প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:৫৩
এর চেয়ে সুশৃঙ্খল সুন্দর দৃশ্য আর কী হতে পারে?
স্কুলের মূল ফটকের বাইরে ছাত্রদের সারিবদ্ধ লাইন। প্রত্যেকের মুখে মাস্ক, চোখে রঙিন স্বপ্ন। নির্দিষ্ট দূরুত্বে এক জন করে ছাত্র প্রবেশ করছে স্কুল ক্যাম্পাসে। ফটকের সামনে একগুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্বাস উদ্দিন। ছাত্রের হাতে একটি করে গোলাপ ধরিয়ে দিয়েই হাসিমুখে বলছেন, 'ভালো আছো বাবা?'
|আরো খবর
গোলাপ হাতে কিছু দূর গিয়ে স্কুলের বারান্দায় যেতেই অপর এক শিক্ষক হাতে দিচ্ছেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। অভ্যর্থিত ছাত্রের শরীরের তাপমাত্রা ঠিক আছে কি-না তা নির্ণয় করছেন স্কুলের শরীরচর্চা বিষয়ক শিক্ষক। নিচ তলার বারান্দা বেয়ে দোতলায় উঠার আগে হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধৌত করতে নিয়ে যাচ্ছেন আরেক দল শিক্ষক। অতঃপর রোল নং অনুযায়ী নির্ধারিত কক্ষে পাঠানো হচ্ছে ছাত্রদের। দেড় বছর পর স্কুলে ফেরা ছাত্রদের বরণে এর চেয়ে সুশৃঙ্খল সুন্দর দৃশ্য আর কী হতে পারে?
এর আগে সকাল ৮টার মধ্যে পরিপাটি পোশাকে স্কুল ক্যাম্পাসে উপস্থিত হোন স্কুলের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ। যেন দিনটি ছিলো তাঁদের কাছে ঈদের মত আনন্দের। আনন্দ হবেইবা না কেন? স্কুলের প্রাণ ভ্রোমর ছাত্ররা দীর্ঘ মাস পর স্কুলে ফিরেছে। সাদা শার্টের এই দলটিকে যে বহুদিন দেখেনি তাঁরা। ছাত্ররা সকাল ৯টার দিকে একে একে স্কুল গেটের সামনে আসলেও স্নেহের ছাত্রদের বরণ করতে স্কুল গেইটে গোলাপ হাতে সকল শিক্ষকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন যেকোনো পথচারি। যেন বহু বছর পর বাবা-মায়ের কোলে সন্তানের ফিরে আসা।
সারাদিন সুশৃঙ্খল ভাবে চলে স্কুলের পাঠদান প্রক্রিয়া। সুষ্ঠু পরিকল্পনার ফলে ১০ম শ্রেণির ছাত্রদের সাথে এসএসসি ব্যাচের ছাত্রদের ক্রসিং হয়নি। ৬ ফুট ব্যাঞ্চের দু'পাশে দু'জন, তিন ফুট ব্যাঞ্চের প্রতি ব্যাঞ্চে ১ জন করে ছাত্র বসেছে ক্লাসে। নির্দিষ্ট সময়ে পুরো স্কুল আলোড়িত করে বিকট শব্দে বাজলো ক্লাসের ঘণ্টা। ঘণ্টার এ ধ্বণী যেন ছুঁয়ে গেছে ছাত্র-শিক্ষকের হৃদয়। এ ধ্বণী যে শোনা হয়নি কতটি মাস!
ক্লাসে একজন শিক্ষক ক্লাস শেষ করার ১ মিনিট আগেই অপর শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষের সামনে পাঠাচ্ছেন ক্লাস সঞ্চালক স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক ওবায়েদ সরকার মোহন। শিক্ষকরাও উৎসাহের সাথে ছুটে যাচ্ছেন ক্লাসে। সকলের একটাই চাওয়া, সন্তান তুল্য ছাত্ররা ভালো থাকুক। ওরা সুরক্ষিত থাকলেইতো চলমান থাকবে স্বশরীরের শ্রেণিপাঠদান।
স্কুলের এমন রাজকীয় বরণে আনন্দে আত্মহারা সব ছাত্ররা। ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিরব সরকার আপনতো বলেই ফেললো আমি ধন্য আমি গণি স্কুলের ছাত্র। এত বছর পর স্কুলে এসে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের যে ভালোবাসা পেয়েছি তাতে স্কুলে আসার আগ্রহ দ্বিগুন বেড়ে গেলো। একই সূরে কথা বলেলো বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শান্ত সূত্রধর। জানায়, অনেকদিন পর স্কুলে এসেছি। কিছুটা জড়তা কাজ করছিলো। কিন্তু স্যাররা যেভাবে আমাদের বরণ করে নিলেন তা স্কুল জীবনের সেরা স্মৃতি হয়ে থাকবে। বিশেষ করে আমাদের প্রধান শিক্ষক স্যারের হাসিমুখে গোলাপ দিয়ে বরণ আমাদের দারুণ প্রেরণা যুগিয়েছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্বাস উদ্দিন চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, ছাত্ররাই স্কুলের প্রাণ। ওরা এত মাস পরে ফিরে এসেছে, ওদেরকে এভাবে বরণ করতে পেরে আমাদের মধ্যেও ভালো লাগা কাজ করছে। প্রিয় ছাত্রদের আগমনে পুরো ক্যাম্পটি যেন প্রাণ ফিরে পেলো। ওদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মন্ত্রনালয়ের নির্দেশিত প্রতিটি দায়িত্ব আমরা যথাযথ ভাবে পালন করেছি, আগামীতেও করবো। এভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণি পাঠদান অব্যাহত থাকলে আমরা শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত শর্ট সিলেবাস শেষ করতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। এ ছাড়াও গণি মডেল স্কুলের অনলাইন ক্লাসের পাঠদান অব্যাহত থাকবে।