বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া, স্ত্রীর আত্মহত্যা
  •   ভারতকে কড়া বার্তা শ্রম উপদেষ্টার
  •   আধুনিক নৌ টার্মিনাল প্রকল্প পরিদর্শনে চাঁদপুরে নৌপরিবহণ উপদেষ্টা
  •   ডাকাতিয়া নদী ও সিআইপি অভ্যন্তরস্থ খাল খননসহ ৫ দফা দাবিতে সংগ্রাম কমিটির সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩

ক্যাম্পাস জীবনে বন্ধুত্ব

জি. এ. মিল্টন
ক্যাম্পাস জীবনে বন্ধুত্ব

‘বন্ধু’ শব্দটি এমন যার কোন তুলনা হয় না। মানুষ সামাজিক জীব হওয়ার কারণে একাকী বসবাস করতে পারে না। তাই সে সবসময় সঙ্গীর খোঁজে থাকে ব্যাকুল। সঙ্গী হিসেবে কোন এক বন্ধুকে পেলেই যেন সে হয়ে ওঠে চির সুখী।

শিক্ষাজীবনে প্রায় প্রতিটি অধ্যায়ে মেলে বন্ধুর জুড়ি। সে হতে পারে স্কুল, কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে সর্বক্ষেত্রে বন্ধু মিললেও বন্ধুর বন্ধুত্ব বোঝা যায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। যেখানে বন্ধু ছাড়া হাতের নাগালে আর কাউকে পাওয়া যায় না। তখন বন্ধুরাই যেন হয়ে ওঠে তাদের পিতা-মাতা। পরম আদরে পিতা-মাতার মতো বন্ধুই হয় অবসরে আড্ডার সঙ্গী, মন ভাল রাখার সঙ্গী, পরামর্শকদাতা, সেবক বা সেবিকা।

দলবদ্ধভাবে পড়ালেখার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেরই একটি অংশ। এভাবেই পার হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো। যা পরবর্তীতে এক একটি দিন এক একটি স্মৃতির পাতা হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতেও পরীক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের বাবা-মা বা আত্মীয়-স্বজন আসে। যাতে ওই পরীক্ষার্থী মনে সাহস পায়। তবে তা কেবল ওই দিন বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া অবধিই। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে ওঠে তার বন্ধু। কোন বিপদ-আপদ হলে দ্রুত বন্ধুই এগিয়ে আসে। বন্ধু যে শুধু নিজ বিভাগেরই হয়ে থাকে এমন নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বর্ষের অন্যান্য বিভাগেরও অনেক বন্ধু হয়ে থাকে। সেসব বন্ধুরাও নানাভাবে সাহায্যে এগিয়ে আসে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পড়ালেখার পাশাপাশি অনেক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়। অনেকেই রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী, কেউবা সাংবাদিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেকোন সমস্যায় তার পাশে থাকে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বন্ধুরা। তারাও নানাভাবে বন্ধুদের জন্য এগিয়ে আসে। কোন কারণে মন ভাল না থাকলে বন্ধুর কাছে গিয়ে মন ফ্রেশ করা যায়। মনের সব কথা প্রিয় বন্ধুর কাছে ভাগাভাগি করা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এমন অনেক বন্ধুকে দেখেছি- যারা বন্ধুর জন্য সারা রাত না ঘুমিয়ে বন্ধুর সেবা করেছে। বন্ধুর প্রয়োজনে নিজের রক্ত পর্যন্ত দিয়েছে। এমনই আলিউল আজিম নামে এক বন্ধুকে দেখেছি। যখনই কোন বন্ধু অসুস্থ হয়ে পড়ে সবার আগে ডাক পড়ে আজিমের। আজিম যত ব্যস্তই থাকুক না কেন যত তাড়াতাড়ি পারে ঘটনাস্থলে গিয়ে বন্ধুকে সুস্থ করার জন্য তড়িঘড়ি পরে যায় তার। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়। গুরুতর অসুস্থ না হলে নিজেই দোকান থেকে কিছু ঔষুধ কিনে দেয় তাকে। অনেক সময়ই দেখেছি নিজের টাকা দিয়েই সে ওষুধ কিনে বন্ধুকে দিয়ে আসতো। আবার কারও রক্তের প্রয়োজন হলেও সে রক্ত দিত বা কোনভাবে রক্ত যোগাড় করত। তেমনি দেখেছি বন্ধুকে পরামর্শদানে বন্ধুকেই এগিয়ে আসতে। হয়তো তার মন কোন কারণে বিষণ্ন বা কোন প্রিয়জন মনে আঘাত দিয়েছে তাই সে ওই ব্যথা লাঘবের জন্য বন্ধুর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। যত রাতই হোক না কেন তাকে নানাভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে। বন্ধুই হয়ে ওঠে বড় পরামর্শদাতা।

