ বাড়ে। আর তোমার এ হাসিমাখা মুখ দেখিলে আমার সকল অসুখ সাড়ে আমাকে এতো ভালোবাসতে যে অন্য কারো হওয়ার আগে তোমার করে নিলে। পারিবারিক ভাবে মেনেও নিয়েছিলো আমাদের এ সম্পর্ক। সময়ের ব্যাবধানে আজ অনেক কিছু ঋতুর মতো পরিবর্তন হয়েগেছে তোমার।তুমি এখন কেমন জানি হয়েগেছো। তুমি কী জানো যারা ঘরের মানুষের কাছে অবহেলিত হয়,তারা পৃথিবীতে  আর  কোথাও গুরুত্ব পায়না তোমার এ অবহেলায় আমি এখন অঁাধার কৃত মানুষ হয়ে যাচ্ছি দিনদিন। একাকীত্বের সাগরে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছি। আমার  ভেতর ঘরটা রক্তাক্ত  হয়ে যাচ্ছে। আমি এখন তাকিয়ে তাকিয়ে তোমার আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়াটা দেখতেছি,চোখে জল এসে তোমার হারিয়ে যাওয়াটা ঝাপসা করে দেখাচ্ছে। আমি ইচ্ছে করেই চোখের জল মুছতেছিনা,তাকে ঝড়ে দিতে দিচ্ছি। কারন,এখন আর তুমি আমার কান্না টা দেখোনা। আজ তুমি অনেক বদলে গেছো এতোটাই বদলে গেছো যে তুমি আমার মন খারাপ হলে আমার দিকে তাকিয়ে বুঝে ফেলতে আর আজ সেই তুমি আমার কষ্ট জড়িত কান্নার আওয়াজ শুনেও শুননা। আমার স্বস্তিতে ভরা পুরো জীবনটাই আজ অস্বস্তিতে পূর্ন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়