পরামর্শদানের কথা বলতে গিয়ে কয়েকজন প্রিয় বন্ধুর কথা চোখে ভেসে ওঠে। তাদের মধ্যে শামীম রেজা, আবু হোসাইন, সোহেল রানা, মরিয়ম খাতুন, হাবিবুর রহমান আবদুল্লাহ, বাইজিদ খান, রুবেল রানা প্রশংসার দাবিদার। এত গেল এক দিকের কথা। আবাসিক হলে অবস্থান করা বন্ধুরা বন্ধুর জন্য কি-ই না করে। একবার শারীরিক ব্যায়াম, একবার ক্লাস, একবার আড্ডা, একবার দলগত পড়াশোনা সবই চলে তাদের মধ্যে। সকাল হলেই বন্ধুর ডাকাডাকি শুরু। ‘কই বের হ। আমরা ক্যাম্পাসে হাঁটতে যাব। সকালের হাওয়া শরীরের জন্য অনেক ভাল।’ আবার ক্লাসের সময় হলেই বলতে শুনেছিÑ‘কিরে তুই এখনও বের হসনি? ক্লাসের সময় আর মাত্র পনেরো মিনিট।’ তারপর পাঁচ-ছয়জন মিলে এক সঙ্গে ক্লাসে যাওয়া আবার ক্লাস থেকে আবাসিক হলে ফেরা। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি।

বিকাল বেলা হলেই হলের কয়েকজন বন্ধু মিলে চলে আড্ডা। এ আড্ডাতে চলে গান, একাডেমিক পড়াশোনাসহ বিভিন্ন কথোপকথন। ক্যাম্পাসের ছুটির দিনে চলে কয়েকজন বন্ধু মিলে ভূঁড়িভোজের আয়োজন। বন্ধুরা মিলেই রান্না করা হয়। কার রান্না কত স্বাদ তাও সেখানে যাচাই করা হয়। তারপর চলে গান-বাজনা।

বন্ধুদেরই একজন সুর তোলে হারমোনিয়াম বা গিটারে। সেখানে জমে ওঠে কয়েক ঘণ্টা আড্ডা। আড্ডা শেষে আবার নিজ নিজ আবাসিক হলে চলে যায় বন্ধুরা। কখনো কখনো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চলে দলগত পড়াশোনা। এসব পড়াশোনায় স্থান পায় একাডেমিক কিংবা জব সম্পর্কিত। দলগত পড়াশোনায় অনেক লাভবান হওয়া যায় কারণ সেখানে একই সঙ্গে চলে আনন্দ এবং পড়াশোনা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অনেক কাছের বন্ধুদের মধ্যে একজনকে খুব ভাল লেগে গেলে তাদের মধ্যে চলে নীরব প্রেম। তারপর প্রকাশ্যে। শেষ অবধি সেই প্রেম বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। বন্ধুদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে এমনই দেখেছি। এমন পরিস্থিতি কয়েকজন বড় ভাইকেও দেখেছি যারা তাদের একই বিভাগের কিংবা অন্য বিভাগের একই বর্ষের বন্ধুকে বিয়ে করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধুত্ব তাই অনন্য এক স্মৃতি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়